অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) চারটি হারের কথা ঘোষণা করলেও তা ধাপে ধাপে একটি বা দু’টিতে নামিয়ে আনার পক্ষেই মতদিল শিল্পমহল।
সেই লক্ষ্যে এগোনোর প্রতিশ্রুতিই বৃহস্পতিবার সরকারের কাছে দাবি করেছে তারা। পাশাপাশি, তারা চায় সংস্থাগুলিকে নতুন জমানায় মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় মঞ্জুর করুক কেন্দ্র। বিতর্কিত সেস প্রসঙ্গেও তাদের আশা, এটি বসানোর জেরে বাড়তি চাপ পড়বে না মূল্যবৃদ্ধির উপর। শিল্পমহলের কেউ কেউ যেমন সার্বিক ভাবে এই করের চারটি হার স্থির করায় ঐকমত্যে পৌঁছনোর জন্য জিএসটি পর্ষদকে সাধুবাদ জানিয়েছে, তেমনই আবার বেশ কিছু প্রশ্নও তুলেছে। অনেকেই আবার সেস বসানোয় জিএসটির মুখ্য উদ্দ্যেশ্য কতটা সাধিত হবে, তা নিয়েও সংশয়ী।
কোন শিল্পে জিএসটি-র বোঝা কতটা হবে, এই মুহূর্তে তা পুরোপুরি স্পষ্ট না-হওয়ায় অবশ্য মন্তব্য করার ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানী শিল্পমহল। সব কিছু খতিয়ে না-দেখে সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্প এ দিন কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়নি। তবে নতুন জমানাতেও কর কমবে না এবং তার ফলে গাড়ির দাম এখনই কমবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন এই শিল্পের অনেকে।
একই মত এলজি, ওয়ার্লপুল, স্যামসাং, ভিডিওকনের মতো দেশি-বিদেশি ভোগ্যপণ্য সংস্থার। রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিনের মতো বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্যে সর্ব্বোচ্চ ২৮ শতাংশ হারে পণ্য-পরিষেবা কর বসা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, এই হার এখনকার ৩০-৩১ শতাংশ করের তুলনায় কম।
জিএসটি জমানায় করের আওতায় আসায় ক্ষোভ জানিয়েছে বস্ত্রশিল্প। এ দিকে, হার এখনও ঠিক না-হলেও সোনার উপরও বাড়ছে কর। সোনায় যুক্তমূল্য করের হার বর্তমানে ১ শতাংশ। তা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। কর বাড়লে গয়নার কলোবাজারি বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশঙ্কা জানান স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে।
এ দিন বণিকসভা সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট নওশাদ ফোর্বসের দাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিএসটি একটি বা দু’টি হারে নামিয়ে আনা উচিত। তবে ধাপে ধাপে সেস নয়। ‘ফাইনাল প্রডাক্ট’ বা ক্রেতার হাতে যে-পণ্য পৌঁছবে, তার উপরেই সেস বসানো হোক। তাদের মতে মডেল পণ্য-পরিষেবা আইন চালু হলে টেলিকম, ব্যাঙ্কিং, ই-কমার্স, বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে জটিলতাও বাড়তে পারে। কারণ বিভিন্ন রাজ্যে এই সব সংস্থা কাজ করে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্যে নথিভুক্তি, ও এলাকা ভিত্তিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। ফলে নিয়ম-কানুনের বোঝায় বাড়বে জটিলতা। ফোর্বসের মতে, এই সমস্যা দূর করতে কেন্দ্রীয় নথিভুক্তি ব্যবস্থা বা সেন্ট্রাল রেজিসট্রেশন সিস্টেম জরুরি। তবেই কর দিতে সুবিধা হবে, ব্যবসা করাও সহজ হবে বলে তাঁর দাবি। একই সঙ্গে সিআইআই মনে করে জিএসটি চালু করতে প্রয়োজন মূল্যায়ন। তা রাজ্য না কেন্দ্র কে করবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
বণিকসভা ফিকি-র প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন নেওটিয়াও ঐকমত্যে পৌঁছে করের হারের চার স্তরের কাঠামো চূড়ান্ত করার জন্য জিএসটি পরিষদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এর ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজস্ব আদায় সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি, সম্ভাব্য মূল্যবৃদ্ধির হারকেও ধরে রাখা যাবে।
কিছুটা সংশয়ী হিন্দুজা গোষ্ঠীর সহকারী চেয়ারম্যান জিপি হিন্দুজা। তিনি বলেন, ‘‘আশা করব এই সংক্রান্ত বিধি তৈরির পরে তা প্রকাশ করা হবে এবং কর দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে। পাশাপাশি সেস বসলেও তা মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগাবে না বলেই আশা করি।’’
তবে দামি গাড়ির উপর করের বোঝা লাঘব না-হওয়ায় মার্সিডিজ বেঞ্জ-এর মতো সংস্থার এমডি-সিইও রোল্যান্ড ফলগার অবশ্য এ দিন ক্ষোভই প্রকাশ করেছেন। সংস্থার বক্তব্য, এমনিতেই ভারতে দামি গাড়ির উপর করের বোঝা বেশি বলে এ দেশে এই গাড়ির ব্যবসা বাড়ছে না। তাঁদের দাবি, উন্নত দুনিয়াতেও এখন দামি পণ্যের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হয় না। জিএসটি-তেও দামি গাড়ির উপর বেশি কর চাপানোর সিদ্ধান্ত এ ধরনের শিল্পের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অথচ দামি গাড়ি নির্মাতারাই যাত্রীদের বাড়তি সুরক্ষাকবচের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত যে সেস চাপানোর কথা বলা হয়েছে, তা জিএসটির মূল ভাবনার পরিপন্থী বলেই তাদের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, সব করই জিএসটি-র মধ্যে থাকা উচিত।
ক্ষুব্ধ সিল্ক অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র কপূরের দাবি, আগে পুরো বস্ত্রশিল্পই ভ্যাট-এর আওতা থেকে ছাড় পেলেও জিএসটি-তে তা মেলেনি। ফলে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হস্তশিল্পীরা সমস্যায় পড়বেন।
জমানা বদল
• দাম কমবে না, মনে করছে গাড়ি, ভোগ্যপণ্য সংস্থা
• কর চাপায় ক্ষোভ বস্ত্রশিল্পের
• কালোবাজারি বাড়া নিয়ে শঙ্কা গয়নাশিল্পের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy