আগামী দু’দশকের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য সরকারের। তবে তার জন্য পরিকাঠামো, বিকল্প শক্তি, উৎপাদন, প্রযুক্তি, পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহণ, শিল্প করিডর, মানবসম্পদ উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের উন্নয়নে প্রচুর পুঁজি দরকার। যার সংস্থান শুধু সরকারি বাজেটের মাধ্যমে সম্ভব নয় বলেই মনে করছে শিল্প মহল। তাই এ জন্য পেশাদারি হাতে পরিচালিত একটি তহবিল (ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ফান্ড বা আইডিএসএফ) তৈরির আর্জি জানাল বণিকসভা সিআইআই। তাদের সুপারিশ, পেশাদারেরা পরিচালনা করলেও তহবিলটি হবে সরকার নিয়ন্ত্রিত। সরকারি নীতি এবং আইনের দ্বারা গঠিত। লক্ষ্য হবে, দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে সাহায্য।
জাতীয় তহবিল পুঁজি ঢালবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে। বিদেশের মাটিতেও কৌশলগত জাতীয় স্বার্থে অর্থ লগ্নি করবে। যেমন, তা দিয়ে কেনা হতে পারে বিরল খনিজ কিংবা জ্বালানি সংস্থার অংশীদারি— সিআইআইয়ের রিপোর্টে এমনই বর্ণনা করা হয়েছে প্রস্তাবিত সংস্থাটির প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য। কিন্তু এই তহবিল তৈরি হবে কী ভাবে?
বণিকসভাটির প্রস্তাব, যাত্রা শুরুর সময় প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে হবে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে। এই সরকারি নিয়ন্ত্রণের ফলে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে। পরের ধাপে সরকারি কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ কাজে লাগিয়ে তৈরি হওয়া রোজগারের (অ্যাসেট মনিটাইজ়েশন) একাংশ এতে ঢালতে পারে কেন্দ্র। এমনকি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সরকারি অংশীদারির একাংশও আনা যেতে পারে এর নিয়ন্ত্রণে। সেই সঙ্গে দেশে এবং বিদেশে ঋণপত্র ছেড়ে জোগাড় করা যেতে পারে পুঁজি। সিআইআইয়ের দাবি, এই কাঠামো মেনে এগোতে থাকলে ২০৪৭-এর মধ্যে ১.৩-২.৬ লক্ষ কোটি ডলারের একটি তহবিল গড়ে তোলা সম্ভব। তা হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের প্রথম সারির অন্যতম সরকারি লগ্নিকারী সংস্থা।
সিআইআই ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ইঞ্জিন তৈরির সময় এসেছে। আমরা বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির অন্যতম। কিন্তু ২০৪৭-এর মধ্যে উন্নত অর্থনীতি হতে বাজেটের বাইরেও দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি সরবরাহকারী স্থায়ী সূত্র দরকার। এই ধরনের সরকারি তহবিল গড়ে তুললে তা সম্ভব।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সম্ভাবনাময় প্রকল্পে লগ্নি হতে পারে এই তহবিল থেকে। পুঁজি ঢালা যায় দেশ-বিদেশের পেনশন তহবিল, সরকারি লগ্নি তহবিল এবং আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থায়। বিদেশে জ্বালানি ক্ষেত্র, এলএনজি পরিকাঠামো, বিরল খনিজ, সেমিকনডাক্টর, কৃত্রিম মেধা, জৈব প্রযুক্তি, বন্দরের মতো প্রকল্পের অংশীদারিও কেনা যায়। যেখানে লাভ দীর্ঘমেয়াদি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)