পথ দেখিয়েছে কৃষ্ণসাগরের এক উপদ্বীপ। আর কিছু দিন পরে সেই রাস্তাতেই হয়তো হাঁটবে স্কটল্যান্ডও। এ বার তালিকায় জুড়তে চলেছে আরও একটা নাম। ভেনিস। ইতালির সঙ্গে দীর্ঘ দেড়শো বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান এই শহর ও তার আশপাশের এলাকার উননব্বই শতাংশ মানুষ।
গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপের একটা দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে অন্য দেশের সঙ্গে জুড়েছে ক্রাইমিয়া। এ বার সেই গণভোটকে হাতিয়ার করে ইউরোপেরই আর এক দেশ ইতালির থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইছে ভেনিস। তবে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে জুড়তে চাইছে না তারা। তাদের উদ্দেশ্য, স্বাধীন ‘রিপাবলিকা ভেনেটা’ গঠন।
আসলে বহু বছর আগে স্বাধীন দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল ভেনিস। ‘রিপাবলিকা ডি ভেনেজিয়া’র স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল প্রায় হাজার বছরের পুরনো। ১৮৬৬ সালে নেপোলিয়ান ইতালির সঙ্গে জুড়ে দেন ভেনিসকে। তখন থেকেই ইতালির অংশ হিসেবে পরিচিত ভেনিস।
কিন্তু এই দীর্ঘ দেড়শো বছরে ধীরে ধীরে ইতালি সরকারের সঙ্গে তিক্ততা বেড়েছে ভেনিসবাসীর। শহরের উচ্চবিত্তদের একটা বড় অংশের দাবি, সাত হাজার একশো কোটি ইউরো কর হিসেবে ভেনিস দিয়ে থাকে রোমকে। অথচ পরিবর্তে মাত্র দু’হাজার একশো কোটি ইউরো ফেরত পায় তারা। সরকারের কোনও পরিষেবাই সে ভাবে পৌঁছয় না তাদের কাছে। দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে তুলে ধরার বিরাট দায়িত্ব ধনী ভেনিসবাসীদের একাংশের কাঁধে। অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরাই উপেক্ষিত। এই ক্ষোভটা থেকেই মূলত নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার ভাবনা এসেছে ভেনিসের। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, “বঞ্চনা সহ্য করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ভেনিসবাসীর। ভেনিসের অধিকাংশ লোকই এখন আর রোমকে কর দিতে চাইছেন না।” সুতরাং হাতে এখন একটাই অস্ত্র। গণভোট।
অবশেষে একটা সুযোগ এল গত ১৬ মার্চ। সে দিনই গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্রাইমিয়ার অধিবাসীরা। সেই দিন থেকেই গণভোটের ব্যবস্থা হয়েছিল ভেনিসে। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সেই ভোটগ্রহণ চলেছে পাঁচ দিন ধরে। সেখানেই উননব্বই শতাংশ মানুষ রায় দিয়ে বলেছেন স্বাধীন ভেনিস রাষ্ট্র গঠন করতে চান তাঁরা। প্রস্তাবিত নতুন দেশের নামও ঠিক। ‘রিপাবলিকা ভেনেটা’। পঞ্চাশ লক্ষের ওই নতুন দেশে মূলত ভেনেটো এলাকার বাসিন্দারাই থাকবেন। পরে লম্বার্ডি, ট্রেনটিনো, ফ্রিউলি-ভেনেজিয়া জিউলিয়া অঞ্চলকেও জোড়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
ভেনিসবাসীকে সাহস জোগাচ্ছে স্কটল্যান্ডও। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সেখানও গণভোট হবে। স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা যেখানে ঠিক করবেন, তাঁরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে থাকবেন, নাকি ইউরোপে গঠিত হবে স্বাধীন স্কটল্যান্ড রাষ্ট্র। তবে সেপ্টেম্বরের দেরি আছে। কিন্তু ভেনিসের ভবিষ্যত্? ভেনেটো এলাকার নর্দান লিগ পার্টির প্রেসিডেন্ট লুকা জাইয়া অবশ্য প্রত্যয়ী। তাঁর কথায়, “বিপ্লব তো খিদে থেকেই জন্মায়। আর আমরা ক্ষুধার্ত। ভেনিস এখন পালাতেই পারে।”
রোমের কানে কি এই বার্তা পৌঁছেছে? উত্তর বোধ হয় সময়ই দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy