Advertisement
E-Paper

আতঙ্কের ঢাকায় সুনসান ‘খুশির’ ইদের বাজারও

গুলশন মোড়ে যানজট— জাদুবলে ভ্যানিশ। শহরের আইকন রিক্সা— নিখোঁজ তারাও। খুশির ইদের আগে দোকান বা শপিং মল মাছি মারছে। দু’-এক জন হয়তো আসছেন। কিন্তু কোনও ক্রমে কেনাকাটা সেরে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন নিজের ঘরের চার দেওয়ালের গণ্ডিতে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৪
সেনার চোখেও জল। সোমবার ঢাকায় নিহতদের স্মরণসভায়। ছবি: এপি

সেনার চোখেও জল। সোমবার ঢাকায় নিহতদের স্মরণসভায়। ছবি: এপি

গুলশন মোড়ে যানজট— জাদুবলে ভ্যানিশ।

শহরের আইকন রিক্সা— নিখোঁজ তারাও।

খুশির ইদের আগে দোকান বা শপিং মল মাছি মারছে। দু’-এক জন হয়তো আসছেন। কিন্তু কোনও ক্রমে কেনাকাটা সেরে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন নিজের ঘরের চার দেওয়ালের গণ্ডিতে।

গত শুক্রবারের পর থেকে এই হলো ঢাকা। এক অচেনা ঢাকা। আতঙ্কের ঢাকা।

রক্তের জলছবির সাক্ষী আগেও থেকেছে ঢাকা। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ থেকে গাজিপুরে জজ কোর্টের ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণ— আগেও বহু সন্ত্রাস দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সন্ত্রাসের এই নৃশংস চেহারা এর আগে হাড় হিম করে দেয়নি ঢাকাবাসীর। নিরীহ বিদেশিদের এ ভাবে হত্যা পরোক্ষে কোথাও ভয় পাইয়ে দিয়েছে স্থানীয় মানুষকেই। তার মধ্যে ঘটনাস্থল গুলশন হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলশন। শুধু বিত্তবান বাংলাদেশিদের ঠিকানা বলেই নয়। বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ঠিকানাও এই এলাকা। বিত্তে কলকাতার আলিপুরের সমকক্ষ হলে, ধারে ও ভারে দিল্লির চাণক্যপুরীর সঙ্গে অনায়াসেই পাল্লা দিতে পারে গুলশন। রাস্তার দু’ধারেই বিদেশি দূতাবাস।

এ হেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে থাকা গুলশনে এই কাণ্ড ঘটায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। ট্যাক্সিচালক সিকন্দর বললেন, ‘‘এখানে যদি আক্রমণ হয়, তা হলে তো কোনও জায়গাই নিরাপদ নয়।’’ শহরে নিরাপত্তার অভাববোধটা হঠাৎই খুব প্রকট হয়ে উঠেছে। শিক্ষক থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী, রিক্সাচালক থেকে মোবাইল ফোন দোকানের মালিক— সকলেই আতঙ্কে ভুগছেন।

কথা হচ্ছিল ঢাকার বর্ষীয়ান সাংবাদিক পারভেজ খানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘‘ছোট মেয়ের আবদার ছিল, ইদের দিন ছুটি নিতে হবে। গোটা পরিবার হোটেলে খেতে যাওয়া হবে। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনার পরে মেয়ে নিজেই বলতে শুরু করেছে, হোটেলে যাব না। হামলা হতে পারে।’’ শুধু পারভেজ নন। সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে— আবার হামলা হবে না তো?

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এ মাসের ২০ তারিখ ফের হামলা হতে পারে। সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে শপিং মল, দূতাবাস, অন্তর্জাতিক স্কুলগুলি। ফলে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বেড়েছে কয়েক গুণ। আর তা মালুম হল বিমানবন্দরে নামতেই। কয়েক দফা তল্লাশির বাধা টপকে বিমানবন্দর চত্বর পার হয়ে আসার পরেও মোড়ে মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড। ভাবলেশহীন মুখে আরোহীর পরিচয় জানতে ব্যস্ত র‌্যাপি়ড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের কর্মীরা।

রাতের ওই ছবির প্রতিচ্ছবি দেখা গেল দিনের বেলাতেও। গন্তব্যস্থল হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ। গুলশন থানার ঠিক উল্টো দিকে যে গলিটি ঢুকে গিয়েছে, তাতে ৫০০ মিটার এগোতেই গাড়ি আটকে দিল পুলিশ। ৭৯ নম্বর গলির ঠিক মুখে। এখানেই তা হলে বাংলাদেশের গ্রাউন্ড জিরো!

ব্যারিকেডের সামনে ভিড় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের। গলির মুখে দাঁড়িয়ে সোজা তাকালে লেক ভিউ ক্লিনিক। তার ঠিক বাঁ পাশে, অর্থাৎ গলির মুখ থেকে চারটি আবাসন ছেড়েই ওই রেস্তোরাঁটি। গত শুক্রবারের পর থেকে যা ভগ্নাবশেষে পরিণত হয়েছে। গলির বাসিন্দা ছাড়া গ্রাউন্ড জিরোর আশেপাশে অন্য কারও যাওয়া বারণ।

সে দিনের সেই হামলার পিছনে কে রয়েছে, তা নিয়ে সরকারের ভিন্ন মত রয়েছে। কিন্তু ঢাকাবাসীরাই নন, ইদ উপলক্ষে যাঁরা গ্রামের বাড়ি ফিরেছেন, চিন্তিত তাঁরাও। যেমন জোয়েবায়দুর রহমান শোয়েব। ঢাকা থেকে বাপের বাড়ি বগুড়ায় গিয়েছেন শোয়েবের স্ত্রী ও ছেলে। বললেন, ‘‘অন্তত ছ’বার ফোন করে জানতে চেয়েছি, ওরা ঠিক আছে কি না।’’

আতঙ্কের এই নতুন চেহারাটা তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চায় ঢাকাবাসী।

Bangladesh terrorist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy