Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ডোনাল্ডের হোয়াইট হাউস

বেচাল, না ভারসাম্য! জোড়া মাথায় জল্পনা

ব্যালট বড় বালাই। মাঝে তাই টেনেটুনে সপ্তাহ দুয়েকের ‘বিরতি’! কিন্তু ভোট ফুরোতেই ফের চেনা মেজাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

স্টিফেন কে ব্যানন ও রেইন্স প্রিবাস।

স্টিফেন কে ব্যানন ও রেইন্স প্রিবাস।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

ব্যালট বড় বালাই।

মাঝে তাই টেনেটুনে সপ্তাহ দুয়েকের ‘বিরতি’! কিন্তু ভোট ফুরোতেই ফের চেনা মেজাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসী তাড়ানোর হুমকি শুধু নয়, হোয়াইট হাউসের দুই শীর্ষকর্তার নাম ঘোষণাতেও সাফ বুঝিয়ে দিলেন— তিনি হাঁটবেন ‘ট্রাম্পোচিত’ পথেই। হোক বিতর্ক।

হোয়াইট হাউসে নিজের মুখ্য মন্ত্রণাদাতা হিসেবে গতকালই স্টিফেন কে ব্যাননের (৬২) নাম ঘোষণা করেছেন ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’ ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ‘চিফ অব স্টাফ’ পদে রেইন্স প্রিবাসের (৪৪) নাম। বিতর্কের সূত্রপাত অবশ্য প্রথম নামেই!

কে এই স্টিফেন ব্যানন? ট্রাম্পের পছন্দের লোক তো বটেই। বিতর্কেও সমানে-সমানে। এক সময় দেশের কট্টর ডানপন্থী অনলাইন সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের প্রধান ছিলেন ব্যানন। পরে হয়ে যান ট্রাম্পের ক্যাম্পেন-সিইও। ব্যাননের সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার নারী ও মুসলিম বিদ্বেষের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। মার্কিন মুলুকের প্রচলিত ডানপন্থাকে প্রায় উড়িয়ে দিয়ে ইহুদিবিদ্বেষেও মুখ খুলেছিলেন ব্যারন। আর সেই সঙ্গে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস-এর স্পিকার পল রায়ানের বিরোধিতা তো ছিলই! সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধেও একাধিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এ হেন ব্যাননকে প্রচারের দায়িত্বে এনে ট্রাম্প কার্যত ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছিলেন যে, ক্ষমতায় এলে ওয়াশিংটনের প্রচলিত প্রথার বাইরেই হাঁটবেন তিনি। এ বার তেমনটাই হতে চলেছে বলে আশঙ্কা বিভিন্ন মহলে। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, এই ব্যাননকেই হোয়াইট হাউসের সর্বোচ্চ পদ ‘চিফ অব স্টাফ’-এ নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু দলের চাপে পড়েই মত বদলে বাধ্য হন তিনি।

দলীয় সূত্রেরই একাংশ বলছে, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস দখলে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছিল তাঁর গরমাগরম প্রচার। যাতে স্টিফেনের অবদান কম কিছু নয়। তাই প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা হিসেবে ফের স্টিফেনের নাম আসতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে আমজনতার একাংশ। প্রচারের আগাগোড়া ট্রাম্প যে ভাবে অভিবাসী, মুসলিম আর নারীদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন— তাঁদের আশঙ্কা, এ বার সেটাই না ফলে যায়। প্রশাসনে রিপাবলিকান পার্টির আদৌ তেমন ভূমিকা থাকবে কিনা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

মার্কিন কংগ্রেসে যদিও এখন রিপাবলিকানদেরই আধিপত্য। তাই কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এখনই বেচাল করবেন না ট্রাম্প। প্রাতিষ্ঠনিকতা তাঁকে মানতেই হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি সরকারি ভাবে হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন তিনি। গোটা দেশ আপাতত তাকিয়ে সে দিকেই। আশঙ্কার প্রহর গুনছে ওয়াশিংটন লবিও।

তবু কিছুটা ভরসা জোগাচ্ছে ‘চিফ অব স্টাফ’ পদে রেইন্স প্রিবাসের নিয়োগ। যাঁর সঙ্গে স্পিকার রায়ানের সম্পর্ক বেশ ভালই। ট্রাম্প কোনও দিনই দলীয় তরফে এককাট্টা সমর্থন পাননি। বরং ভোটের আগে বহু শীর্ষ রিপাবলিকান নেতাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধাচারণ করে তাঁকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সেই দলীয় কোন্দল ভালই সামাল দিয়েছিলেন রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান প্রিবাস।

খাতায়-কলমে ‘চিফ অব স্টাফ’ পদটি হোয়াইট হাউসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার পদ। তাই এই পদে ওয়াশিংটন লবিরই এক জনকে বসিয়ে ট্রাম্প কার্যত ভারসাম্য রাখতে চাইছেন বলেই মত একাংশের। এই পদে যিনি বসেন, তিনি প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সচিবের মতোই। আর প্রিবাস যে হেতু রিপাবলিকানদের বহু পুরনো এবং বিশ্বস্ত সঙ্গী, তাই ট্রাম্পের ‘বেচালে’ এখনই মুষড়ে যেতে নারাজ দলও।

বিতর্ক তবু থাকছেই। হোয়াইট হাউসেরই একাংশ বলছে, পদমর্যাদার দিক থেকে প্রিবাস এগিয়ে থাকলেও, মুখ্য পরামর্শদাতা হিসেবে ব্যাননকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন ট্রাম্প। তাই আশঙ্কা— প্রাতিষ্ঠানিকতা নয়, দেশের নয়া প্রসিডেন্ট গা ভাসাবেন কট্টরপন্থী নীতিতেই। বছর কুড়ি আগে প্রাক্তন স্ত্রীর উপর পারিবারিক হিংসা মামলায় নাম জড়িয়েছিল ব্যাননের। তাই তাঁর ‘বুদ্ধিতে’ ট্রাম্পেরও ‘বুদ্ধিনাশের’ আশঙ্কা করছেন অনেকে।

‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’-এর নিজের কথায় যদিও ভারসাম্যেরই ইঙ্গিত। দুই শীর্ষ কর্তার নাম ঘোষণা করেই তিনি বলেন, ‘‘স্টিভ ও রেইন্স যথেষ্ট যোগ্য নেতা। দু’জনেই আমার হয়ে প্রচার করে ভোটে জিতিয়েছেন। এ বার হোয়াইট হাউসেও আমরা একসঙ্গে কাজ করে দেশের নাম উজ্জ্বল করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE