Advertisement
০৪ মে ২০২৪
অভিযোগ রাজনৈতিক জুলুমের

সমস্যা রাজ্যের কানে তুলতে একজোট জেলার ছোট শিল্প

জমি কিনতে গিয়ে সিন্ডিকেটের জুলুম। ইন্সপেক্টর-রাজের জগদ্দল পাথর ঠেলে কর জমার হয়রানি। জেলায় ব্যবসা করতে গিয়ে এমন হাজারো সমস্যার চক্করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির। অথচ বারবার চেষ্টা করেও নিজেদের অভিযোগ নবান্নের উপরতলা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেনি তারা। তা সে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী যতই বলুন না-কেন।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

জমি কিনতে গিয়ে সিন্ডিকেটের জুলুম। ইন্সপেক্টর-রাজের জগদ্দল পাথর ঠেলে কর জমার হয়রানি। জেলায় ব্যবসা করতে গিয়ে এমন হাজারো সমস্যার চক্করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির। অথচ বারবার চেষ্টা করেও নিজেদের অভিযোগ নবান্নের উপরতলা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেনি তারা। তা সে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী যতই বলুন না-কেন। আর তাই এ বার ‘গলার জোর বাড়াতে’ বাধ্য হয়েই এক ছাতার তলায় জড়ো হচ্ছে জেলার বণিকসভাগুলি।

দেশের প্রাচীনতম বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের ছত্রচ্ছায়ায় তৈরি এই নতুন মঞ্চের নাম কনফেডারেশন অব ইস্টার্ন চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। হাওড়া চেম্বার অব কমার্স, দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স, আসানসোল চেম্বার অব কমার্স, রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স, মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স-সহ বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের বণিকসভাগুলি এই মঞ্চের সদস্য। তা ছাড়া এখানে যোগ দিয়েছে ঝাড়খণ্ড, বিহার ও অসমের বণিকসভা। রয়েছে নেপাল ও ভুটানের বণিকমহলও।

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলায় জেলায় শিল্প গড়ার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেছেন, সেখানে কল-কারখানা তো তৈরি হবেই, সেই সঙ্গে লগ্নি করবে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বিশেষত ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর জোর দেওয়ার কথা বারবার বলেন তিনি। শিল্পমহলের সামনে বিভিন্ন মঞ্চে একই কথা বলেছেন শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এমনকী নয়া শিল্পনীতি ঘোষণার সময়ে জেলায় শিল্প গড়ার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু জেলার শিল্পমহলের অভিযোগ, তাদের অভিজ্ঞতা ঠিক এর উল্টো।

তাদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ, জেলায় ছোট-মাঝারি শিল্পের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। তা সে জমি কেনা বা কারখানায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জুলুমই হোক, বা কর আদায়ের বিষয়ে আধিকারিকদের দাদাগিরি। আবার হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও এই সমস্ত অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী বা অমিতবাবুর কানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনও জেলা বণিকসভার একক গলা যায়ই না ওই পর্যন্ত। আর এই দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতেই এ বার এই নয়া মঞ্চ গড়ার সিদ্ধান্ত।

বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অলোক রায়ের দাবি, এই মঞ্চ কাজ করবে পরামর্শদাতা হিসেবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সমস্যা প্রশাসনের কানে তুলে দেবে তারা। তাঁর কথায়, “যে-কোনও সমস্যাই একা সামলানো কঠিন। তাই সমস্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতেও একজোট হওয়া দরকার।” উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেঙ্গল চেম্বারের দফতরেই আলোচনায় বসেছিলেন বিভিন্ন বণিকসভার ৪৩ জন প্রতিনিধি। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই নতুন মঞ্চ তৈরি হয় সেখানে।

কতখানি কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে তাঁরা এক ছাতার তলায় এসেছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট বিভিন্ন জেলার বণিকসভার প্রতিনিধিদের বয়ানেই। যেমন অনেকে বলছেন, বণিকসভার বহু অনুষ্ঠানে কর- কাঠামো সরলীকরণ ও স্বচ্ছ কর আদায় ব্যবস্থার ঢাক পেটান অমিতবাবু। কিন্তু আসলে ইন্সপেক্টর-রাজ অবাধে চলছে।

ডিস্ট্রিক্ট চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট রঞ্জিত মাঝির অভিযোগ, কর সংক্রান্ত খুঁটিনাটি ছোট ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। সেই কারণে সরকারি আধিকারিকদের হাতে চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হয় তাঁদের। তাঁর অভিযোগ, পুজো বা উত্‌সবের সময়ে বাড়তি কর্মী নিতে হয়। হয়রানি পোহাতে হয় তা নিয়ে। এমনকী লক্ষাধিক টাকা ঘুষ দিয়েও নিস্তার মেলে না। হাওড়া চেম্বারের প্রেসিডেন্ট শঙ্কর কুমার সান্যাল বলেন, “ইন্সপেক্টর-রাজ বন্ধ হয়নি। প্রায়ই ছোট ব্যবসায়ীদের অজ্ঞতার সুযোগ নেন কর আদায়কারীরা।”

উঠছে সিন্ডিকেট-সমস্যার কথাও। দুর্গাপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রমাপ্রসাদ হালদারের অভিযোগ, “কারখানার জন্য ছোট জমি কিনতে গেলেও বিশাল অঙ্কের টাকা হাঁকছে সিন্ডিকেট। লাভ হচ্ছে না পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়ে।” তাঁর দাবি, লাইসেন্স নবীকরণের বিষয়েও প্রশাসন উদাসীন। যেমন, ২০১২ সাল থেকে দুর্গাপুরে স্টিলের আসবাব নির্মাতাদের ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ হচ্ছিল না। প্রশাসনের ঢিলেমিতে মিলছিল না পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র। সম্প্রতি বিস্তর দৌড়ঝাঁপের পরে তা পাওয়া গিয়েছে। নতুন মঞ্চের বাড়তি ‘গলার জোরে’ এই সমস্ত সমস্যা সরকারের সর্বোচ্চ স্তরেও পৌঁছবে বলে তাঁদের আশা।

অবশ্য শুধু সমস্যা নয়। ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা ভিন্‌ রাজ্যে লগ্নির ক্ষেত্রেও ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিকে নয়া মঞ্চ দিশা দেখাবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলে। কোথায় কী ধরনের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে, সে বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে তারা, বিশেষত অন্য রাজ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য। অলোকবাবুর দাবি, কোনও সদস্য নিজের রাজ্যের বাইরে লগ্নি করার আগে তার প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজে সাহায্য করবে এই মঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE