—প্রতীকী ছবি।
চাল থেকে আলু, পেঁয়াজ থেকে টোম্যাটো, তৈলবীজ থেকে ভুট্টা। এ বছর বর্ষা কম হলে এই সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। মোদী সরকারের অন্দরমহলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। কারণ এই সব কিছুরই ফলন নির্ভর করছে বর্ষার উপরে। ফলন কম হলেই বাজারে দাম বাড়বে। আর তা হলে ফের বাজারে সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হারও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই। এ বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এমনিতেই অদ্ভুত আচরণ করছে। কেরলে বর্ষা ঢুকতে এক সপ্তাহ দেরি করল। তার পরেও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম বৃষ্টি হচ্ছে। এর উপরে আবার এল নিনো চোখ পাকাচ্ছে। এল নিনো-র ফলে যদি বর্ষা মার খায়, তা হলে আমজনতার চিন্তার কারণ রয়েছে।”
মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা আশঙ্কা করছেন, জুন মাস পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার লাগামের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু জুলাই থেকে আচমকা খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি মাথা চাড়া দেবে। তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বৃষ্টির ঘাটতির ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। মোদী সরকার তথা বিজেপির অবশ্য অন্য চিন্তার কারণও রয়েছে। বছরের শেষে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানার নির্বাচন। রোজকার খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে বিরোধীদের নিশানার মুখে এল নিনো-কে নয়, মোদী সরকারকেই পড়তে হবে।
মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সূচক ৪.২৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। যা ২৫ মাসে সর্বনিম্ন। মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সূচক নেমে এসেছিল ২.৯১ শতাংশে। যা ১৮ মাসে সর্বনিম্ন। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়ে দিয়েছেন, বর্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই। এল নিনো বা প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ বাতাসের আগ্রাসন ভারত মহাসাগরে কতটা ছাপ ফেলবে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। আগামী দিনে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কেমন থাকবে, তার সবটাই নির্ভর করছে খাদ্যপণ্যের দামের উপরে। গমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোদী সরকার ইতিমধ্যেই মজুতদারির উপর ঊর্ধ্বসীমা জারি করেছে। সরকারি গুদাম থেকে খোলা বাজারে গমের সঙ্গে চালও বেচা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক বলছে, আগামী কয়েক মাসে বর্ষার দিক থেকে ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উষ্ণ বাতাস এল নিনো— স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ দুষ্টু ছেলে— বিভিন্ন দেশের আবহাওয়ায় ধাক্কা দেয়। ভারতে তা অনাবৃষ্টি ডেকে আনে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে চার শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হবে। গত ১৫টি এল নিনো বছরের মধ্যে ১০ বারই বৃষ্টিতে ঘাটতি হয়েছে। এ বছর গোড়া থেকেই বৃষ্টি কম। জুন মাসেই যদি স্বাভাবিকের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ কম বৃষ্টি হয়, তা হলে গোটা মরসুমেই খারাপ বৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রকের আশঙ্কা, তার ফলে চাল, আলু, তৈলবীজ, পেঁয়াজ, টোম্যাটোর ফলন কম হবে। দামও বাড়বে। ভুগবেন আমজনতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy