—ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসার পরে এ বার তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে তাড়া দেবে ঢাকা। আগের পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের বিদেশ দফতর মনে করছে, নতুন সরকারের আমলেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ঘরোয়া ঐকমত্য তৈরির যে কাজ দিল্লি পাঁচ বছরে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এ বার তা ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছে তারা।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ভোটে শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ভোটের আগে তিস্তা চুক্তি না-হওয়ার বিষয়টি তারা আর খুঁচিয়ে তোলেনি। বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা জানিয়েছিলেন, তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলগুলিতে চাষের জন্য জলের বিকল্প ব্যবস্থা করায় নজর দিয়েছিল হাসিনা সরকার। সেখানকার নদীগুলিকে ড্রেজিং করায় জলের প্রবাহ বেড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিস্তার বাড়তি জল ছাড়াই স্বাভাবিক কৃষিকাজ চালানো যাচ্ছে। তাই এখনই চুক্তি নিয়ে চাপাচাপি করা হচ্ছে না।
ঢাকা সফরে গিয়ে ২০১১-য় তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এর পরে ২০১৪-য় শপথ নিয়েই ঢাকা সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, আগের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি তিনি রূপায়ণ করবেন। সুষ্ঠু ভাবে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন হলেও মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে এগোতে পারেনি দিল্লি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তিস্তায় পর্যাপ্ত জলের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে কৃষিজীবীরা এমনিতেই সঙ্কটে। বাংলাদেশকে বাড়তি জল দেওয়ার আগে যথার্থ সমীক্ষা করে এ রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার ভোটের ফল প্রকাশের পর শেখ হাসিনা মোদীকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। শাসক দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘আশা করি, তিস্তা চুক্তি-সহ অমীমাংসিত বিষয়গুলির সমাধান প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে।’’ দিল্লির কূটনীতিকরা ঢাকাকে বারে বারে জানিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঘরোয়া স্তরে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু পাঁচ বছরে সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়নি। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, মোদীর শপথের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। তার পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে পুরনো প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে ফের দিল্লিকে তাড়া দিতে তৈরি হচ্ছেন তাঁরা। মোদীর আমলে দু’দেশের সম্পর্ক যে সর্বাচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, তার জন্য মোদীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছিল বলে মনে করেন তাঁরা। মোদীর আমলে স্থলসীমান্ত চুক্তি যেমন সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণ করা গিয়েছে, তিস্তার ক্ষেত্রেও সেটা হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
মঙ্গলবার জাপান ও সৌদি আরব সফরে যেতে হওয়ায় বৃহস্পতিবার মোদীর শপথের অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না শেখ হাসিনা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দিল্লির সেই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। ২০১৪-য় বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরীকে মোদীর শপথে পাঠিয়েছিলেন হাসিনা। মোদী আলাদা ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। এর পরে মোদী বাংলাদেশ সফরেও যান। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বারেও তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ঢাকা সফরের জন্য শেখ হাসিনার একটি আমন্ত্রণবার্তা মোদীর হাতে তুলে দেবেন। মোদী তা গ্রহণ করে সফরে আসবেন বলে তাঁরা আশাবাদী। সঙ্গে হাসিনার দেওয়া কিছু উপহারও নিয়ে যাবেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy