Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
International

যে ভাবে গুলি না চালিয়ে জঙ্গি দমনের অভিযান চালাল বাংলাদেশের বাহিনী...

গুলশনের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর হামলার পর থেকেই বাংলাদেশের জঙ্গি ডেরাগুলোতে চলছে পুলিশের একের পর এক অভিযান। গতকাল বাংলাদেশ পুলিশ অভিযান চালিয়েছে ঢাকার আশকোনা এলাকায়। সেই অভিযানটি কেমন ভাবে চালানো হয়েছে, তা এ বার সরাসরি জানালেন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অভিযানের সামনে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সবিস্তারে লিখেছেন ওই অভিযানের কথা।

ছানোয়ার হোসেন।

ছানোয়ার হোসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ২১:৩৯
Share: Save:

গুলশনের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর হামলার পর থেকেই বাংলাদেশের জঙ্গি ডেরাগুলোতে চলছে পুলিশের একের পর এক অভিযান। গতকাল বাংলাদেশ পুলিশ অভিযান চালিয়েছে ঢাকার আশকোনা এলাকায়। সেই অভিযানটি কেমন ভাবে চালানো হয়েছে, তা এ বার সরাসরি জানালেন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অভিযানের সামনে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সবিস্তারে লিখেছেন ওই অভিযানের কথা।

আরও পড়ুন- ফের সন্ত্রস্ত ঢাকা, এ বার হানা মহিলা মানববোমার

ছানোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘‘গতকাল ঢাকার আশকোনায় কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের জঙ্গি বিরোধী অভিযানটির বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এবং কৌশলগত পদ্ধতিতে অভিযান পরিচালনা করে সাফল্য পাওয়ার ঘটনা বিশ্বে একেবারেই বিরল। বিশ্বের সব দেশই অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে এই সব সমস্যা মেটায়। কারণ, জঙ্গি দমনে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতেই সবাই অভিযান চালিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ ছাড়া কোনও গত্যান্তর থাকে না। প্যারিস, বোস্টন, গুলশান, কল্যাণপুরের অভিযানে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হলেও গতকাল ওই পদ্ধতি অবলম্বন করা আমাদের উচিত হবে বলে মনে হয়নি। তিন জন নারী, তিন জন শিশু এবং এক জন কিশোরের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র তাক করার মত অদক্ষ এবং কাপুরুষ আমরা নই। তাই মাঝ রাতে আস্তানা ঘেরাও করার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় কিছু কৌশল প্রয়োগ করে এই অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। নিশ্চিত মৃত্যুর আতঙ্কে ভোগা জঙ্গিদের কাছাকাছি গিয়ে কথা বলার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। জঙ্গি-বিরোধী অভিযান পরিচালনার নানা পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের প্রশিক্ষণ থাকলেও সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতেই আমরা গতকাল সফলতা পেয়েছি। সে দিক দিয়ে বিবেচনা করলে গতকালের অভিযানটি শুধু মাত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। গতকাল থেকে নানা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ওই অভিযানের কৌশলগত ধাপগুলো জানার জন্য। যে সব কারণে এটি একটি বিশেষ অভিযান হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে: ১) দু’জন খুব গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গির স্ত্রী, তাঁদের আত্মসমর্পণের জন্য রাজি করানো, ২) সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী বোমা জামা) পরা নারী জঙ্গিদের সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, ৩) আলোচনার জন্য জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়া, ৪) কোনও গোলাগুলি ছাড়াই প্রায় ১৬ ঘন্টা ব্যাপী (২৩ ডিসেম্বর রাত ১১.৩০টা থেকে ২৪ ডিসেম্বের বিকেল ৩.৩০টা পর্যন্ত) একটানা জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, ৫) সর্বশেষ নারী জঙ্গি সবাইকে ধোঁকা দিয়ে গুটিকয়েক পুলিশকর্মীকে সুইসাইডাল বোমায় হতাহত করার পরিকল্পনা করে। সে ৭ বছরের একটি মেয়েকে (অপর এক জঙ্গির মেয়েকে) নিয়ে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আমরা শিশুটিকে একা এগিয়ে দিতে অনুরোধ করি এবং তাকে দু’হাত মাথার উপরে তুলে এগিয়ে আসতে বললে সে এক সময় বোতাম টিপে সুইসাইডাল ভেস্টটি ব্লাষ্ট করায়। কংক্রিট দেওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমরা প্রায় এক ডজন কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ (সোয়াট সহ) অল্পের জন্য বেঁচে যাই। তার পর সোয়াট সদস্যরা মেঝেতে পড়ে থাকা মারাত্মকভাবে আহত শিশুটিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ওই মেয়েটিকে সেই নারী জঙ্গি ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল। যাই হোক, মোস্তাফিজ-সাকিবের উইকেট পেলে আর তামিম-কায়েসরা সেঞ্চুরি করলে যদি কোটি মানুষের হৃদয় কেড়ে নিতে পারে, তবে এই কাউন্টার টেররিজম পুলিশের ঝুঁকিপূর্ণ সাফল্যও কোটি কোটি মানুষের মন জয় করবে বলে আমাদের বিশ্বাস (যদি না কারও চোখের কোনও রঙিন চশমায় দেশের সবুজকে কালো মনে হয়)। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবেসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করা আমাদের এই কাজে শুধু দেশপ্রেম আর পেশাদারিত্ব ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’’

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সরাসরি: ‘মাছ ধরতে শেখানো উচিত’, আক্রমণ দেবজিতের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE