Advertisement
০৩ মে ২০২৪

চেষ্টা থাকুক আয় বাড়ানোর

পার্থসারথি (৫০) স্ত্রী (৪২) ছেলে (৬) অবসরপ্রাপ্ত কর্মী | | থাকেন জেলা-শহরে | | লক্ষ্য: ছেলের পড়াশোনার জন্য সঞ্চয়, সচ্ছল অবসর জীবন নিট আয় (মাসে): ১৪,৭৬৮ খরচ (মাসে): সংসার ১২,০০০ সম্পদ: স্থায়ী আমানত ১২,২০,০০০ | এমআইএস ৭,৪৫,৫০০ | মিউচুয়াল ফান্ড ৫,৩২,০০০ | এনএসসি ১,৯৫,০০০ | এলআইসি ১,০০,০০০ | রেকারিং ৭০,৫০০চাকরি জীবন এখন এমনিতেই অনিশ্চিত। বিশেষ করে বেসরকারি ক্ষেত্রে। তার উপর অবসর নিলে তো কথাই নেই। তখন মাস গেলে মাইনে থাকবে না। আবার সংসার চালাতে তহবিল ভাঙলেও চলবে না।

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

চাকরি জীবন এখন এমনিতেই অনিশ্চিত। বিশেষ করে বেসরকারি ক্ষেত্রে। তার উপর অবসর নিলে তো কথাই নেই। তখন মাস গেলে মাইনে থাকবে না। আবার সংসার চালাতে তহবিল ভাঙলেও চলবে না। অথচ সামনে পড়ে অনেকগুলো বছর। এই কারণেই অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের আর্থিক পরিকল্পনা চাকরিজীবীদের থেকে আলাদা। তাই এঁদের লগ্নির লক্ষ্য হওয়া উচিত—

• সুদ বা অন্যান্য লগ্নি থেকে প্রাপ্ত আয়ের নিয়মিত জোগান বজায় রাখা।

• মূল্যবৃদ্ধি সামলাতে বাড়তি তহবিল তৈরির চেষ্টা করা।

• ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা বা বিয়ের মতো বড় কোনও লক্ষ্য সামনে থাকলে, সে জন্য আলাদা তহবিল তৈরি।

• কম ঝুঁকি নিয়ে সর্বোচ্চ রিটার্নের ব্যবস্থা করা।

পার্থসারথিবাবু চাকরি ছেড়েছেন। নতুন করে এখনও কোনও সংস্থায় যোগ দেননি। সংসার চলছে জমানো টাকার সুদ দিয়েই। সব মিলিয়ে তাঁর সামনে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে—

• ছেলের বয়স ৬ বছর। তার উচ্চশিক্ষা এবং বিয়ের জন্য সঞ্চয় করতে হবে।

• তাঁর ও স্ত্রীর জন্য আরও কমপক্ষে ২৫-৩০ বছরের তহবিল প্রয়োজন। যা থেকে নিয়মিত আয় হতে পারে।

• স্বাস্থ্যবিমা করানো।

মাসে ১২,৯৭৯ টাকা সুদ পান তিনি। আর পেনশন ১,৭৮৯ টাকা। এর প্রায় পুরোটাই খরচ হয় সংসারে। নতুন করে সঞ্চয়ের সুযোগও নেই। এখন কী করে তহবিল বা়ড়ানো যায়? আসুন দেখি।

জীবনবিমা

বিমা প্রকল্পটিতে চার বছর আগে এককালীন ১ লক্ষ টাকা রেখেছেন। আরও ছ’বছর টাকা ধরে রাখতে হবে। মেয়াদ শেষে ওই টাকা তুলে নিয়ে ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডে রাখুন। ৬০ বছর বয়স হলে তা সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে লগ্নি করুন। সুদ মিলবে তিন মাস অন্তর। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে সুদের হার বেশ ভাল। এক জনের নামে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা রাখা যায়।

এনএসসি

এনএসসি-র মেয়াদ শেষ হলে তা তুলে আরবিআই বন্ডে রাখতে হবে। এখানে কর দিতে হবে। সুদ ৮%। পাওয়া যাবে প্রতি ছ’মাসে। প্রবীণ নাগরিক হলে, সেই টাকা জীবনবিমার মতোই সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে রাখতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ড

ফান্ডে এখনও পর্যন্ত ৫.৩২ লক্ষ টাকা জমেছে তাঁর। সেই টাকা যেন কোনও ভাবেই খরচ না-হয়। এই টাকা দিয়েই ছেলের উচ্চশিক্ষা ও বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি শেয়ার ভিত্তিক (ইকুইটি) ফান্ডে টাকা থাকে, তা হলে ঝুঁকি কমানোর জন্য তা তুলে ডেট ফান্ডে রাখতে হবে। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য এখনও ১২ বছর বাকি। ১০% রিটার্ন ধরলে সেই সময়ে ওই তহবিল বেড়ে হবে ১৭.৫৭ লক্ষ। পড়াশোনা ও বিয়ের খরচের পরেও টাকা থাকলে তা রাখতে হবে নিজের অবসর জীবনের জন্য।

এমআইএস এবং আমানত

দুই ক্ষেত্রেই সুদ ক্রমশ কমছে। ফলে এই দুই প্রকল্প থেকে এখন যা আয় হচ্ছে, আগামী দিনে তা আরও কমবে। এ জন্য হয় পার্থসারথিবাবুকে তহবিল বাড়াতে হবে, অথবা আরও টাকা এতে যোগ করতে হবে। ঝুঁকি নিতে রাজি থাকলে এখন হাতে মাসে বাড়তি যে ২,৫০০ টাকার মতো থাকে, তা ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে রাখুন। এক বছর পর পর তুলে নিয়ে এমআইএস অথবা স্থায়ী আমানতে লগ্নি করুন। এ ভাবে কিছুটা হলেও তহবিল বাড়াতে পারবেন।

রেকারিং

এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে মার্চেই। সেই টাকা স্থায়ী আমানতে রাখতে হবে। হঠাৎ প্রয়োজনে যাতে টাকা তোলা যায়, সে জন্য এর সঙ্গেই নিতে হবে ওভারড্রাফ্টের সুবিধা। মনে রাখবেন, এই টাকায় যেন হাত না-পড়ে।

স্বাস্থ্যবিমা

পার্থসারথিবাবুর পরিবারের কারওর স্বাস্থ্যবিমা নেই। অথচ এর ব্যবস্থা না-করলেই নয়। আপাতত রেকারিং থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে এ বছর থেকেই নিজের ও স্ত্রী-ছেলের জন্য কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা চালু করুন। যত দেরি করবেন, প্রিমিয়াম ততই বাড়বে। কমবে সুবিধা। এর পরে রেকারিং-এর টাকা স্থায়ী আমানতে রেখে যে-সুদ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে প্রতি বছর বিমার প্রিমিয়াম দিতে হবে। কম পড়লে ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের টাকা ব্যবহার করতে হবে। আরবিআই বন্ডের সুদ চালু হলে, সেই টাকাও কাজে লাগানো যাবে।

এর সঙ্গেই চাকরির চেষ্টা করে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেব তাঁকে।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE