E-Paper

আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস চড়লেও দুশ্চিন্তা কৃষি

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, কৃষিতে কয়েক বছর ধরেই বৃদ্ধি কম। কারণ, অর্থনীতি যত বড় হয় কৃষিতে খরচ অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় আনুপাতিক ভাবে কমে।”

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৫
An Image Of Agriculture

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চলতি অর্থবর্ষের জন্য দেশের জিডিপি বৃদ্ধির সরকারি পূর্বাভাস আগের ৭.২% থেকে বাড়িয়ে ৭.৩% করেছে কেন্দ্র। যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ৭% অনুমানের থেকেও বেশি। জানিয়েছে, কল-কারখানায় উৎপাদন থেকে বিদ্যুৎ, খনন, নির্মাণ-সহ প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রের বৃদ্ধিই থাকতে পারে ৬ শতাংশের উপরে। ব্যতিক্রম শুধু কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড। যেখানে পূর্বাভাস নেমেছে ১.৮ শতাংশে। আর ঠিক এখানেই দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে বলে মনে করছে সংশ্লষ্ট মহল। তাদের মতে, এতে স্পষ্ট কৃষি উৎপাদনে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা। এখন প্রশ্ন হল, কতটা। খাদ্যপণ্যের জোগান ঠিক কত দূর সমস্যায় পড়বে এবং তাতে দাম আরও চড়লে মানুষের ভোগান্তি আর কতখানি বাড়বে। সেই সঙ্গে গ্রামীণ রোজগার, চাহিদা এবং সার্বিক ভাবে অর্থনীতিকেও তার মাসুল গুনতে হতে পারে। অন্য অংশের প্রশ্ন, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যখন এই গতিতে এগোবে, তখন তার শরিক হবে তো সমাজের প্রতিটি অংশ? তাল মিলিয়ে তৈরি হবে কাজ?

লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় পরিংখ্যান দফতর বৃদ্ধির এই পূর্বাভাস প্রকাশের পরে প্রত্যাশিত ভাবেই তাকে মোদী জমানার সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে কালক্ষেপ করেনি বিজেপি। অর্থ মন্ত্রক এক্স-এ লিখেছে, গত ন’বছরের বিভিন্ন সংস্কার অর্থনীতিকে পোক্ত এবং সুরক্ষিত করে আগামী বছরগুলির জন্য ধারাবাহিক ভাবে ভাল বৃদ্ধির জমি গড়ে দিয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশ এর পরেও মূল্যবৃদ্ধি এবং কাজহীন আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করছেন। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, কৃষিতে কয়েক বছর ধরেই বৃদ্ধি কম। কারণ, অর্থনীতি যত বড় হয় কৃষিতে খরচ অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় আনুপাতিক ভাবে কমে। তবে এটা তত্ত্বকথা। ভারতে ৬৬ শতাংশই কৃষি নির্ভর। কিন্তু তার থেকে আয় হয় ১৫%-১৬%। উৎপাদন শিল্পের মতো ক্ষেত্রে যদি চাকরির সুযোগ সে ভাবে বাড়ত, তা হলে কৃষি থেকে সেখানে মানুষ সরতে পারতেন। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে আর্থিক বৃদ্ধির একটা বড় অংশ হচ্ছে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে। ফলে কাজ তেমন তৈরি হচ্ছে না। কৃষিতে যাঁরা আটকে থাকছেন, তাঁদেরও আর্থিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে।’’

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, কৃষি প্রত্যাশিত হারে না বাড়লেও ২০১১-১২ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে সামগ্রিক ভাবে ভারতের জিডিপি চলতি অর্থবর্ষে দাঁড়াতে পারে ১৭১.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধি ধরলে বর্তমান দরে ২৯৬.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা বা প্রায় ৩.৫৭ লক্ষ কোটি ডলার (ডলারের দাম ৮৩ টাকা ধরে)। সেই নিরিখে বৃদ্ধির হার ৮.৯%। গত বার ছিল ১৬ শতাংশের বেশি। চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধির মুখ দেখতে পারে নির্মাণ, আতিথেয়তা শিল্প-সহ পরিষেবা ক্ষেত্র।

পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মতে, শুধু পরিষেবার উপর ভর করে অর্থনীতি এগোলে মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে তার জ্বালানি ফুরোতে পারে। তখন পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। তার উপর গত অর্থবর্ষে যেখানে কৃষিতে বৃদ্ধি ছিল ৪%, সেখানে এ বার তার ২ শতাংশের নীচে নামার পূর্বাভাস দুশ্চিন্তার। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত, কৃষি উৎপাদন কমলে মূল্যবৃদ্ধির মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয়ত, কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র জিডিপি-র ১৫% জুড়ে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষকে কাজ জোগায়। ফলে তার বৃদ্ধি কমা মানে কাজ হারানো। তৃতীয়ত, কৃষি কার্যত শিল্পকেও বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।’’ রাজেন্দ্রর মতে, পরের দফার পূর্বাভাস সামনে আনার আগে এই সব বিষয়ে কেন্দ্রের নজর দেওয়া উচিত।

মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস দেশের অর্থনীতির এমন সম্ভাবনা নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও তাদের মতে, চাহিদার বেশির ভাগটাই তৈরি হয়েছে উচ্চবিত্তদের হাত ধরে। সমাজের সব স্তরে বিক্রি বাড়েনি। তা না হলে অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা থাকবেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ২০২৪-এ ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.২%। তবে অনিয়মিত বৃষ্টির জেরে কৃষিতে ধাক্কার আশঙ্কা জানিয়েছে তারাও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

agriculture Farmers Indian Econo India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy