E-Paper

দু’জন অস্থায়ী শিক্ষকই ভরসা, আশঙ্কা স্কুল বন্ধের

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দু’জন অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজনের চুক্তির মেয়াদ আর কয়েক দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭
সন্ধিপুর আদর্শ জুনিয়র হাইস্কুল।

সন্ধিপুর আদর্শ জুনিয়র হাইস্কুল। নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষক মাত্র দু’জন রয়েছেন। তা-ও অস্থায়ী। তাঁদের মধ্যে আবার এক জনের চুক্তির মেয়াদও শেষের পথে। এমনই অবস্থা পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদ থানার গলসি ১ ব্লকের সন্ধিপুর আদর্শ জুনিয়র হাইস্কুলের। দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক না পেলে, স্কুলটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকেরা। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় দুই যুবক। তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন।

২০১০-এ স্কুলটি চালু হয়। সন্ধিপুর, ঘোষপাড়া, বাগানপাড়া, টাটোর বাঁধ, বড়চাদরা, মাঝিপাড়া-সহ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েদের এক মাত্র ভরসা এই স্কুল। অভিভাবকেরা জানান, প্রথম থেকেই স্কুল চলেছে অস্থায়ী শিক্ষকের ভরসায়। এক সময় পাঁচ জন অস্থায়ী শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে দুই হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয়েরা জানান, পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় দুই যুবক সাধের আলম মল্লিক ও যুধিষ্ঠীর বাগদি। টেটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাধের আলম মল্লিক বলেন, “শুধু শিক্ষকের অভাবে একটা স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে! ঠিক মতো পড়াশোনা হচ্ছে না, দেখে খুব খারাপ লাগে। তাই ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ২০১৬ থেকে বিনা পারিশ্রমিকে আমি ও আমার বন্ধু যুধিষ্ঠীর স্কুলে পড়াচ্ছি।”

স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সীমানা পাঁচিল বলে কিছু নেই। গরু, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল চত্বরে। এক পাশে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকেরা বলেন, “একে শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা হচ্ছে না। তার উপরে রাতবিরেতে স্কুলে অসামাজিক কাজকর্ম চলছে, তা বেশ বোঝা যায়।” ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুচরিতা ঘোষ বলে, “আমরা স্কুল চত্বর সুন্দর করে রাখতে চাই। কিন্তু যাই করি, সব নষ্ট করে দেয় গবাদি পশুরা। শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনার খুব অসুবিধা হচ্ছে। সব ক্লাস ঠিক মতো হয় না।”

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দু’জন অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজনের চুক্তির মেয়াদ আর কয়েক দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক অরুণ চট্টোপাধ্যায় জানান, নতুন করে যদি শিক্ষক নিয়োগ না হয়, তা হলে স্কুল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “সম্ভবত স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাবে। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের, বিশেষ করে দুঃস্থ পড়ুয়ারা খুব সমস্যায় পড়বে। কারও কারও পড়াশোনা বন্ধ হয়েও যেতে পারে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী শিক্ষক দিয়েই জুনিয়র হাইস্কুলগুলি চলছে। এর আগে শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বুদবুদ থানার নারায়ণপুর জুনিয়র হাইস্কুল। সেখানকার পড়ুয়াদের নিকটবর্তী একটি স্কুলে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি এই স্কুলটি বন্ধ হয়, সে ভাবেই নিকটবর্তী অন্য স্কুলে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে পড়ুয়াদের। অবর বিদ্যালয় পরির্দশক (বুদবুদ চক্র) জয়ন্ত বর্মণ জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে এই স্কুলে সমস্যা হবে না। কিন্তু পরের শিক্ষাবর্ষে স্থায়ী শিক্ষক না পাওয়া যায়, তা হলে যাঁরা আছেন তাঁদেরকেই অনুরোধ করা হবে আরও এক বছর পড়াতে। তিনি বলেন, “তার মধ্যেই আশা করি শিক্ষা দফতর নতুন শিক্ষক দিয়ে দেবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো আছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durgapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy