পাহাড়ি এলাকায় প্রথাগত বিদ্যুতের অভাব মিটিয়েছিল মাইক্রো-হাইডেল বা ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। কিন্তু পরে গ্রিড মারফত সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় কপাল পুড়েছিল ওই সব প্রকল্পের। এ বার নতুন উদ্ভাবনের হাত ধরে ওই সব বন্ধ প্রকল্পেরই নতুন করে দিনের আলো দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে তৈরি এই বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রিডে পাঠানো যাবে একটি যন্ত্রের সাহায্যে, যা এই সব ছোট প্রকল্পের সামনে নতুন ব্যবসার দরজা খুলতে পারে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
অপ্রচলিত শক্তি বিষেশজ্ঞ তথা ‘এনবিআইআরটি রিনিউয়েবল কলেজ’-এর প্রেসি়ডেন্ট শান্তিপদ গণচৌধুরি জানান, জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয় ওই বিদ্যুৎ গ্রিডে পাঠানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রকল্প চেয়েছিল। তাঁর দাবি, তাঁরা সেই প্রযুক্তি তৈরি করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রকল্প পাঠিয়েছিলেন। এবং তা মঞ্জুর হয়েছে। শীঘ্রই এটি অসম-মেঘালয়ের সীমান্তে চালু হওয়ার কথা। তিনি জানান, বন্ধ হয়ে থাকা ওই ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ গ্রিডে পাঠানোর জন্য পুরনো যন্ত্রটির সঙ্গে একটি ‘ইনটেলিজেন্ট কন্ট্রোলার’ বা যন্ত্রাংশ জুড়ে দেবেন। বিশেষ প্রযুক্তির সেই যন্ত্রাংশটিই তাঁরা তৈরি করেছেন, যা সরাসরি বিদ্যুৎ গ্রিডে পৌঁছে দেবে। কোনও কারণ গ্রিড ‘ট্রিপ’ করলে জলবিদ্যুৎ গ্রিডের বদলে চলে যাবে সংশ্লিষ্ট পাহাড়ি এলাকার গ্রামগুলিতে। সে ক্ষেত্রে এই বিদ্যুৎ তৈরিতে জ্বালানি প্রয়োজন হবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে গ্রিডের বিদ্যুৎ যে-সব পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছেছে, সেখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। কারণ, যথাযথ প্রযুক্তি না-থাকায় ওই ক্ষুদ্র জলবিদ্যুতকে গ্রিডে পাঠানো যেত না। অথচ এ রাজ্যের দার্জিলিঙের পাশাপাশি হিমাচলপ্রদেশ, অসম, অরুণাচলপ্রদেশের নানা জায়গায় চালু ছিল এই ধরনের ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তেমনই নেপাল, চিন, মায়ানমারেও চল ছিল এটির। পাহাড়ের গায়ে ঝোরা বা ছোট ঝর্না থেকে তৈরি হত ওই জলবিদ্যুৎ, যা সেখানকার গ্রামের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাত। তবে গ্রীষ্মে জলের ধারা কমে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাহত হত বিদ্যুতের জোগানও।
সাধারণ ভাবে স্থানীয় প্রশাসন বা সমবায় এই ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির দায়িত্বে থাকত। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে কতটা ওই ধরনের বিদ্যুৎ গ্রিডে পাঠানো হল তা মিটার দিয়ে আলাদা করে মেপে নেওয়াও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকা সার্বিক ভাবে যতটা গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তা থেকে ওই জলবিদ্যুতের পরিমাণ বাদ দিয়ে বাকিটার দাম নিতে পারে বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থাগুলি। তা হলে বাসিন্দাদের বিদ্যুতের বিলও কম উঠবে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy