ফাইল চিত্র।
অতিমারির মধ্যেও এক সময় ভারতের শেয়ার বাজার নজিরবিহীন ভাবে ৬১ হাজার (সূচক সেনসেক্স) পার করে। অর্থনীতির বেহাল দশাকে কার্যত উপেক্ষা করা সেই দৌড়ে অবাক হয়েছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার আগ্রাসন ছবিটা পাল্টে আচমকা অস্থির করে তোলে বাজারকে। এতটাই যে, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষায় উঠে এসেছে— চলতি বছরে (২০২২) নিট পতনের মুখ দেখতে পারে এ দেশের শেয়ার সূচক। ২০১৫ সালের পরে এই প্রথম। যার অন্যতম কারণ, ভারত থেকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুঁজি তুলে নেওয়ার হিড়িক।
রিপোর্টে ইঙ্গিত, করোনার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে জোগানে আঘাত করেছে। ফলে সারা বিশ্ব চড়া মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় কাহিল। তাতে রাশ টানতে সুদ বৃদ্ধির যে অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, তার কাজ আসলে চাহিদা কমানো। যা করোনার কবল থেকে বার হতে চাওয়া অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আটকে আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে নামাতে পারে। ফলে শেয়ার বাজার নড়বড়ে প্রায় সব দেশে। ভারতেও একই অবস্থা। যে কারণে মাঝেমধ্যে বড় উত্থান হলেও, সূচকের মোটের উপরে অস্থির থাকার আশঙ্কা। ঠিক যেমন টানা তিন দিন উত্থানের পরেই মঙ্গলবার ৩৫৯.৩৩ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স নেমেছে ৫৫,৫৬৬.৪১ অঙ্কে। যার কারণ, আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রকাশের আগে সতর্ক লগ্নিকারীদের হাতের শেয়ার বেচে মুনাফা তুলতে নামা। বিকেলে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, আশঙ্কা সত্যি হচ্ছে। বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়েছে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। সংক্রমণ কমার পরে অতিমারির বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় অক্টোবর-ডিসেম্বরের ৫.৪% বৃদ্ধির হারে আরও গতি আসার কথা ছিল পরের তিন মাসে। কিন্তু সেটা হয়নি।
তিরিশ জন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে করা রয়টার্সের সমীক্ষা বলেছে, বৃদ্ধি ধাক্কা খেলে কমতে পারে শিল্প সংস্থাগুলির আয় এবং মুনাফা। তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বাজারে।
গত বছর সেনসেক্স ৬১,৭০০ পেরিয়ে রেকর্ড উচ্চতায় চড়ে। এ বছর ১৮ জানুয়ারি লেনদেন চলাকালীনও তা পৌঁছেছিল ৬১,৪৭৫.১৫-এ। সেখান থেকে প্রায় ১০% পড়েছে। রিপোর্ট বলছে, মাঝেমধ্যে উঠলেও পতনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে আগামী তিন মাস। বাজার থাকবে চূড়ান্ত অস্থির। বছরের শেষে সেনসেক্স থাকতে পারে ৫৬ হাজারের আশেপাশে। সমীক্ষায় যোগ দেওয়া বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গত বছরের এপ্রিল থেকে (মাঝে একটি মাস বাদে) ভারতে নাগাড়ে শেয়ার বেচছে বিদেশি সংস্থাগুলি। কয়েক মাস তা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা। চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত তারা নিট ২১৪০ কোটি ডলারের (প্রায় ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা) শেয়ার বিক্রি করেছে। এর আগে ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার সময় করেছিল ১২০০ কোটি ডলার। চলতি মাসেও ভারতের শেয়ার বাজার ৪৯,০৩৬.৮২ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি হারিয়েছে। এটাই সূচকের পতনের অন্যতম কারণ। রিপোর্টে পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে সেনসেক্স ফের ৬০,০০০ ছুঁতে পারে। তার আগে অস্থিরতা কমার সম্ভাবনা কম।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy