E-Paper

আগুন দামের ছেঁকা, জমল না অক্ষয় তৃতীয়ার সোনার বাজার

পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়ায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারেট) দাম জিএসটি ছাড়া ঘুরছিল ৫১,৭৫০ টাকা থেকে ৫৩,৮৫০ টাকার মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২১
Jewellery.

গত বছরের থেকে প্রায় ৪০% কম বিক্রিতেই খুশি থাকতে হল সিংহভাগ গয়না ব্যবসায়ীদের। প্রতীকী ছবি।

এক দিকে চড়া গরম, অন্য দিকে সোনার আগুন দর। এই দুইয়ের জেরে এ বছর পয়লা বৈশাখ এবং অক্ষয় তৃতীয়ায় তেমন জমল না গয়নার বাজার। হাল এতটাই খারাপ যে, গত বছরের থেকে প্রায় ৪০% কম বিক্রিতেই খুশি থাকতে হল সিংহভাগ গয়না ব্যবসায়ীদের। বিশেষত নামী বড় দোকানগুলিতে ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় চোখে পড়লেও, ছোট বিপণিগুলিতে তা ছিল খুব কমই।

পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, বিয়ের মরসুম ও ইদ। এপ্রিলের এই সময়ে ভাল ব্যবসার আশায় গয়নার পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শনিবার থেকে শুরু হয়ে রবিবার শেষ হওয়া অক্ষয় তৃতীয়ার কেনাবেচার হিসাব বলছে, বেশিরভাগ দোকানেই আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। এর কারণ হিসেবে এক বছরে সোনার দাম প্রায় ১০,০০০ টাকা বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছে স্বর্ণ শিল্প। সঙ্গে এ বারের চড়া গ্রীষ্মে মানুষের বাইরে বেরোনোর অনীহার কথাও তুলে ধরছেন অনেকে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়ায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারেট) দাম জিএসটি ছাড়া ঘুরছিল ৫১,৭৫০ টাকা থেকে ৫৩,৮৫০ টাকার মধ্যে। এ বছর তা ঠেকেছে ৬০,০০০ থেকে ৬১,০০০ টাকায়। এর মধ্যে তা এক সময়ে উঠে গিয়েছিল ৬২ হাজারের কাছাকাছি।

ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীই বলছেন দাম বৃদ্ধির সঙ্গে রেস্তকে মেলাতে সিংহভাগ ক্রেতাই কম সোনার হাল্কা গয়নার দিকে ঝুঁকেছেন। মধ্য কলকাতার গয়নার পাইকারি ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন পাঁজা জানাচ্ছেন, “টাকার অঙ্কে হিসাব করলে বিক্রি গত বারের মতো প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। কিন্তু ওজনের নিরিখে আগের বছরের থেকে প্রায় ৪০% কম বিক্রি হয়েছে।’’

তবে এ বার গয়নার যা কাটতি হয়েছে, তাতে খুশি বড় বিপণিগুলি। পি সি চন্দ্র জুয়েলার্সের এমডি উদয় চন্দ্র জানান, “দেশে মোট ৬২টি দোকানের প্রতিটিতেই বিক্রি ভাল হয়েছে। দামের কথা মাথায় রেখে এ বার কম সোনার হাল্কা গয়নাই বেশি রেখেছিলাম।’’ একই কথা জানিয়েছেন সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি শুভঙ্কর সেনও। তিনি বলেন, “পয়লা বৈশাখ থেকে সোনার চড়া দামের সঙ্গে প্রচণ্ড গরম গয়নার ব্যবসার ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যেও সব সময়ে পড়ার হাল্কা ওজনের সোনার এবং সোনার উপরে হিরে বসানো গয়না কেনার চাহিদাই বেশি ছিল। সব মিলিয়ে ব্যবসা গত বছরের থেকে এ বার ৭%-১০% বেশি হয়েছে।’’

তবে হলদিয়ার মাঝারি মাপের গয়নার দোকানের মালিক মধুসূদন কুইলার মতে, সাম্প্রতিক অর্থনীতির হালের বিরূপ প্রভাবও গয়না শিল্পে পড়েছে। তাঁর কথায়, “গত বছর বেশ কিছু ক্রেতা ২-৫ লক্ষ টাকার গয়না কিনেছিলেন। এ বার তা দেখছি না। বেশিরভাগই ৫০,০০০ টাকার মধ্যে কেনাকাটা সারছেন।’’

কমার বদলে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে, এই ধারণা ক্রেতাদের মধ্যে ক্রমশ থিতু হচ্ছে বলে মনে করেন স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে। তিনি বলেন, “দাম বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু এটাই শেষ নয়। বিশ্বের আর্থিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি না হলে পাকা সোনার দাম চলতি বছরে ৬৫,০০০ টাকায় ঠেকলেও অবাক হব না। দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় ক্রেতাদের একাংশও গয়না কিনে রাখছেন। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার ব্যবসা তেমন খারাপ হয়নি।’’

তবে কেনাকাটা নিয়ে চূড়ান্ত হতাশ বেলঘরিয়ায় গয়নার ছোট দোকানের মালিক এবং বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার। তিনি বলেন, “পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়া দু’দিনই কেনাবেচা হয়েছে খুবই ঢিমে তালে। সার্বিক ভাবে পাড়ার ছোট দোকানে বিকিকিনি আগের বছরের থেকে ২৫ শতাংশের মতো কম।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jewellery Akshay Tritiya 2023

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy