Advertisement
১৯ মে ২০২৪
আশঙ্কা গাড়ি শিল্পের

দূষণ নীতির জেরে ধাক্কা খাবে বিক্রি

গত অর্থবর্ষে (২০১৫-’১৬) দেশে যাত্রী গাড়ির বিক্রি বেড়েছে পাঁচ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। কিন্তু আগামী দিনের জন্য শিল্পকে নিশ্চয়তা দিতে পারল না এই পরিসংখ্যান। কারণ কেন্দ্রের দূষণ নীতির জেরে বিক্রি ধাক্কা খেতে পারে, এই আশঙ্কায় চলতি অর্থবর্ষে পূর্বাভাস প্রায় অর্ধেকে নামাল গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

গত অর্থবর্ষে (২০১৫-’১৬) দেশে যাত্রী গাড়ির বিক্রি বেড়েছে পাঁচ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। কিন্তু আগামী দিনের জন্য শিল্পকে নিশ্চয়তা দিতে পারল না এই পরিসংখ্যান। কারণ কেন্দ্রের দূষণ নীতির জেরে বিক্রি ধাক্কা খেতে পারে, এই আশঙ্কায় চলতি অর্থবর্ষে পূর্বাভাস প্রায় অর্ধেকে নামাল গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম। ১২% থেকে সোজা ৬-৮ শতাংশে। তাদের যুক্তি, দূষণ ছড়ানোর বড় কারণগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। বরং পুরো দায় গাড়ি শিল্পের উপর চাপিয়ে যে সব নীতি প্রণয়ন করছে কেন্দ্র, তাতে মার খাবে ব্যবসা।

গাড়ি শিল্পের দাবি, দূষণ রোধের প্রয়োজনীয়তা মেনে তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু তেল সংস্থাগুলিই উপযুক্ত জ্বালানি দিতে পারছে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬-’১৭ সালে গাড়ি বিক্রি ১২% বাড়ার পূর্বাভাস মার্চে কমিয়ে ১১% করেছিল সিয়াম। কিন্তু শুক্রবার ২০১৫-’১৬ সালে ব্যবসার খতিয়ান প্রকাশের সময় সংগঠনের ডেপুটি ডিরেক্টর সুগত সেন জানান, চলতি অর্থবর্ষে তা ৬-৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে তাঁদের ধারণা।

তবে সিয়ামের হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে দেশে যাত্রী গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধির হার গত ৫ বছরের মধ্যে সব থেকে বেড়েছে (৭.৮৭%)। বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে তা ১১.৫১%। দু’চাকা ও তিন চাকার ক্ষেত্রে ৩% ও ১%।

পূর্বাভাস কমাতে গিয়ে দূষণ রোধের যে সব নীতির কথা তুলেছে সিয়াম তার মধ্যে আছে, রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় ডিজেল গাড়িতে ২.৫-৪% পর্যন্ত সেস বসানো। ওই অঞ্চলে ২০০০ সিসি-র বড় গাড়ির বিক্রি সুপ্রিম কোর্টের নিষিদ্ধ ঘোষণা। ১০ লক্ষ টাকার বেশি বিলাসবহুল গাড়িতে সরকারের ১% কর আরোপ। সিয়ামের মতে, বিশেষত ডিজেল গাড়ি কেনা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দেশের সর্বত্র যার প্রভাব ছড়ানোর আশঙ্কা।

সুগতবাবুর অভিযোগ, বিজ্ঞান -সম্মত ভাবে দূষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। দিল্লির সরকারের হয়ে আইআইটি-কানপুরের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২% দূষণের জন্য দায়ী গাড়ি শিল্প। আবার মোট যাত্রী-গাড়ির ৩০% ডিজেল গাড়ি। অর্থাৎ, ডিজেলচালিত গাড়ি থেকে দূষণ আরও কম। দূষণের মূল জায়গাগুলি রুখতে যথাযথ নীতি না নেওয়ার অভিযোগ মারুতি-সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গবের -ও। তাঁর মতে, ‘‘নতুন গাড়ি উন্নত প্রযুক্তির। বরং বছরভর পুরনো গাড়ি বদলে জোর দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘৬ লক্ষ ডিজেল গাড়ির প্রায় ২ লক্ষ ‘ভারত স্টেজ ১’ মাপকাঠির চেয়েও পুরনো। সেগুলি ‘ভারত স্টেজ ৪’ (ইউরো-৪)-এর চেয়ে ছ’গুণ বেশি দূষণ ঘটায়।’’ দিল্লির অটো এক্সপোয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়িও পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দেন। পরে বাজেটে তেমন কিছু না দেখে হতাশ হয় গাড়ি শিল্প।

দূষণ রোধে গাড়ি শিল্প কিছু করছে না, এই যুক্তিও মানতে নারাজ সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একেবারে শূন্য থেকে ইউরো-৪ পর্যন্ত মাপকাঠি পূরণ করেছে সকলে। কিন্তু ভারতের তেল সংস্থাগুলিই এখনও তেমন ভাবে ইউরো-৪ সহায়ক তেল দিতে না পারায় দেশের সর্বত্র তা চালু করা যায়নি।’’ এ ছাড়া, তাঁর দাবি, ডিজেল প্রযুক্তির জন্য একটি ধাপ থেকে (ধরা যাক ইউরো-৫ থেকে ইউরো-৬) পরের ধাপে যেতে সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্পের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ।

পাশাপাশি সিয়ামের এটাও যুক্তি, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতেই বিশ্ব উষ্ণায়নের খপ্পরে পড়েছে। আর এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে ডিজেল গাড়িই ভরসা। কারণ, ডিজেল গাড়িতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ২০-২৫% কম।

সুগতবাবুর মতে, ভারতের গাড়ি শিল্পই বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত উন্নত ও শুদ্ধ জ্বালানির প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে। কিন্তু ডিজেল গাড়িতে নিষেধাজ্ঞা চাপানো বা যথার্থ দূষণ নীতির অভাব বিক্রি কমাবে। মার খাবে উন্নত প্রযুক্তির গবেষণা। আখেরে ভুগবে দেশের উৎপাদন শিল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE