Advertisement
E-Paper

বাজেটের চ্যালেঞ্জ সব প্রকল্পে টাকা সংস্থান

খয়রাতি হবে না। হবে না নিছক জনমোহিনী বাজেটও। কিন্তু শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি, পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। সব চাষের জমিতে পৌঁছবে সেচের জল। তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর, ১০০টি নতুন শহর। এ সবের সঙ্গে থাকবে সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, মাদ্রাসার আধুনিকীকরণ ইত্যাদি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৭

খয়রাতি হবে না। হবে না নিছক জনমোহিনী বাজেটও। কিন্তু শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি, পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। সব চাষের জমিতে পৌঁছবে সেচের জল। তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর, ১০০টি নতুন শহর। এ সবের সঙ্গে থাকবে সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, মাদ্রাসার আধুনিকীকরণ ইত্যাদি। বিপুল জনাদেশ নিয়ে মসনদে বসা নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতির তালিকা আক্ষরিক অর্থেই নেহাত ছোট নয়।

কেন্দ্রের নতুন সরকার অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাবে বলে আশায় বুক বেঁধেছে শিল্পমহল। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি সমস্যার সমাধানের দিকে হাপিত্যেশ করে চেয়ে আছেন সাধারণ মানুষ। অর্থনীতির হাল ফেরাতে দাবি উঠছে পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজার। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। এত সব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আসবে কোথা থেকে? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেই সকলের চোখ এখন বাজেটের দিকে।

মোদী সরকারের প্রথম বাজেট তৈরি করতে গিয়ে টানাটানির সংসারে সব প্রকল্পে টাকার সংস্থান করাই যে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, তা বিলক্ষণ জানেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমানোর সুযোগ নেই। বরং উল্টে তা কিছুটা বাড়ানো হবে বলেই অর্থ মন্ত্রক সূত্রে ইঙ্গিত। কারণ, পরিকল্পনা খাতে যে-ব্যয় হয়, তা-ই সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও নতুন পরিকাঠামো তৈরির কাজে লাগে। তাই মোদী সরকার যেখানে যত দ্রুত সম্ভব বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে চাইছে, সেখানে পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ না-কমিয়ে তা বাড়ানো উচিত বলেই অর্থনীতিবিদদের অভিমত।

তাঁদের অনেকে মনে করেন, এ জন্য প্রয়োজনে রাজকোষ ঘাটতি সামান্য বাড়লেও ক্ষতি নেই। গুজরাত-মডেলের জোরালো সমর্থক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অরবিন্দ পানাগড়িয়ার দাবি, “সরকার যদি পরিকাঠামো তৈরির জন্য ও লগ্নির সুযোগ তৈরিতে বেশি অর্থ ব্যয় করে, সে ক্ষেত্রে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা এমন কোনও পবিত্র সীমারেখা নয় যে, তা ভাঙা যাবে না।”

জেটলির সমস্যা হল, মন্দার জেরে কর বাবদ আয় প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। তাঁর পক্ষে আয়করও এই মুহূর্তে বাড়ানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া, বৃদ্ধির হার তলানিতে চলে গিয়েছে। ফলে শিল্প সংস্থার উপরে কর বাড়ানোও সম্ভব নয়। তাই বাড়তি অর্থ কোথা থেকে আসবে, তার উত্তর মিলছে না।

গত বাজেটে ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের জন্য পরিকল্পনা খাতে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অন্তর্বর্তী বাজেটে এ বছরের জন্য একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলেন তিনি। এক পয়সাও বরাদ্দ বাড়াননি। কিন্তু সেখানেই চাতুরি করেছিলেন চিদম্বরম। গত বছর ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও খরচ করেছিলেন অনেক কম। এমন কার্পণ্য দেখিয়েছিলেন যে, বাস্তবে ব্যয় ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৩২ কোটিতে নেমে আসে। ফলে রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিলেও কার্যক্ষেত্রে তা আরও কমে ৪.৫ শতাংশে নেমে গিয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রে ইঙ্গিত, জেটলি তাঁর বাজেটে পরিকল্পনা খাতে অন্তর্বর্তী বাজেটের তুলনায় অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ করবেন। যা প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি। এটা সত্যি হলে কার্যক্ষেত্রে তাঁকে গত বছরের তুলনায় পরিকল্পনা খাতে ৯০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি অর্থের সংস্থান করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জেটলির পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোই উচিত। চিদম্বরমেরও উচিত ছিল বাজেট বহরের মেদ ঝরানোর ব্যবস্থা করা। তা না-করে ইউপিএ-জমানার শেষ দু’বছর লাগাতার পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়েছিলেন চিদম্বরম। ফলে অর্থনীতির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে।

তাঁদের যুক্তি, পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বাড়লে, নতুন পরিকাঠামো তৈরি হয়। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ব্যয় বাড়ে। আর্থিক বৃদ্ধির হারও বাড়ে। চিদম্বরম যে-কোনও মূল্যে রাজকোষ ঘাটতি কমাতে চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল, বিদেশি মূল্যায়ন সংস্থা বা রেটিং এজেন্সিগুলি যাতে ভারত সম্পর্কে আরও নেতিবাচক মনোভাব না-নেয়, তা নিশ্চিত করা।

পানাগড়িয়ার মতে, জেটলির শুধু ঘাটতির কথা না-ভেবে নতুন পরিকাঠামো বা স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য মূলধন খাতে খরচ বাড়ানো উচিত। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিরই লাভ। ২০০৩-’০৪ অর্থবর্ষে যেখানে জাতীয় আয়ের ৩.৮% মূলধন খাতে ব্যয় হত, সেখানে ২০১৩-’১৪ সালে তা নেমেছে ১.৭ শতাংশে। জেটলি তা বাড়িয়ে অন্তত ২ শতাংশে নিয়ে যাবেন বলে অনেকেই আশা করছেন।

কিন্তু তার জন্য অর্থের সংস্থান করতে গিয়ে জেটলি দেখছেন, আয়ের ছবি মোটেই ভাল নয়। আর্থিক উপদেষ্টা মর্গ্যান স্ট্যানলির রিপোর্ট বলছে, আন্তর্জাতিক সঙ্কট ঘনিয়ে আসার আগে, ২০০৭-’০৮ অর্থবর্ষে কর বাবদ মোট আয় ছিল জাতীয় আয়ের ১১.৯ শতাংশ। ২০১৩-’১৪ সালে তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। তার উপর সাধারণ মানুষ বা কর্পোরেট সংস্থার উপর করের হার বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই এক লাফে কর বাবদ আয় বেড়ে যাবে, সেই সম্ভাবনাও কম। সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ রাজীব কুমারের দাওয়াই, “কর সংগ্রহের ভিত বাড়ানো হোক। যেমন, করের আওতায় যে-সব পরিষেবা নেই, সেগুলির উপরেও কর চাপানো হোক।”

কিন্তু সমস্যার মূলে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, চলতি বছরে বাড়তি ব্যয়ের জন্য অর্থ সংস্থানের একমাত্র উপায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নি-করণ। অন্তর্বর্তী বাজেটে এ ভাবে ৩৬ হাজার কোটি তোলার পরিকল্পনা করেন চিদম্বরম। জেটলি প্রয়োজনে সেই লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করতে পারেন বলেও মন্ত্রক সূত্রে খবর। মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে সেই লক্ষ্য পূরণ খুব একটা কঠিন হবে না।

• নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি পালন

• পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো

• কর বাবদ আয় বাড়ছে ঢিমেতালে, সেই সমস্যার সমাধান

• আয় বাড়াতে বিলগ্নিকরণে জোর

pramansu choudhuri new delhi arun jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy