Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আর্তি শুনেই ইরাকে হানা

ওবামার সিদ্ধান্তে চিন্তা বাড়ল দিল্লির

অসহায় এক ইরাকবাসীর আর্তি শুনেছিলেন। তাই ‘সাহায্যে’ এগিয়ে এলেন বারাক ওবামা। তাঁর নির্দেশে এর মধ্যেই আইএসআইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দু’দফায় বিমান হানা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। আর এর ফলে সমস্যায় পড়ে গিয়েছে ভারত! গত রাতে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “এই সপ্তাহের গোড়ায় এক ইরাকবাসী বলেছিলেন, কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসছে না।

টেলিফোনের অন্য প্রান্তে জর্ডনের রাজা আবদুল্লা। আমেরিকার অন্যতম মিত্ররাষ্ট্রের প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে।

টেলিফোনের অন্য প্রান্তে জর্ডনের রাজা আবদুল্লা। আমেরিকার অন্যতম মিত্ররাষ্ট্রের প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

অসহায় এক ইরাকবাসীর আর্তি শুনেছিলেন। তাই ‘সাহায্যে’ এগিয়ে এলেন বারাক ওবামা। তাঁর নির্দেশে এর মধ্যেই আইএসআইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দু’দফায় বিমান হানা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। আর এর ফলে সমস্যায় পড়ে গিয়েছে ভারত!

গত রাতে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “এই সপ্তাহের গোড়ায় এক ইরাকবাসী বলেছিলেন, কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসছে না। আজ আমেরিকা সেই সাহায্যের জন্যই প্রস্তুত।” কালকের সেই ইঙ্গিতের পরে আজ নিয়ন্ত্রিত হানার সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা। কুর্দিস্তানের রাজধানী আর্বিলের অদূরে জঙ্গিদের উপর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’দফায় বোমা ফেলল মার্কিন যুদ্ধবিমান। ২০১১ সালের শেষাশেষি ইরাক থেকে সেনা সরিয়েছিল আমেরিকা। তার পর এমন হামলা এই প্রথম।

কিন্তু ইরাকে এই বোমাবর্ষণ শুরু ইস্তক কার্যত জোড়া উদ্বেগে ভারত। প্রথমত, বিমান হানা আরম্ভ হতেই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ধাক্কা লেগেছে শেয়ার বাজারে, পড়েছে টাকার দাম। ফলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম বাজেটের যাবতীয় হিসেবনিকেশ গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রের উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণ, ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে রয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি ভারতীয়। তাঁদের সকলকেই দেশে ফিরিয়ে আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছে বিদেশ মন্ত্রক।

আমেরিকা যখন ইরাকে বিমান হানা শুরু করেছে, তখন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হাগেল দিল্লিতে। এ দিন তাঁর সঙ্গে মোদীর বৈঠক ছিল। সেখানে হাগেলের সঙ্গে ইরাক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জানান, ইরাকে ভারতের যথেষ্ট স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। সরকারি সূত্রের খবর, কেন ওবামাকে বোমাবর্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে হল, মোদীকে তার ব্যাখ্যা দেন হাগেল। সেই সঙ্গে আমেরিকা তার অভিযানের খুঁটিনাটি ভারতকে জানাবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

মাস দুয়েক আগে ইরাকের মসুলে ৪১ জন ভারতীয় শ্রমিককে অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। এখনও তাঁদের খোঁজ নেই। তিকরিতে অপহৃত হয়েছিলেন ৪৬ জন ভারতীয় নার্স। তাঁদের অবশ্য দেশে ফিরিয়ে আনা গিয়েছিল। সেই ঘটনাকে প্রথম কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলেও ধরেছিল মোদী সরকার। কিন্তু এ বার সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। ১৫ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা হলে সেটিই হবে ইরাকে সংঘর্ষ শুরু ইস্তক ভারতের সব চেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান। বহু ভারতীয় যেমন ইরাকে কাজ করেন, তেমনই সে দেশের একেবারে উত্তর অংশে ভারতীয় সংস্থার উপস্থিতিও রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, ইরাকের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে।

এর সঙ্গেই রয়েছে তেলের দাম নিয়ে চিন্তা। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সৌদি আরবের পরেই ইরাক থেকে ভারতে সবথেকে বেশি তেল আমদানি হয়। শুধু তা-ই নয়, গোটা বিশ্বের বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করলেও তা মোদী ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে। কারণ জেটলি বাজেটে রাজকোষ ঘাটতি ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তার অন্যতম প্রধান শর্তই হল, বিশ্বের বাজারে তেলের দাম বাড়বে না এবং টাকার দামও পড়বে না। ফলে তেল আমদানির খরচ লাগামের মধ্যেই থাকবে। এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম বেড়ে গেলে এবং টাকার দাম পড়লে গোটা হিসেবটাই গুলিয়ে যাবে। কাজেই ওবামা যতই ‘নিয়ন্ত্রিত আক্রমণ’-এর কথা বলুন, মোদী প্রশাসনের কপালে ভাঁজ।

কেন এই নিয়ন্ত্রিত আক্রমণ, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওবামা কাল বলেন, আর্বিল ও বাগদাদে কর্মরত মার্কিন অফিসারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম কারণ। সেই জুন মাস থেকে নাগাড়ে হামলা চালাচ্ছে আইএসআইএস জঙ্গিরা। তা হলে নিরাপত্তার প্রশ্ন এখনই কেন ভাবাচ্ছে ওবামাকে? কারও কারও সন্দেহ, জঙ্গি-দমনের ‘অছিলায়’ কি ইরাকে ফের আধিপত্য বাড়াতে চাইছে আমেরিকা?

সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ওবামা। তাঁর বয়ানে, “তিনি জানান, মার্কিন বাহিনী কখনওই পুরোদস্তুর যুদ্ধের পথে হাঁটবে না। এমনকী ইরাকের মাটিতেও মার্কিন সেনা ঢুকবে না। পেন্টাগন জানিয়েছে, কুর্দিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পেশমেরগা বাহিনীকে লক্ষ করে গোলা ছুড়ছিল জঙ্গিরা। তারই জবাবে এ দিন সন্ধেয় পারস্য উপসাগরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ থেকে উড়ে যায় মার্কিন এফএ-১৮ যুদ্ধবিমান। জঙ্গিদের লক্ষ করে তারা বোমা ফেলে স্থানীয় সময় সন্ধে ছ’টা কুড়ি নাগাদ। পরে গভীর রাতে আবার বোমাবর্ষণ করে মার্কিন বিমান। পেন্টাগনের যুক্তি, কৌশলগত ভাবে আর্বিল ও বাগদাদের গুরুত্ব অসীম। ফলে এ দু’টি শহর জঙ্গি দখলে যেতে দেওয়া যাবে না।


প্রস্তুতি। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ওড়ার অপেক্ষায় সার সার যুদ্ধবিমান।

দীর্ঘদিনের যুদ্ধ সত্ত্বেও এত দিন আপাত শান্ত ছিল কুর্দিস্তান। কিন্তু এ বার আইএসআইএস জঙ্গিরা সেখানেও ঢোকার চেষ্টা শুরু করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, উঠেছে গণহত্যার অভিযোগও। আন্তর্জাতিক মহলের অভিযোগ, আইএসআইএস জঙ্গিরা বড়-ছোট নির্বিশেষে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তেমন কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শিশুদেরও রেহাই দিচ্ছে না জঙ্গিরা। এ ক্ষেত্রে নিজেদের ধর্মের লোকেদেরও ছাড়ছে না জঙ্গিরা। অনেকেই বলছেন, কুর্দিস্তান-সহ ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তেলের খনিগুলির দখল নিতেই এলাকায় আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে আইএসআইএস। সে কারণেই ওই অঞ্চল থেকে আর্তি উঠেছে, আমাদের বাঁচাও!

আইএসআইএস জঙ্গিরা কিন্তু হামলা সত্ত্বেও নির্বিকার। তাদের এক জন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, “কৌশলগত ভাবে আমাদের সুবিধে হতে পারে, এমন জায়গা বুঝে মার্কিন বিমানগুলি বোমা ফেলেছে। কিন্তু আমরা ও ভাবে যুদ্ধ করি না। গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষিত আমরা। তাই ও দিয়ে আমাদের কিছু ক্ষতি হবে না।”

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

us fighter planes iraq kill militants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE