Advertisement
২৩ মে ২০২৪

‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’-এর অপরাধের খতিয়ান শুনলে হাড় হিম হয়ে যাবে!

আল বদর নেতা মির কাসেম ১৯৭০ সালে ইসলামি ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। সেই সময়েই স্থানীয় মহামায়া ভবন দখল করে বানিয়েছিলেন টর্চার ক্যাম্প। পেয়েছেন তার পুরস্কারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:১৬
Share: Save:

আল বদর নেতা মির কাসেম ১৯৭০ সালে ইসলামি ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। সেই সময়েই স্থানীয় মহামায়া ভবন দখল করে বানিয়েছিলেন টর্চার ক্যাম্প। পেয়েছেন তার পুরস্কারও। সে বছরই ৭ নভেম্বর থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।

১৯৭১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই চট্টগ্রামে সংগঠিত হয় ‘ডেথ স্কোয়াড’ নামে পরিচিত আল বদর বাহিনী। শুরু হয় ভয়ঙ্কর সব অত্যাচারের পর্ব। মির কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৭১-এর ৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে আল বদর ও রাজাকারেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলে নির্যাতন কেন্দ্র। অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন ২৪ জন। নির্যাতনের পর হত্যার করা হয় আটজনকে। গোটা নির্যাতন পর্বেই কখনও সরাসরি কখনও পরোক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন কাসেম।

একাত্তরে তার নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় এক হিন্দুর মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে, তার নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। সেখানে অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়, যাদের লাশ পরে ফেলে দেওয়া হত চাক্তাই চামড়ার গুদাম সংলগ্ন কর্ণফুলি নদীতে।

এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল জসিম হত্যাকাণ্ড। ১৯৭১ সালে উদ-উল-ফিতরের পরে পরেই মির কাসেমের পরিকল্পনা মতো আলবদর বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের কোনও এক অজ্ঞাত জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে চরম নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ-সহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই অপরাধই শেষ পর্যন্ত ফাঁসির মঞ্চে ঠেলে দিল তাঁকে।

ট্রাইবুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে সেই ডালিম হোটেলকে বলা হয়েছে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’। ডালিম হোটেল ছাড়াও শহরের চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মহম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল এবং পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলে বদর বাহিনীর আলাদা ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল সে সময়।

ট্রাইবুলালের কাছে মির কাসেমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৪ অভিযোগ:

অভিযোগ ১

একাত্তরের ৮ নভেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ মির কাসেম আলির নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী চাক্তাই সাম্পান ঘাট থেকে মহম্মদ ওমর-উল-ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ করে। তাঁকে কোতোয়ালি থানার দোস্ত মোহম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিংয়ে চামড়ার গুদামে টর্চার সেলে এবং পরে পাঁচলাইশ থানার আসাদগঞ্জের সালমা মঞ্জিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর একটি গাড়িতে করে তাঁকে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জোর করে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাঁর মামার কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়।

অভিযোগ ২

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯ নভেম্বর দুপুর ২টোর দিকে মির কাসেম আলির নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আলবদর বাহিনী লুতফর রহমান ফারুক ও সিরাজকে চাক্তাই এলাকার বকশিরহাটে জনৈক সৈয়দের বাড়ি থেকে অপহরণ করে। এর পর তাঁদের ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লুতফর রহমান ফারুককে বাইরে নিয়ে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িগুলো চিহ্নিত করিয়ে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফারুককে আরও দু’তিন দিন ডালিম হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এর পর তাকে সার্কিট হাউজে নিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয় আলবদর। সেখানেও তার উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরে সেখান থেকে ছাড়া পান ফারুক।

অভিযোগ ৩

ওই বছর ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীকে ডবলমুরিং থানার কদমতলিতে তাঁর বাড়ি থেকে মির কাসেম আলির নেতৃত্বে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকেরা। তাকে ডালিম হোটেলের নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। দেশ স্বাধীন হলে ১৬ ডিসেম্বর সকালে ডালিম হোটেল থেকে জাহাঙ্গিরকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ ৪

১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর গভীর রাতে আজিজ কলোনি থেকে সাইফুদ্দিন খানকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁকেও প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ডিসেম্বরের ২ অথবা ৩ তারিখে বন্দিদের চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে জেলারের মাধ্যমে সাইফুদ্দিনের স্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। স্বামীকে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান সাইফুদ্দিন।

অভিযোগ ৫

১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটে নাগাদ মির কাসেম আলির নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী ওরফে জালাল জল্লাল নন্দন কানন এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে আব্দুল জব্বার মেম্বারকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে ১৭/১৮ দিন আটকে রেখে হাত ও চোখ বেঁধে নির্যাতন চলে। নির্যাতনের সময় জল খেতে চাইলে তাঁকে প্রস্রাব খেতে দেওয়া হয়। ১৩ ডিসেম্বর মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।

বিবেচিত হয়নি

২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল

বিবেচিত হয়নি

৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল

বিবেচিত হয়নি

ফাঁসি বহাল

বিবেচিত হয়নি

১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল

অভিযোগ ৬

একাত্তরের ২৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মির কাসেমের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় আলবদর সদস্যরা হারুন-অল-রশিদকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ ও হাত বেঁধে তাকে নির্যাতন করা হয়। পরে মির কাসেমের নির্দেশে তাকে চোখ-হাত বাঁধা অবস্থাতেই পাঁচলাইশের সালমা মঞ্জিলে আর একটি নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর সালমা মঞ্জিল থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ ৭

একাত্তরের ২৭ নভেম্বর মাগরিবের নামাজের পরে মির কাসেমের নির্দেশে ডবলমুরিং থানার ১১১ উত্তর নলাপাড়া থেকে মহম্মদ সানাউল্লাহ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও ইলিয়াসকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। মির কাসেমের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ নির্যাতন কেন্দ্রে আটক থাকার সময় তাঁরা আরও অনেককে আটক অবস্থায় দেখতে পান। এঁদের অনেককে আবার ডালিম হোটেল থেকে নিয়ে যেতেও দেখেন তাঁরা এবং পরে শুনতে পান যে বদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের মেরে ফেলেছে। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করার শর্তে মির কাসেমের নির্দেশে ৬ ডিসেম্বর হাবিবুর রহমান এবং ৯ ডিসেম্বর সানাউল্লাহকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ ৮

১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর রাত আড়াইটে নাগাদ মির কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা চাঁদগাঁও থানার সাবহানঘাটা মহল্লা ঘেরাও করে নুরুল কুদ্দুস, মহম্মদ নাসির, নুরুল হাসেম-সহ আরও কয়েক জনকে অপহরণ করে এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। পরে ভোরবেলায় ওই তিনজন-সহ আরও অনেককে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন জনকে ১০ দিন আটক রেখে নির্যাতন করা হয় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৬ ডিসেম্বর তারা ছাড়া পান।

অভিযোগ ৯

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ২৯ নভেম্বর ভোরে মির কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে চাঁদগাঁও থানার নাজিরবাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ খুড়তুতো-জেঠতুতো ভাই-সহ নুরুজ্জামানকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা। সেখানে তাদের আটকে রেখে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরে তাদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করা হয়।

অভিযোগ ১০

একাত্তরের ২৯ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে মির কাসেমের আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা নাজিরবাড়ি এলাকা ঘেরাও করে মহম্মদ জাকারিয়া, মহম্মদ সালাউদ্দিন ওরফে ছুট্টু মিয়াঁ, ইস্কান্দর আলম চৌধুরী, মহম্মদ নাজিম উদ্দিন-সহ আরও অনেককে অপহরণ করে এবং এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। পরে তাদের সবাইকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় নাজিমুদ্দিনকে পর দিন ছেড়ে দেওয়া হয়। সাত-আটদিন পর জাকারিয়াকে, ১১ অথবা ১২ ডিসেম্বর সালাউদ্দিন ওরফে ছুট্টু মিয়াঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সবশেষে ইস্কান্দর আলম চৌধুরী ১৬ ডিসেম্বর ছাড়া পান।

অভিযোগ ১১

১৯৭১ সালে ইদুল ফিতরের পরে পরেই মির কাসেমের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনও এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাঁকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হয়। আরও পাঁচ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ-সহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

অভিযোগ ১২

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের কোনও এক দিন মির কাসেমের আলবদর বাহিনীর সদস্যরা হিন্দু প্রধান হাজারি লেনের ১৩৯ নম্বর বাড়ি থেকে জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী এবং ১১৪ নম্বর বাড়ি থেকে রঞ্জিত দাস ওরফে লাঠুকে ও টুনটু সেন ওরফে রাজুকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পর দিন জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও লাঠু ও রাজুকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়। এই তিন জনকে অপহরণের সময় আলবদর বাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা অনেক দোকানপাট লুঠ করে এবং অন্তত আড়াইশো বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে অন্তত একশো হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়।

অভিযোগ ১৩

নভেম্বরের কোনও এক দিন আন্দরকিল্লার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম মোস্তফা কাঞ্চনের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন সুনীলকান্তি বর্ধন ওরফে দুলাল, তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও একজন কিশোর গৃহকর্মী। পথে চাক্তাই সাম্পানঘাটে পৌঁছলে মির কাসেমের নির্দেশে দুলালকে অপহরণ করে চাক্তাইয়ের দোস্ত মহম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিং-এর নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও অনেক সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় দুলালকে। পরে ১৪ ডিসেম্বর তাঁদের সবাইকে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে দুলালকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ ১৪

নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার নাজির আহমেদ চৌধুরী রোডে এজেএম নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। এক দিন গভীর রাতে মির কাসেম আলির নেতৃত্বে কয়েক জন আলবদর সদস্য ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা নাসিরুদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় এবং সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। ১৬ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে আরও এক-দেড়শো মানুষের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনকেও উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আত্মগোপন করেন মির কাসেম। পরে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময়, তাঁরই বদান্যতায় ফিরে আসেন প্রকাশ্যে। নানান পথে উপার্জন করতে শুরু করেন বিপুল অর্থ। জামাতে ইসলামের নেতা হয়ে ওঠেন। পরে হয়ে ওঠেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং অর্থ সরবরাহকারী।

তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা শুরু হওয়ার পর তা আটকাতে আমেরিকার এক লবিস্ট সংস্থাকে বিপুল অর্থ দিয়ে নিয়োগ করেন বলে অভিযোগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচার ঠেকাতে পারেননি।

গ্রেফতারি পরোয়ানা

জামাতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মির কাসেম আলির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইবুনাল।

ওই দিন বিকেলেই মতিঝিলে দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয়ের (দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন) থেকে তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

২০১৫ সালের ১৬ মে মির কাসেমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৬ মে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইবুনাল-১। এরপর মামলাটি ট্রাইবুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।

এর পর ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মির কাসেম আলিকে ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইবুনাল।

চূড়ান্ত রায়

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মির কাসেমের মৃত্যুদণ্ড এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন কাসেম।

আপিলের রায়ে একটা অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ছয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার, ইতিহাসের দায়শোধ

‘প্রখ্যাত’ মির কাসেমের ফাঁসিতে যথারীতি মর্মাহত পাকিস্তান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Executed Bangladesh Mir Quasem Ali hanged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE