Advertisement
E-Paper

প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা কেন, ক্ষোভ আত্মীয়দের

পাকাপোক্ত প্রমাণ বলতে এখনও কিছুই মেলেনি। এমনকী, উপগ্রহচিত্রে কিংবা বিমান থেকে খালি চোখে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে যে সব সন্দেহজনক বস্তু ভাসতে দেখা গিয়েছিল, তাদের একটিও এখনও উদ্ধার হয়নি। তা হলে কীসের ভিত্তিতে এমএইচ ৩৭০-র অন্তিম পরিণতি নিয়ে এতটা নিশ্চিত হলেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী? এই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালে বেজিংয়ে মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সামনে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখান বিমানযাত্রীদের আত্মীয়রা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০২:১২
জবাব চাই। বেজিংয়ে মালয়েশীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন তরুণী। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

জবাব চাই। বেজিংয়ে মালয়েশীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন তরুণী। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

পাকাপোক্ত প্রমাণ বলতে এখনও কিছুই মেলেনি। এমনকী, উপগ্রহচিত্রে কিংবা বিমান থেকে খালি চোখে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে যে সব সন্দেহজনক বস্তু ভাসতে দেখা গিয়েছিল, তাদের একটিও এখনও উদ্ধার হয়নি। তা হলে কীসের ভিত্তিতে এমএইচ ৩৭০-র অন্তিম পরিণতি নিয়ে এতটা নিশ্চিত হলেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী? এই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালে বেজিংয়ে মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সামনে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখান বিমানযাত্রীদের আত্মীয়রা। তাঁদের আরও অভিযোগ, সত্যিটা গোপন করছে মালয়েশীয় সরকার, তদন্তকারী দল এবং সামরিক বাহিনী।

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন বোঝানোর চেষ্টা করেন, কতটা নির্ভরযোগ্য ও অভিনব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এমএইচ ৩৭০-র পরিণতি জানতে পারা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক বিশ্লেষণের পর দ্বিতীয় বার আরও একটি স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী সংস্থাকে দিয়ে ওই ফলাফল যাচাই করেছিল ব্রিটিশ সংস্থা ইনমারস্যাট। তার পরই সে সব তথ্য এবং নথি তুলে দেওয়া হয় এএআইবি-র হাতে। তাঁরাও পুরো পদ্ধতি খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হন, উত্তর করিডর নয়, দক্ষিণ করিডরেই উড়ে গিয়েছিল বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর। এবং শেষ বারের মতো ওই বিমান যেখান থেকে ক্ষীণ ‘পিং’ সঙ্কেত পাঠিয়েছিল, তা থেকে হিসেব করেই তার শেষ অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। তবে এক উড়ান বিশেষজ্ঞের কথায়, ঠিক সেখানেই যে ভেঙে পড়েছে বিমানটি, তা নয়। হতে পারে সেখান থেকে ভেসে আরও প্রায় ১০০ মাইল পাড়ি দিয়েছিল বিমানটি। তার পর সেখানেই তলিয়ে যায় সেটি।

কিন্তু এই ব্যাখ্যাও শান্ত করতে পারেনি বিমানযাত্রীদের আত্মীয়দের। এক জনের বয়ানে, “কোনও প্রমাণ থাকলে তা-ও মেনে নিতাম। কিন্তু স্রেফ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত?” বাস্তবিক। সতেরো দিন ধরে উৎকণ্ঠা আর আশার দোলাচলে প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে। তার পর যা জানতে পারা গেল, তা মোটেও প্রমাণ ছাড়া মানতে চান না ‘মৃত’ যাত্রীদের পরিজনরা। এ দিন প্রথমে একটি হোটেলে জমায়েত হন তাঁরা। তার পর পৌঁছন মালয়েশীয় দূতাবাসের সামনে। প্রথমে স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি নিয়ে চলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। কিন্তু তার মেয়াদ বেশিক্ষণ ছিল না। অবিলম্বেই দূতাবাসের দিকে বোতল তাক করে ছুঁড়তে শুরু করেন তাঁরা। চলে দোষারোপের পালা। এক সময় মালয়েশীয় সরকারকে ‘খুনি’ বলেও সম্বোধন করতে শুরু করেন তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে তাঁদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার মধ্যে যেন কিছুটা গা ছাড়া ভাব ছিল। বিক্ষোভকারীদেরই অনেকের ধারণা, হয়তো এই বিক্ষোভে পরোক্ষ মদত ছিল বেজিং প্রশাসনেরও। এই বিক্ষোভের পর চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং দাবি জানিয়েছে, তদন্তে চিনের অফিসারদেরও সামিল করুক মালয়েশিয়া।

কিন্তু যে প্রমাণের দাবিতে এত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, সে প্রমাণ যে কবে মিলবে, তা জানা নেই। এ দিন হিশামুদ্দিন জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার গোটা দিনটি তল্লাশি অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামিকাল থেকে তা নতুন করে শুরু করা হবে। তবে এ দিনই আমেরিকা ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার লোকেটর’ এবং একটি বিশেষ ধরনের ভেসেল অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা করে দিয়েছে। আগামিকাল সেটিরও পৌঁছনোর কথা। হিশামুদ্দিনের মতে, সেটিকে পারথের পশ্চিম দিকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের দিকে রওনা করা হবে ২৮ মার্চ। ৫ এপ্রিল সেটি গন্তব্যে পৌঁছবে। অর্থাৎ আরও দশ-এগারো দিনের অপেক্ষা। হিসেব বলছে, তার পর বিমানের ব্ল্যাক বক্সের ব্যাটারির আয়ু থাকবে আর মাত্র চারটে দিন। অর্থাৎ তার মধ্যে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পেলে অনুসন্ধান যে কবে শেষ হবে, জানা নেই।

তবে হিশামুদ্দিনের মতে, ক্রমশ তল্লাশি অভিযানের এলাকা গুটিয়ে আনছেন তাঁরা। সপ্তাহখানেক আগেও প্রায় সাড়ে বাইশ লক্ষ স্কোয়ার নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালানোর কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিন জানান, এখন থেকে পারথের পশ্চিমে প্রায় চার লক্ষ সত্তর হাজার স্কোয়ার নটিক্যাল মাইল এলাকা খুঁজে দেখা হবে। গত কাল এই এলাকার মধ্যেই দু’টি সন্দেহজনক বস্তু ভাসতে দেখেছিল অস্ট্রেলীয় বিমান। তাঁরই খোঁজ চালাচ্ছে অস্ট্রেলীয় জাহাজ।

কিন্তু দু’টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব কালও মেলেনি। আজকের সাংবাদিক বৈঠকের পরও সে প্রশ্নদু’টির উত্তর জানা গেল না। কে বা কারা এই উধাও-রহস্যের নেপথ্যে ছিলেন? দ্বিতীয়ত, ঠিক কী হয়েছিল বিমানটির? এ দিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সাফ জানিয়ে দেন, ব্ল্যাক বক্স না মেলা পর্যন্ত কোনও ব্যাখ্যাই দেওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু উৎকণ্ঠার সতেরো দিন কাটার পর এই ব্যাখ্যাহীন অবস্থান মানতে নারাজ আত্মীয়রা। যতই আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা বলুক না কেন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, তাতে আত্মীয় বিয়োগের ক্ষোভ যে কমবে না, তা পরিষ্কার।

malaysia boeing mh-370
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy