Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোলবদল! চিনকে দুষতে  নারাজ ট্রাম্প

এই সূত্রেই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন শি, চওড়া হয় ট্রাম্পের ঠোঁট!

কাছাকাছি: ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শি চিনফিং। রয়েছেন মেলানিয়াও।  বৃহস্পতিবার বেজিংয়ে গ্রেট হল অব পিপল-এ নৈশভোজে। রয়টার্স

কাছাকাছি: ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শি চিনফিং। রয়েছেন মেলানিয়াও।  বৃহস্পতিবার বেজিংয়ে গ্রেট হল অব পিপল-এ নৈশভোজে। রয়টার্স

বেজিং
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৩
Share: Save:

প্রথা ভাঙার পালা শুরু হয়েছিল কাল থেকেই। আজও সেই ‘ব্যতিক্রমী’ খাতেই বইল দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।

সবার চোখ কপালে তুলে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের জন্য প্রশংসার ঝুলি উপুড় করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টানা দু’ঘণ্টা কথা। সফরের দ্বিতীয় দিনে বাণিজ্যে বেজিংয়ের ‘বাঁধ ভাঙা সাফল্যের’ অকুণ্ঠ প্রশংসা করে ট্রাম্প বললেন, ‘‘সুবিধে নেওয়ার জন্য চিনকে আমি দোষ দিই না!’’ যা শুনে হতবাক অনেকেই। কারণ হোয়াইট হাউসে ঢোকার আগে এই ট্রাম্পই বিশ্ববাণিজ্যে চিনের দুর্নীতি নিয়ে ভয়ঙ্কর সরব ছিলেন। প্রথম বার সেই চিনে পা রেখে ২৫ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি সইও করে ফেললেন ট্রাম্প।

বেজিং প্রসঙ্গে তাঁর আপত্তির স্মৃতি ফিকে হওয়ার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তাঁর ‘ভাবনা’ পাল্টে গিয়েছে। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ধনকুবের ব্যবসায়ী ট্রাম্পের মনে হচ্ছে, দু’টো দেশ যে পথে ব্যবসা বাড়িয়েছে, তাতে চিন সুবিধে করে নিয়েছে। এর মধ্যে ত্রুটি খোঁজার কোনও মানেই হয় না! একেবারে পাক্কা ব্যবসায়ীর জবানে শোনা গিয়েছে, ‘‘দেশের নাগরিকদের ভালর জন্য অন্য দেশকে পিছনে ফেলে যে এগিয়ে যেতে পারে, তাকে কি দোষ দেওয়া যায়? আমি চিনকে কৃতিত্বই দিতে চাই।’’ ট্রাম্প কাঠগড়ায় তুলছেন পূর্বতন প্রশাসনকে। সাফ বলেছেন, মার্কিন বাণিজ্যে ঘাটতির দায় অতীত প্রশাসনের।

পাশে দাঁড়িয়ে যোগ্য সঙ্গত করেন চিনা প্রেসিডেন্টও। ট্রাম্পের মুখে হাসি ফুটিয়ে বৃহস্পতিবারের সকালে শি চিনফিং বলেন, ‘‘চিন আর আমেরিকার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরটা যথেষ্টই বড়!’’ তার পরে কূটনীতির তরজার বদলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শপথ নিলেন দুই রাষ্ট্রনেতা।

আরও পড়ুন:ট্রাম্পের জন্য লাল গালিচা, নিষিদ্ধ নগরীও

তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের পশ্চিম কোণে ‘গ্রেট হল অব পিপল।’ যেখানে কিছু দিন আগেই ১৯ তম পার্টি কংগ্রেসের শেষে একাধিপত্য এসেছে কমিউনিস্ট শাসক শি চিনফিংয়ের হাতে। সেই হল-এ একান্তে দু’ঘণ্টা বৈঠকের পরেও তাঁদের কথা ফুরলো না। সাংবাদিকদের চোখের সামনেই দুই নেতা পাশাপাশি ঘুরে বেড়ালেন বেশ কিছু ক্ষণ। সাক্ষী রইল গ্রেট হল। প্রতি সেকেন্ডে তাঁদের শরীরী ভাষায় যে উষ্ণতা ফুটে উঠল, তাতে তাক লাগাটাই স্বাভাবিক। একটি মুহূর্তও নষ্ট না করে তাঁরা যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে বেজিং-ওয়াশিংটন সহযোগিতা বাড়াতে চায়। ট্রাম্প বললেন, ‘‘চিনের সঙ্গে আমরা একটা চনমনে বাণিজ্যিক সম্পর্কে যেতে চাইছি। আমরা চাই পারস্পরিক স্বচ্ছ সম্পর্ক।’’

এত দিন বেজিং-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ‘ভারসাম্যে’ কোথাও যে একটা গলদ ছিল তা মেনে নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘‘আজ শি-এর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে যে বিপুল সমস্যা আছে, তা দূর করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।’’ ট্রাম্পের সুর এতটুকু না কেটে শি বলে গেলেন, ‘‘দু’টি আলাদা দেশ। একটা বিষয়ে দু’দেশের পৃথক মত থাকতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। সেই পার্থক্য মেনে ঠিকঠাক এগিয়ে যাওয়াটাই আসল চাবিকাঠি।’’ এই সূত্রেই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন শি, চওড়া হয় ট্রাম্পের ঠোঁট!

ব্যবসায়িক সম্পর্কের পাশাপাশি ট্রাম্পের ১৩ দিনের এশিয়া সফরে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে মাথাব্যথাও রয়েছে পূর্ণ মাত্রায়। বেজিংকে সে কথা মনে করিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার মোকাবিলা করতে বিশ্বের সব সভ্য দেশের একজোট হওয়া দরকার।’’ কিম জং উনের দেশের নীতি নিয়ে আমেরিকা বা চিনের অবস্থান বদল হয়েছে, এমন ইঙ্গিত আনুষ্ঠানিক ভাবে পাওয়া যায়নি। শি বলেন, চিন এবং আমেরিকা কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। উত্তর কোরিয়ার উপরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদ্য চাপানো নিষেধ যাতে ঠিকমতো প্রয়োগ হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখার আশ্বাসও দিয়েছে বেজিং।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রেও দুই নেতার তালমিল বজায় রইল। এক জন তো সংবাদমাধ্যমকে বাঁকা চোখে দেখার জন্য সুপরিচিত। অন্য জন সংবাদমাধ্যমে কড়া নিষেধ চাপানোয় বিশ্বাসী। আজ বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন শোনার আগ্রহ দেখাননি কেউই। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারা স্যান্ডার্স পরে জানান, চিনের জোরাজুরিতে প্রশ্ন নেওয়ার অবকাশ ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE