প্রতীকী চিত্র
এ যেন এক অন্য ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’!
লড়াইটা নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে সেনাবাহিনীর জঙ্গিঘাঁটি ভাঙা নয়। বরং সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে পড়শি দেশে ঢুকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগুনের সঙ্গে লড়াইয়ের।
যোদ্ধারাও সেনাবাহিনীর কেউ নন। তাঁদের উর্দি দমকল বাহিনীর।
রবিবার ভোরে সেই লড়াই দেখল ভারতের পেট্রাপোল এবং বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। আগুন লেগেছিল বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর গুদামে। বনগাঁ দমকল কেন্দ্রের একটি ইঞ্জিন গিয়ে বাংলাদেশ দমকলের সঙ্গে একযোগে সেই আগুন নেভাল।
ঘটনাটি বেনজির নয়। রাজ্য দমকল বিভাগের এক কর্তা জানান, আগেও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর সীমান্তে বাংলাদেশের দিকে আগুন লেগেছিল। সে বারেও সাহায্যের জন্য এ পার থেকে দমকল গিয়েছিল। ২০০৪ সালে পেট্রাপোল বন্দরের ট্রাক টার্মিনাসে আগুন নেভাতে এসেছিল বাংলাদেশ দমকলের একটি ইঞ্জিন। মানবিকতার খাতিরে প্রশাসনের কর্তাদের অনুমতি নিয়েই সীমান্ত পেরিয়ে এ ধরনের সাহায্য করা হয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বডি স্প্রে, মশা মারার স্প্রে, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক সামগ্রীতে ঠাসা বেনাপোলের ওই গুদামের দূরত্ব পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে মেরেকেটে এক কিলোমিটার। গুদামের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ভারতীয় পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক। আগুনে আতঙ্ক ছড়ায় দু’দিকেই। ফোন যায় বনগাঁ দমকল কেন্দ্রে। খবর দেওয়া হয় বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়কেও।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলতেই বনগাঁ দমকল কেন্দ্রের একটি ইঞ্জিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বেনাপোল যায়। ততক্ষণে অবশ্য সেখানে বাংলাদেশ দমকলের ১৩টি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। বনগাঁ দমকল কেন্দ্রের কর্তা সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল এ দিন ছুটিতে ছিলেন। কিন্তু খবর পেয়ে তিনি আরও একটি দমকল ইঞ্জিন নিয়ে বেনাপোলের দিকে রওনা দেন। তবে সেই ইঞ্জিনটি বাংলাদেশে ঢোকেনি। নো-ম্যানস ল্যান্ডে ইঞ্জিনটি রেখে বেনাপোলে যান সিরাজুল। ততক্ষণে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের কয়েক জন জনপ্রতিনিধিও ঘটনাস্থলে আসেন। সিরাজুল বলেন, ‘‘ডিভিশনাল অফিসার এবং মহকুমাশাসককে জানিয়ে মানবিক কারণেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’’
বেনাপোলে গিয়েছিলেন এ দেশের পণ্য আমদানির-রফতানিতে যুক্ত ব্যবসায়ীদের সংগঠন, ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীও। ফিরে এসে তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। গুদাম এলাকার সিসি ক্যামেরা লাগানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’’
বনগাঁ দমকল কেন্দ্রের উদ্যোগে খুশি বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, একেই বলে শিকড়ের টান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy