—প্রতীকী চিত্র।
জ্বালানির চড়া দামে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, রাজ্য তখন দিন গুনছে পাইপলাইন দিয়ে তুলনায় সস্তা প্রাকৃতিক গ্যাস আসার অপেক্ষায়। যা গৃহস্থের হেঁশেলে পাইপ দিয়ে পৌঁছে দেবে রান্নার গ্যাস (পিএনজি)। পাঠাবে হোটেল-রেস্তরাঁয় এবং উৎপাদনের কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকেও। সিএনজি দেওয়া হবে গাড়ির জন্য। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল-এর মূল পাইপলাইনের পানাগড় থেকে নদিয়ার গয়েশপুর অংশের কাজ জুনে শেষ হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য থমকায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক চললে মাস দেড়েকের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু তার পরে গ্রাহকের কাছে সেই গ্যাস পৌঁছনোর কথা যে শাখা পাইপলাইন দিয়ে, তার পরিকাঠামো নির্মাণের কাজও কার্যত থমকে গিয়েছে। কারণ, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ন্ত্রক পর্ষদ যে সব বণ্টন (সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন) সংস্থাকে ওই দায়িত্ব দিয়েছে, পাইপ পাতার জন্য তাদের কাছ থেকে রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের একাংশ বিপুল হারে ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, রাজ্যে এখনও এই সংক্রান্ত সার্বিক নীতি তৈরি না হওয়াই এর কারণ। ফলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, প্রকল্পগুলি ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক না হওয়ার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। যা ধাক্কা দিচ্ছে গ্রাহককে দ্রুত তুলনায় কম দামের জ্বালানি সরবরাহের সম্ভাবনায়।
২০০৫-এ গেল-এর সঙ্গে আলোচনার কথা প্রথম জানিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি রাজ্যের শিল্পমহলও গ্যাসের পাইপলাইনের দিকে তাকিয়ে। কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রবীণ শিল্পকর্তা সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘বিশেষত এ রাজ্যের সেরামিক, কাচ, রিফ্র্যাক্টরির মতো শিল্পের কাছে দূষণহীন ও সস্তার জ্বালানির দ্রুত জোগান জরুরি। এই গ্যাসের উপরে নির্ভর করেই গুজরাতে সেরামিক শিল্পের বিপুল বিস্তার ঘটেছে। এ রাজ্যেও তা আসবে, দীর্ঘ দিন ধরে শুনছি। তার পরে তো বণ্টন সংস্থাগুলি তা জোগাবে! তাদের পরিকাঠামোর অগ্রগতি কতটা?’’
এ নিয়ে গেল বা বণ্টন সংস্থাগুলি মুখ না খুললেও প্রশাসনিক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পানাগড়-রাজারামবাটি অংশের ১১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি সম্পূর্ণ। রাজারামবাটি-গয়েশপুরের ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে প্রায় ৯০% শেষ। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে। তবে ভোট মেটায় অগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো পাইপলাইন তৈরির আশা। আর কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ওই গ্যাস বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান অয়েল আদানি গ্যাস, বেঙ্গল গ্যাস কোম্পানি ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো বণ্টন সংস্থাগুলিকে গ্যাস জোগাতে গেলের ছ’টি স্টেশনের কাজও শেষের মুখে।
তার পরেও মাথা তুলেছে আশঙ্কা। গেলের পরিকাঠামো তৈরি হলেও বণ্টন সংস্থাগুলির শাখা পাইপলাইন তৈরির কাজ ঢিমেতালে চলায় দ্রুত গ্যাস বণ্টনের, বিশেষত পিএনজি জোগান নিয়ে সংশয় বহাল। রাজস্থান, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, বিহারের মতো রাজ্য ওই শাখা পাইপলাইন গড়ার অনুমোদনের ফি নিয়ে সার্বিক নীতি তৈরি করেছে। কিন্তু এ রাজ্যে বছর খানেক ধরে আলোচনার পরেও তা চূড়ান্ত হয়নি। সূত্রের দাবি, অন্যান্য রাজ্যে হয় তা শূন্য, নয়তো মিটার প্রতি ২০-২৫ টাকার মতো। অথচ এ রাজ্যের কোথাও কোথাও নেওয়া হচ্ছে প্রায় ২০০০ টাকা। সংশ্লিষ্ট সব দফতর ও শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনার পরে রাজ্যের পূর্ত দফতর প্রস্তাবিত খসড়া নীতিতেও ওই ফি কমানোর কথা বলা হয়েছে বলে খবর। কিন্তু তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রী পুলক রায় অবশ্য শনিবার আশ্বাস দেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, ভোট পর্ব মেটায় এ বারে হয়ত সেই জট কাটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy