Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তালিবানি হুমকিতে মহিলা ক্রিকেট বন্ধ আফগানিস্তানে

সন্ত্রাসদীর্ণ দেশটার কালো অতীতের ওইটুকুই উজ্জ্বল। ওইটুকুই সফল। ওইটুকু ঘিরে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া একটা জাতি একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করে। আফগানিস্তানের সেই ক্রিকেটমোদীদের দেখে এখন আর কেউ অবাক হয় না। বছর পনেরো আগে খেলার উপরে তালিবানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার পারদ উঠেছে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।

ডায়ানা বারাকজাই

ডায়ানা বারাকজাই

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

সন্ত্রাসদীর্ণ দেশটার কালো অতীতের ওইটুকুই উজ্জ্বল। ওইটুকুই সফল। ওইটুকু ঘিরে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া একটা জাতি একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করে। আফগানিস্তানের সেই ক্রিকেটমোদীদের দেখে এখন আর কেউ অবাক হয় না। বছর পনেরো আগে খেলার উপরে তালিবানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার পারদ উঠেছে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।

কিন্তু মাত্র চার বছর আগে তালিবানের ফতোয়া উপেক্ষা করে আফগানিস্তানে ঘটে গিয়েছিল আর একটা বিপ্লব। জাতীয় স্তরে তৈরি হয়েছিল মহিলাদের ক্রিকেট দল। এ বছর আর নেই সেটা। তালিবানি চোখরাঙানির জেরে নিঃশব্দে তুলে দেওয়া হয়েছে সেই দল। এমনটাই তো হওয়ার কথা। এত দিন ধরে আফগানিস্তানে মহিলাদের ক্রিকেট দল যে টিকে ছিল, সেটাই তো আশ্চর্যের!

কথাটা শুনে মোটেই খুশি হলেন না তিনি। মহিলার নাম, ডায়ানা বারাকজাই। গত এপ্রিলে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রতিষ্ঠাতার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, দেশের ক্রিকেট বোর্ডের বাধাতেই এটা হয়েছে। মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরোবে, ক্রিকেট খেলা শিখবে! এটা এখানে মানতেই পারে না কেউ। ডায়ানার মতে, সেই বিশ্বাসেই সিলমোহর বসিয়ে দিয়েছে বোর্ড।

তাঁর বক্তব্য, “মহিলাদের ক্রিকেট সমর্থন করে না বোর্ড। অথচ গোটা দেশে ৩৭০০ মেয়ে ক্রিকেট খেলে।” দেশের আরও অনেক মেয়ের মতো ডায়ানাও পাকিস্তানে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। আরও মেয়ে এই খেলায় এগিয়ে আসুক, চান তিনি। বোর্ডের মানসিকতা পাল্টাবে বলেও আশা রাখছেন ডায়ানা।

বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান নাসিমুল্লা দানিশের সাফ যুক্তি, “মহিলাদের ক্রিকেট প্রসারের মতো পরিস্থিতি নেই আফগানিস্তানে।” সমাজকর্মীরা মনে করেন, বোন বা মেয়েরা জনসমক্ষে ক্রিকেট খেলবে, সেই ভাবনার সঙ্গে একেবারেই স্বচ্ছন্দ নন এ দেশের পুরুষরা। প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনও তাই মেলে না।

গত সপ্তাহেই দায়িত্ব নেওয়া চেয়ারম্যান দানিশ স্বপ্ন দেখেন, আর দশ বছরের মধ্যে আফগান ক্রিকেট দলকে শীর্ষে নিয়ে যাবেন। আর সেই লক্ষ্যে এগোতে হলে মেয়েদের কী ভাবে ভুলে থাকবেন দানিশ? কারণ ২০১৫ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পূর্ণ সদস্য হতে গেলে আফগানিস্তানের যে একটা মহিলাদলও থাকা দরকার। তবে আজ কেন আপত্তি?

মহিলাদের ক্রিকেট নিয়ে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত আপত্তি নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দানিশ জানান সেই হুমকির কথা। ফোনে তাঁকে বলা হয়েছিল, “তালিবান মনে করে মহিলাদের ক্রিকেটের দরকার নেই। এ সব ইসলামে নেই। আফগান সংস্কৃতিতেও নেই। এ সব হলে খেলোয়াড়দের জীবনের কথা কিন্তু আমরা ভাবব না।” তা ছাড়া দানিশ তাঁর অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, রক্ষণশীল পরিবারের কেউই চায় না, মেয়েরা ক্রিকেট খেলুক। সেটাও বড় চ্যালেঞ্জ।

দানিশ আঙুল তুলছেন ডায়ানার দিকে। ডায়ানা নাকি পরিবারের মেয়েদেরই শুধু সুযোগ দিচ্ছিলেন, অভিযোগ দানিশের। যা শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেন ডায়ানা। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, আমেরিকা যে কোটি কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করছে, বোর্ড তো সেই টাকা নয়ছয় করছে। দানিশ জানালেন, এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু রক্ষণশীলতা, পারিবারিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে অন্য নিরাপত্তাহীনতা তাড়া করে মেয়েদের। প্রতি দিন, প্রতি সপ্তাহে বোমা-গুলি। কী ভাবে এগিয়ে আসবে ওরা? প্রশ্ন টুবা সাঙ্গারের। ক্রিকেট বোর্ডের মহিলা বিভাগের দায়িত্বে আছেন তিনি। বলছেন, বোর্ড পাশে দাঁড়ালেও মহিলা ক্রিকেটারদের সংখ্যা এত কমে যাচ্ছে, যে আন্তর্জাতিক স্তরে কিছু করা মুশকিল। আফগানিস্তানে মানবাধিকার কর্মী হেথার বার বলেন, সরকারি স্তরে যতই বলা হোক মেয়েদের খেলানোর জন্য আগ্রহী তারা। আসলে সব চেষ্টাই লোকদেখানো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE