এক দিকে সিন্ডিকেটের চোখরাঙানি। অন্য দিকে মন্দা বাজার। এই সাঁড়াশি চাপ থেকে বাঁচতে মরিয়া রাজ্যের নির্মাণ শিল্প এ বার দ্রুত ঘর গোছাতে নেমেছে। আর সেই কাজে হাত দিয়েই নতুন প্রজন্মের আবাসন নির্মাতারা বুঝেছেন, আগে নিজেদের কপাল থেকে ‘অসৎ’ তকমা মোছা কতটা জরুরি। যে কারণে নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাইয়ের যুব শাখার দাবি, পুলিশ-প্রশাসন ও ক্রেতার কানে তাঁদের কথা পৌঁছে দিতে এখন সবচেয়ে আগে ভাবমূর্তি তৈরি করার লক্ষ্যে এগোতে হবে।
এমনকী সমস্ত দাগ মুছে স্বচ্ছ ও সৎ ভাবে ব্যবসা করার বার্তা যে শুধুমাত্র কোনও সংস্থা বা ব্র্যান্ড হিসেবে দিয়ে লাভ হবে না, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে। ক্রেডাই বেঙ্গল যুব শাখার প্রধান হর্ষ জৈন জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে পুরো নির্মাণ শিল্পের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল করে তোলা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ডেভেলপার মানেই অসৎ ব্যবসায়ী— এই ধারণার বদল ঘটাতে না পারলে এই শিল্পের সমস্যাগুলি কোনও ভাবেই সকলের সামনে তুলে ধরা সম্ভব নয়।’’
বস্তুত, দেশ জুড়েই এখন নির্মাণ শিল্প ধুঁকছে। বিশেষত এ রাজ্যে অফিস ও আবাসন, দু’টি ক্ষেত্রেই চাহিদা তলানিতে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের হিসেব বলছে, শুধু কলকাতাতেই ৩৩.২% অফিসের জায়গা খালি পড়ে। ক্রেতা নেই। আবাসনেও চাহিদা কমেছে ৩০%।
আর সিন্ডিকেটের দাপটে তলানিতে ঠেকা সেই বাজারের সমস্যা একলপ্তে বেড়েয়েছে আরও কয়েক গুণ। সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ, সিন্ডিকেটের হুজ্জতিতে প্রকল্পের গুণমান যেমন মার খাচ্ছে, তেমনই বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। যার সব থেকে বেশি মাসুল দিচ্ছেন ক্রেতা। প্রতি বর্গফুটে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। কারণ, বাড়ির দামের মধ্যেই ঢুকে পড়ছে সিন্ডিকেটের ‘দাদাগিরি ট্যাক্স’।
এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরলেন ক্রেডাইয়েরই এক সদস্য। তাতে এক নির্মাণ ব্যবসায়ী নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আবাসন প্রকল্পের উৎপাদন খরচ একটি সীমারেখার মধ্যে বাঁধতে চেয়েছিলেন। তাই এক ইঁটখোলার মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেন, পুরো উৎপাদনই কিনে নেবেন বলে। বদলে ছাড় মিলবে। দাম পড়বে ইঁট প্রতি সাড়ে চার টাকা। কিন্তু গোটা পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে তার পরেই সিন্ডিকেটের নিদান আসে, ওই ব্যবসায়ীকে ইঁট কিনতে হবে তাদের থেকেই। সেটাও ৯ টাকা দামে। সিন্ডিকেটকে চটিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না বুঝে তা মেনে নেন ওই নির্মাতা। পরিবর্তে, ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটে ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেন। অর্থাৎ সিন্ডিকেটের পকেট ভরতে দাম চোকালেন ফ্ল্যাটের ক্রেতারাও।
তবে এ রকম শোষণের ঘটনা প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয় না বলেই মনে করছে ক্রেডাই। কারণ, প্রশাসনের একাংশ নির্মাতাদের সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করে না। ক্রেতাদের কাঠগড়াতেও দাঁড়াতে হয় তাঁদেরই। তাই এ বার নিজেদের ভাবমূর্তি আমূল বদলে দিয়ে সেই সব ধারণাই পাল্টাতে বদ্ধপরিকর নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা।
যে লক্ষ্যে হাঁটতে নির্মাণ শ্রমিকদেরই পরোক্ষে বিপণন দূত বেছে নিয়েছে ক্রেডাই। হর্ষ জানান, শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন স্তরের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দিনমজুরি ফেলে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব নয় বলে যে প্রকল্পে তাঁরা কাজ করছেন, সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ক্রেডাই। শংসাপত্র পাওয়া শ্রমিক দক্ষতার নিরিখে নিজের মজুরি বাড়িয়ে নিতে পারবেন। থাকছে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিমার ব্যবস্থাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy