Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধি ৫.৭%, উদ্বেগ জেটলির

বিভিন্ন সরকারি দফতরের খরচের বোঝা বাড়ার জেরেই এটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস। আটটি পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধিও জুলাইয়ে নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬

পিছন দিকে হাঁটছে অর্থনীতি।

বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশের তকমা ঘুচেছে আগেই। জানুয়ারি থেকে মার্চে ভারতের জাতীয় আয় বৃদ্ধি ৬.১ শতাংশে নেমে আসার সময়ে। আর, এ বার এপ্রিল থেকে জুনে নরেন্দ্র মোদী জমানায় সবচেয়ে নীচে নামল জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার। ৫.৭% বৃদ্ধির এই হারকে ‘যথেষ্ট উদ্বেগজনক’ বলে বৃহস্পতিবার মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও। তিনি বলেন, ‘‘শিল্প তলানি ছুঁয়েছে। তবে আমরা আশা করব এর পরে ৭% বৃদ্ধি ছোঁয়া সম্ভব হবে।’’

আর, অর্থনীতিকে পিছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে নরেন্দ্র মোদীর ইস্তফা দাবি করেছে বিরোধী কংগ্রেস। এর আগে বৃদ্ধি তলানিতে নেমেছিল ৪.৬ শতাংশে, ২০১৪-র জানুয়ারি থেকে মার্চে। যে দেশটিকে পিছনে ফেলে ভারতের অর্থনীতি বিশ্বে পয়লা নম্বরে উঠে এসেছিল, সেই চিন পরপর দু’টি ত্রৈমাসিক জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং এপ্রিল থেকে জুনে এগিয়েছে ৬.৯% হারে।

এ দিনই অর্থনীতির পক্ষে অশনি সঙ্কেত দেখিয়েছে রাজকোষ ঘাটতি জুলাই পর্যন্ত হিসেবেই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ৯২.৪ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার পরিসংখ্যান। বিভিন্ন সরকারি দফতরের খরচের বোঝা বাড়ার জেরেই এটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস। আটটি পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধিও জুলাইয়ে নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে। গত বছরের জুলাইয়ে তা ছিল ৩.১%।

বিরোধী কংগ্রেস এ প্রসঙ্গেই মনে করিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভবিষ্যদ্বাণী। নোট বাতিলের পরেই অর্থনীতিবিদ মনমোহন বলেছিলেন, জাতীয় আয় বা জিডিপি বৃদ্ধি ২% কমে যাবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। গত বছর এই একই সময়ে বৃদ্ধি ছিল ৭.৯%, যা প্রায় ২% বেশি। আর, এ দিন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের টুইট, ‘‘অর্থনীতিতে ধস চলছেই়। বৃদ্ধি ঢিমেতালে, বিনিয়োগ সামান্য, চাকরি নেই। সব মিলিয়ে একটি বিস্ফোরক ককটেল। বৃদ্ধি ৬ শতাংশের নীচে নামাটা অবশ্যই আর্থিক বিপর্যয়।’’

ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার শতাংশে

তিনি হিসেব দিয়ে জানান, ‘‘জিডিপি বৃদ্ধি ১% কমা মানে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি। আর, তা ২% কমলে হারানোর অঙ্কটা ছোঁবে ৩ লক্ষ কোটি। জিডিপি ও জিভিএ-র হিসেবই প্রমাণ করছে মনমোহন সিংহের ‘অর্থনীতি পরিচালনায় পাহাড় প্রমাণ অব্যবস্থা’র অভিযোগ।’’

গত নভেম্বরে নোট বাতিলের ধাক্কাতেই অর্থনীতি পিছু হটছে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর পর জুলাইয়ে নতুন পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু হওয়ার জেরে অর্থনীতি আরও পিছন দিকে হাঁটতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। পরিসংখ্যানও বলছে, পণ্য ও পরিষেবার মোট যুক্তমূল্য (গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড বা জিভিএ) অনুসারে কল-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি মাত্র ১.২% যেখানে আগের বছর তা ছিল ১০.৭%। উল্লেখ্য, নতুন পদ্ধতিতে জিভিএ হিসেবের জন্য উৎপাদনের মোট মূল্য থেকে বাদ দেওয়া হয় কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদির খরচ। বেসরকারি ক্ষেত্রে শিল্পের চাকা কার্যত থমকে থাকাই বৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টিসিএ অনন্ত।

তিনি জানান শিল্পে জিভিএ হিসেব করায় ৭৪% অবদানই বেসরকারি ক্ষেত্রের। সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস (সিএসও)-এর পরিসংখ্যান অনুসারে এপ্রিল থেকে জুনে কৃষির বৃদ্ধির হারও জিভিএ-র মাপকাঠিতে কমে হয়েছে ২.৩%। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ২.৫%।

এমনিতেই নোট বাতিলের ফলে কালো টাকার বিরুদ্ধে কোনও লাভ হয়েছে কি না, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে ৯৯% বাতিল নোট ফিরে আসার হিসেব পাওয়ার পরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আজ তা নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ সামলানোর মাঝেই আর্থিক বৃদ্ধির অঙ্ক মোদী সরকারের উপর বোমার মতো এসে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নোট বাতিলে অর্থনীতিতে লাভ হয়নি, ক্ষতিই হয়েছে, তা এখন স্পষ্ট।

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও আজ মেনে নিয়েছেন, এই বৃদ্ধির হার দুশ্চিন্তার কারণ। তবে তাঁর মতে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। লগ্নির জন্য আরও কাজ করতে হবে। লগ্নির ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কারখানার উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে। এ জন্য অবশ্য জিএসটি-ই কারণ বলে যুক্তি জেটলির। জুলাই থেকে জিএসটি চালু হবে বলে পুরনো পণ্য আগে বিক্রি করার দিকে জোর দেয় শিল্প। এ বার জিএসটি রূপায়ণের পরে হাল শোধরাবে বলে তাঁর দাবি। রাজস্ব আয় দেখে দেশীয় শিল্পমহলও লগ্নি করবে বলে তাঁর আশা। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিও আশার তুলনায় দ্রুত শোধরাচ্ছে, মন্তব্য অর্থমন্ত্রীর।

মোদী-জেটলির উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাকের হিসেব রাজকোষ ঘাটতি এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.০৪ লক্ষ কোটি টাকা। এটাই বাজেটের আগাম হিসেবের ৯২.৪%। গত বছর একই সময়ে তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার ৭৩.৭%। পাশাপাশি পরিকাঠামো ক্ষেত্রের আটটি শিল্প কয়লা, অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, শোধনাগারের পণ্য, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্র মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি জুলাইয়ে নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে।

GDP Growth Rate Arun Jaitley Finance Minister narendra modi অরুণ জেটলি নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy