ভারতে পেট্রোলের ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত। রীতিমতো চমকে দেওয়া হারে। বিশ্ব বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদার অভাবে ধুঁকতে থাকা অশোধিত তেলের জন্য আগামী দিনে তা জিয়নকাঠি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ দেশে পেট্রোলের চাহিদা কী ভাবে বাড়ছে, দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছর সময়ে ভারতে গাড়িতে প্রতি দিন গড়ে পেট্রোল ব্যবহার হয়েছে ৫ লক্ষ ব্যারেল। দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে এখানে প্রতিদিন ওই জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে গড়ে ৬০ হাজার ব্যারেল। যেখানে তুলনায় অনেক বড় বাজার আমেরিকায় ওই বৃদ্ধির পরিমাণ ২ লক্ষ ৪০ হাজার ব্যারেল। উল্লেখ্য, এখনও ভারতে শোধিত তেলের মাত্র ১২% পেট্রোল। যেখানে মার্কিন মুলুকে তা ৪৭%। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই নিরিখে এ দেশে জ্বালানিটির দৈনিক চাহিদা বাড়ার পরিমাণ চোখে পড়ার মতো।
বিশ্ব বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি হওয়ার কারণে এখনও সেই তলানির দিকেই পড়ে আছে অশোধিত তেলের দাম। মার্কিন মুলুকের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও পুরোদস্তুর চাঙ্গা হয়নি। আবার চিনে তা ঝিমিয়ে পড়েছে। বৃহত্তম দুই ক্রেতার এই বেহাল দশার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই নাভিশ্বাস তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির। তবে সৌদি আরব-সহ পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক-এর আশা, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে তেলের চাহিদাকে টেনে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ভারতে পেট্রোলের বাড়তি ব্যবহারই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশে গড় আয় বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির ব্যবহার। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যই জানাচ্ছে, ২০০৯ সালের তুলনায় এখন পেট্রোলের ব্যবহার দ্বিগুণ। আর ১৯৯৯ সালের সাপেক্ষে প্রায় চার গুণ।
তার উপর পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে রাস্তা তৈরিতে সম্প্রতি বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তার হাত ধরে পেট্রোল-সহ জ্বালানির চাহিদা বাড়বে আরও বেশি। বিশেষত যেখানে ২০১৬-’১৭ সালে যাত্রী ও ইউটিলিটি গাড়ির বিক্রি অন্তত ১২% বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৫-’১৬ সালে ওই বৃদ্ধির হার ৬%। তার মানে ফি মাসে রাস্তায় নামছে প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়তি গাড়ি। ফলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানির চাহিদাও দ্রুত বাড়তে বাধ্য বলে মনে করছে সারা বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। ২০২১-’২২ সালে ভারতে পেট্রোলের দৈনিক গড় চাহিদা ৮ লক্ষ ব্যারেলে পৌঁছবে বলে মনে করছে খোদ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকও। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ডিজেলের মতো অন্য জ্বালানির চাহিদাও যে খুব একটা কম বাড়ছে, এমন নয়। কিন্তু সেই সমস্ত কিছুকে টপকে পেট্রোলের চাহিদা যেন বাড়ছে প্রায় রকেট গতিতে। আর সেই কারণেই এখন ঘুরে দাঁড়াতে ভারতের পেট্রোল-খিদের দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে তেলের বিশ্ব বাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy