Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শপথের দিনে মোদীকে হুঁশিয়ারি আমেরিকার!

রাশিয়া থেকে তাদের সর্বাধুনিক, দূর পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ কিনছে ভারত। এতেই গোসা আমেরিকার। এর আগে একমাত্র চিন, ২০১৪ সালে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর প্রথম বারের শপথে এসেছিলেন বারাক ওবামা। আর এ বারের শপথের দিনে মিলল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হুঁশিয়ারি!

রাশিয়া থেকে তাদের সর্বাধুনিক, দূর পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ কিনছে ভারত। এতেই গোসা আমেরিকার। এর আগে একমাত্র চিন, ২০১৪ সালে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে। গত কাল ট্রাম্পের বিদেশ দফতরের এক উঁচু সারির কর্তা সাংবাদিকের বলেন, ‘‘মস্কোর কাছ থেকে দিল্লির এস-৪০০ কেনার সিদ্ধান্ত অর্থপূর্ণ। এটা বড় কোনও ব্যাপার নয় বলে যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আমরা মানতে পারছি না।’’ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ভারত-মার্কিন সম্পর্কে এর ‘গুরুতর প্রভাব’ পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের সময় গত বছর ৫ অক্টোবর ৫০০ কোটি ডলার দিয়ে ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে চুক্তি হয় দু’দেশের মধ্যে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিবৃতি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, এস-৪০০ হস্তান্তর শুরু হবে ২০২০-তে। ২০২৩ সালের মধ্যে তা শেষ হবে।

কূটনীতিকদের একটি অংশের মত, আমেরিকা থেকেও ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনে। এবং এটা যত দিন বাড়তে থাকবে, তত দিন রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনায় ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন কর্তাটি স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি তা মনে করছি না। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আমেরিকার প্রতিপক্ষ মোকাবিলার আইন (সিএএটিএসএ)-এর দিক দিয়ে ওই প্রতিরক্ষা ক্রয় তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে এতে। ভারত যদি এস-৪০০ কেনা নিয়ে এগোয়, তবে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে তা গুরুতর প্রভাব ফেলবে।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, মিত্র দেশ বলে আপনা-আপনি ছাড়ের কোনও সুযোগ নেই ‘সিএএটিএসএ’-তে। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও প্রতিটি বিষয় আলাদা আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখা হয় এই আইনে।

শুধু আইনি-কাঁটা নয়, মস্কো-দিল্লি সামরিক সহযোগিতার অন্য একটি দিকের কথাও সামনে এনেছেন মার্কিন কর্তাটি। তা হল, একাধিক দেশের সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে তথ্য বিনিময় করাটা বিপদের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন-ভিন্ন ব্যবস্থাকে আমরা মেশাই না। নেটো শরিক তুরস্কের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে। ভারতের ক্ষেত্রেও সেটি প্রযোজ্য।’’ তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এটা খুবই স্পষ্ট যে, রাশিয়া যেখানে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে তাদের আধুনিক প্রযুক্তি নিলে ভুল বার্তা যাবে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’’

বিদেশসচিব হিসেবে ২০১৫ থেকে তিন বছর অনেক জটিল পরিস্থিতি সামলেছেন সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর। তাঁর আগে দু’বছর রাষ্ট্রদূত ছিলেন আমেরিকায়। তার আগের চার বছর চিনে। আজ সবে বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জন্য প্রথম দু’টি চ্যালেঞ্জ এসে রয়েছে আমেরিকা থেকে। ইরান থেকে তেল ও রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা— দুই ক্ষেত্রেই বাধা হচ্ছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, এ দু’টি বিষয়কেই অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। চলতি বছরেই জি-২০-সহ বিভিন্ন মঞ্চে ভারত-আমেরিকা যোগাযোগ হবে। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত তার অধিকার নিয়ে আপস করবে না। মার্কিন বিরোধিতার প্রভাব যে দেশগুলির উপরে পড়ছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করবে দিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE