ব্যাঙ্কে বৈপরীত্য।
এক দিকে, বাড়ি বসে ব্যাঙ্কিংয়ের সুবিধা দিতে আরও বেশি করে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাত ধরছে ব্যাঙ্কগুলি। চেষ্টা করছে গ্রাহকদের যত কম সম্ভব শাখায় টেনে আনার। তার জন্য এমনকী নিখরচায় ডিজিটাল সই গ্রহণের পরিষেবাও চালু করছে তারা। অথচ অন্য দিকে, সেই সমস্ত ব্যাঙ্কই আবার চেক বা নগদ টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এটিএমে। ফলে অন্য কাজ শিকেয় তুলে ব্যাঙ্কে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রাহকেরা।
ব্যাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ কমছে চেকের ব্যবহার। এটিএমে তা জমার সুবিধা বন্ধ করা মূলত সেই কারণেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ নিয়ে অভিযোগ উঠছে বিস্তর। এবং ডিজিটাল রথের সওয়ারি হতে গিয়ে এ ক্ষেত্রে সেখানে এমন হ্যাঁচকা পিছুটান কেন, সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তরও দিতে পারছে না ব্যাঙ্কগুলি।
সমস্ত গ্রাহকের জন্য ডিজিটাল সই (ই-সাইন) চালুর কথা ঘোষণা করেছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। তাদের দাবি, এ বিষয়ে দেশে তারাই প্রথম। এটি চালু হওয়ায় ব্যাঙ্কে নিজে হাজির হয়ে কলমে সই করার বদলে কিছু কাজের জন্য তা অনলাইনেই করতে পারবেন গ্রাহক। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সুবিধা চালু হবে মাসখানেকের মধ্যে। শর্ত একটিই। পরিষেবা পেতে গ্রাহকের আধার কার্ড থাকা জরুরি। কারণ, তার ভিত্তিতেই গ্রাহককে নিজের ডিজিটাল সই নথিভুক্ত করাতে হবে ব্যাঙ্কের কাছে।
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের রিটেল বিজনেস প্রসেস বিভাগের কর্তা পঙ্কজ শর্মা জানান ‘‘চারটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সই চালু করছি। সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা, ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন, ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা ও গ্রাহকের নমিনির নথিভুক্তি। পরের লক্ষ্য, ধীরে ধীরে সমস্ত লেনদেনেই ডিজিটাল সই চালু করা।’’ যাঁরা সই করতে পারেন না, তাঁদেরও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল সই (আঙুলের ছাপ) নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি সংস্থা ই-মুদ্রার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা।
সুতরাং অ্যাকাউন্ট খোলা, নমিনি করার মতো কাজের জন্যও ব্যাঙ্কে কড়া নাড়ার প্রয়োজন আর থাকছে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পরে ওই একই পথে হাঁটবে বাকি ব্যাঙ্কগুলি। শনিবারই যেমন মোবাইল অ্যাপ-সহ বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক।
এ ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাত ধরে গ্রাহকদের জন্য বাড়ি বসে পরিষেবা পাওয়ার সুবিধা করে দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। বিশেষত এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে দড় প্রতিষ্ঠানগুলি। প্রযুক্তির ব্যবহারে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে আসার বাধ্যবাধকতা কমাতে চাইছে তারা।
অথচ সেই এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানই আবার এটিএমে চেক বা নগদ জমার সুবিধা তুলে দিয়েছে সম্প্রতি। ফলে বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের ছুটতে হচ্ছে শাখায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এখন চেকে লেনদেন দ্রুত কমে এসেছে। তা ছাড়া, সমস্যা দেখা দিচ্ছে সময় মতো ওই সব চেক এটিএম থেকে সংগ্রহ করায়।
ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সিএমডি এবং ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ ভাস্কর সেনও বলেন, ‘‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ব্যাঙ্কগুলির গ্রাহকদের মধ্যে চেকের ব্যবহার কমেছে। তাঁরা নেট মারফত টাকা দেওয়া-নেওয়ায় বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এখনও চেকের ব্যবহার যথেষ্ট। তাই তারা চট করে ওই পরিষেবা বন্ধ করবে বলে মনে হয় না।’’
ব্যাঙ্কিং মহল এই যুক্তি দিলেও, অনেক গ্রাহকের প্রশ্ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির দৌলতে যখন ধীরে ধীরে ব্যাঙ্কমুখো হওয়ারই আর দরকার পড়ছে না, তখন শুধু চেক বা নগদ জমা দিতে সেখানে টেনে নিয়ে যাওয়া আসলে পিছু হাঁটা নয় কি? যাঁর বাড়ি বা কর্মস্থল থেকে ব্যাঙ্কের শাখা দূরে, তাঁকে অযথা ওই হয়রানির মুখে ঠেলে দেওয়ার মানে কী? অনেকের আবার অভিযোগ, এটিএম থেকে চেক বা নগদ ভরা খাম সংগ্রহের দায়িত্ব ব্যাঙ্ক নিজে না-নিয়ে তৃতীয় পক্ষের হাতে ছাড়াতেই বিপত্তি। তাতে সময়ে চেক পৌঁছচ্ছে না। উত্তরে সরাসরি মন্তব্যে রাজি হয়নি ব্যাঙ্কগুলি। ফলে গ্রাহকদের শাখামুখো না-করা নিয়ে তাদের কৌশল এখনও কিছুটা বৈপরীত্যে ভরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy