দিন চারেক আগেই সামরিক খাতে বড় রকমের আর্থিক অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। আজ ফের ধাক্কা খেল ইসলামাবাদ। এ বার পাকিস্তানের নিরাপত্তা খাতে দেওয়া একশো কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সাহায্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। এই রকম যে কিছু হতে চলেছে, গত পরশু তার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিল তারা।
নতুন বছরের শুরুতেই সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৫ বছর ধরে আমেরিকার কাছ থেকে কয়েকশো কোটি ডলার করে আর্থিক অনুদান নিয়েও নিজেদের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের তারা প্রশ্রয় দিয়ে আসছে বলে আঙুল তুলেছিলেন তিনি। পাকিস্তান আমেরিকার সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য ছিল, আফগানিস্তানে যে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে নির্মূল করার জন্য বছরের পর বছর ধরে আমেরিকা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে, পাকিস্তান নিজেদের মাটিতে সেই সব গোষ্ঠীকেই আশ্রয় দিচ্ছে। এর পরে গত মঙ্গলবারই প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি ডলার সামরিক সাহায্যদান বন্ধের কথা ঘোষণা করে তাঁর প্রশাসন। এই ভাবে আরও অনুদান যে বন্ধ হতে থাকবে, সেই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল তখনই। তার পরই আজকের সিদ্ধান্ত।
তবে আজকের এই ঘোষণার সঙ্গে মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হাফিজ সইদের মুক্তির বিষয়টির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র হেদার নয়ের্ট সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ‘‘আমার মনে হয় না এই অনুদান বন্ধের সঙ্গে হাফিজ সইদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে।’’ হেদারের বক্তব্য, হাফিজ সইদ নিয়ে পাক সরকারের সিদ্ধান্তে তারা যে অসন্তুষ্ট, তা আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। হাফিজকে ফের ধরতে পারলে তার পুরস্কার মূল্য এক কোটি ডলার ঘোষণাও করে রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। হেদার আরও যোগ করেছেন, ‘‘পাক সরকার হাফিজকে ফের বন্দি করবে না, আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই। তবে একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার যে এ ভাবে ইসলামাবাদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’’ অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পাক সরকারকে আজ আরও এক বার বিঁধেছেন তিনি। তাঁর আরও বক্তব্য, শুধু পাক তালিবান বা হক্কানি গোষ্ঠীই নয়। ভারত বিরোধী লস্কর-ই-তইবা বা জইশ-ই মহম্মদের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নিয়েও উদ্বেগে রয়েছে হোয়াইট হাউস।
একই সঙ্গে ভাবাচ্ছে পাক পরমাণু কর্মসূচিও। পরিস্থিতি উত্তর কোরিয়ার মতো না হয়ে যায়, আশঙ্কা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারের। তাঁর বক্তব্য, নিজেদের পরমাণু কর্মসূচিকে ঢাল করে পাকিস্তান যদি অন্য দেশকে ব্ল্যাকমেল করে, তা হলে অচিরেই তারা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে পরিণত হবে।’’
তবে নিরাপত্তা খাতে অনুদান বন্ধ নিয়ে ইসলামাবাদ আজ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এ ভাবে আমেরিকার নিজেদের সিদ্ধান্ত আরোপের ফল সন্ত্রাসদমনের উপরেই পড়বে। পাক বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিতে আজ বলা হয়েছে, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতাই করে এসেছি। আর এটাও প্রশংসনীয় বিষয় যে, গত ১৫ বছর দেশের মানুষের নিরাপত্তার খাতিরে আমরা ১২ হাজার কোটি ডলার নিজেদের কোষাগার থেকেই দিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও দেশবাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।’’ নাম না করে ট্রাম্পের নতুন বছরের কটাক্ষই ইসলামাবাদ আজ ফেরত দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘শান্তি রক্ষার মতো কাজে পারস্পরিক বোঝাপড়া, ধৈর্য্য আর সম্মান রক্ষার মতো বিষয় অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত বর্তমানে আফগানিস্তানে আইএসের যা বাড়বাড়ন্ত তাতে আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy