Advertisement
E-Paper

অনিশ্চয়তা বাড়ছে, ধর্নায় ঠিকা কর্মীরা

বেতন হাতে না আসায় টান পড়েছে কর্মীদের সংসার চালানোর জ্বালানিতে। এই পরিস্থিতিতে নববর্ষের দিন সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে জেটের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন ঠিকা কর্মীরা।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৭
অবস্থান: জেট-অফিসের সামনে কর্মীরা। সোমবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

অবস্থান: জেট-অফিসের সামনে কর্মীরা। সোমবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

শেষ পর্যন্ত জেট এয়ারওয়েজে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন কি না অথবা এলে কে আসছেন, তা স্পষ্ট নয় এখনও। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ঋণদাতারা ১,৫০০ কোটি টাকা জোগাবে বলে কথা দিলেও, অস্পষ্ট কবে তা আসবে। লিজের টাকা চোকাতে না পারায় প্রায় রোজ আসছে বিমান বসে যাওয়ার খবর। ১১ এপ্রিল কলকাতা থেকে শেষ দু’টি উড়ানও বন্ধ হয়েছে। বিস্তর ধোঁয়াশা সংস্থার চালু থাকা বিমানের সংখ্যা নিয়েও। আন্তর্জাতিক উড়ান আবার কবে শুরু হবে, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার বা ঠিকা কর্মীরা বকেয়া বেতন কবে পাবেন, তারও আশ্বাস নেই।

ফলে সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ প্রতি দিন আরও বেশি করে ঘিরছে জেটকে। বেতন হাতে না আসায় টান পড়েছে কর্মীদের সংসার চালানোর জ্বালানিতে। এই পরিস্থিতিতে নববর্ষের দিন সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে জেটের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন ঠিকা কর্মীরা। তৃণমূল পরিচালিত তাঁদের ইউনিয়নের নেতা বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে সোমবার সকালে দু’ঘণ্টা ধর্নায় বসেছেন কর্মীরা। কলকাতা থেকে উড়ান চালুর দাবিতে মঙ্গলবারও তা চলবে।’’ সংস্থার পাইলটদের তরফেও এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বলা হয়, সংস্থার ২০ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন।

জেটের বেহাল দশার প্রভাব যে সরাসরি সংস্থার কর্মীদের পাশাপাশি ঠিকা কর্মীদের উপরেও পড়ছে, তারই প্রমাণ সজল। জেট এয়ারে লোডারের কাজ করেন। মূলত বিমান থেকে যাত্রীদের মালপত্র নামান-ওঠান। ছ’জনের সংসার চলে তাঁর রোজগারে। ঠিকাদারের অধীনে খাটেন। ফলে জেট থেকে টাকা পেলে তবেই ঠিকাদার টাকা দেন তাঁদের। সোমবার, নববর্ষের দিন ফোনে বেলেঘাটার বাড়ি থেকে বললেন, ‘‘ধার বাড়ছে। ছেলের গৃহশিক্ষকের বেতন দিতে পারিনি। সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।’’ কলকাতা থেকে জেট এয়ারের উড়ান বন্ধের পরে তাঁর মতো প্রায় ৫৩০ জন কর্মীর প্রায় একই অবস্থা।

সজলের কথায়, ‘‘কাজ নেই। তবু সকলে ডিউটির সময় মেনে বিমানবন্দরে যাচ্ছি। ডিউটি বলতে, চুপ করে বসে থাকা। আমার পরে আরও একদল একই ভাবে বিমানবন্দরে গিয়ে চুপ করে বসে থাকবে। রাতেও তাই।’’

যে ঠিকাদারের অধীনে সজলরা কাজ করেন, সেই শ্যামল পোদ্দার জানান, প্রতি মাসে জেট তাঁকে প্রায় দেড় কোটি টাকা করে দিচ্ছিল। ডিসেম্বরের সবটা পাননি। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ— পুরো বকেয়া। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে কর্মীদের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেতন দিয়েছি। আর পারছি না।’’

তিন মাস ধরে জেটের পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারেরাও বেতন পাচ্ছেন না। এক পাইলটের কথায়, ‘‘বেতন বেশি হওয়ায় তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপনের খরচও বেড়েছে। ফ্ল্যাট বা গাড়ির ঋণে বড় অঙ্কের কিস্তি দিতে হয় অনেককে। বাচ্চাদের স্কুলের বেতন রয়েছে। তিন মাস ধরে সব বন্ধ। কেউ কেউ স্থায়ী আমানত ভাঙাচ্ছেন।’’

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে সোমবার ঋণদাতারা জেটকে আপৎকালীন তহবিল জোগানোর সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ায়। এ দিন সংস্থার পাইলটদের সংগঠন ন্যাশনাল এভিয়েটর্স গিল্ড (ন্যাগ) স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি জানায়, প্রতিশ্রুতি মতো অবিলম্বে ঋণদাতারা ১,৫০০ কোটি টাকা ঢালুক। যে টাকার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, তা এখনও আসেনি। এ দিন লম্বা বৈঠকের পরেও বিষয়টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জেটের সিইও বিনয় দুবে জানান, মঙ্গলবার সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈঠকে বসবে পর্ষদ।

এর মাঝে আবার সোমবারেই সংস্থা জানিয়েছে, আপাতত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা। ঋণদাতাদের ওই তহবিল তাদের হাতে না আসাই যার প্রধান কারণ বলে দাবি নগদের অভাবে নাভিশ্বাস ওঠা সংস্থাটির।

Jet Airways Contractual staff
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy