Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পা ফেলুন সাবধানে

প্রবল ঝুঁকি। তীব্র অনিশ্চয়তা। তবু বেশি রিটার্নের আশায় হেঁটে চলেছেন শেয়ার বাজারের পথ বেয়ে। এ যেন দাঁত কামড়ে এগিয়ে চলা শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে। কিন্তু সাবধান! ভুলের খাদে যেন পা না ফস্কায়। শেয়ারের লগ্নিতে সেই সব বিপদই চিনিয়ে দিচ্ছেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরীপ্রবল ঝুঁকি। তীব্র অনিশ্চয়তা। তবু বেশি রিটার্নের আশায় হেঁটে চলেছেন শেয়ার বাজারের পথ বেয়ে। এ যেন দাঁত কামড়ে এগিয়ে চলা শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে। কিন্তু সাবধান! ভুলের খাদে যেন পা না ফস্কায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

লগ্নির দুনিয়ায় শেয়ার বাজারের রাস্তা যে বেশ ঝুঁকির, তা অনেকেই বোঝেন। সেই সঙ্গে এই খবরও রাখেন যে, একমাত্র এই লগ্নিতেই লুকিয়ে বিপুল রিটার্নের সুযোগ। মূল্যবৃদ্ধির দৈত্যকে হারানো যায় যার হাত ধরে। তাই যাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার সাধ ও সাধ্য ষোলো আনা, তাঁরা শেয়ারে বিনিয়োগে ঝাঁপান যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু শুধু ঝাঁপালেই তো চলবে না। সেই রাস্তায় অপেক্ষা করে থাকা বিপদগুলোকেও চেনা জরুরি। না হলে লক্ষ্য ছোঁয়ার আগেই এমন খাদে পড়তে হবে যে, উঠে দাঁড়ানোই মুশকিল হয়ে পড়বে।

চোখ বন্ধ থাকলে বিপদ

• নেতাজি নগরের সরকারি চাকুরে সন্দীপন চক্রবর্তী ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ ওএনজিসির ১০০টি শেয়ার কিনেছিলেন। প্রতিটির দাম ছিল ৩৬৮.১০ টাকা। প্রায় পাঁচ বছর ফিরে তাকাননি সে দিকে। শেষমেষ সেই শেয়ার ১৯ ফেব্রুয়ারি যখন বেচলেন, দাম নেমেছে ১৩৯.১৫ টাকায়।

• হাওড়ার ছোট ব্যবসায়ী সৈকত রায় টাটা মোটরসের ১০০টি শেয়ার কিনেছিলেন প্রতিটি ৪৪২.৩৫ টাকা দরে। তিনিও ওই ১৯ ফেব্রুয়ারিই বিক্রি করেন। ১৬৩.৭৫ টাকায়।

শুধু সন্দীপন বা সৈকতই নন, গত কয়েক বছরে বহু ভাল সংস্থার শেয়ারে লম্বা মেয়াদে পুঁজি ধরে রেখে হাত পুড়িয়েছেন বহু লগ্নিকারী।

কারণ কী

২০১৪ সালের মে মাসে দিল্লির তখ্‌তে নরেন্দ্র মোদী বসার পর থেকে সেনসেক্স বেড়েছে প্রায় ১২,০০০ পয়েন্ট। নিফ্‌টি উঠেছে প্রায় ৩,৭০০। এই সময়ে বেশ কিছু ভাল সংস্থার শেয়ারের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই বহু নামি সংস্থার দর চলে গিয়েছে তলানিতে। যার কারণ ছিল একাধিক। কারও ব্যবসার হাল খারাপ হয়েছে। কারও শেয়ার দরে ছায়া ফেলেছে দেশে-বিদেশে মাথা তোলা রাজনৈতিক, আর্থিক জটিলতা-সহ বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু লগ্নিকারীদের একাংশ শেয়ার কেনার পরে সেগুলির ওঠাপড়া সম্পর্কে কোনও খবরই রাখেননি। যখন অর্থের প্রয়োজন পড়েছে, তখন ছুটেছেন বিক্রি করতে। কিন্তু ততদিনে সেই সমস্ত শেয়ারের দাম নেমে এসেছে তলানিতে।

সুতরাং

বাজার বিশেষজ্ঞ এবং দেকো সিকিউরিটিজের কর্তা অজিত দে-র মতে, ভাল শেয়ারে লম্বা মেয়াদে লগ্নি করার পরামর্শে কোনও ভুল নেই। কারণ, রিটার্ন বেশি দেওয়ার জন্য শেয়ারকে কিছুটা বেশি সময় দিতেই হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এ ভাবে সমস্ত শেয়ারের দামই সব সময় ক্রমাগত বেড়েই যাবে।

খেয়াল থাকে যেন

আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক— বিভিন্ন কারণে একটি সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্যে পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে। অনিয়মে জড়িয়ে পড়তে পারে সংস্থা। তৈরি হতে পারে নিয়ন্ত্রণের বিধি সংক্রান্ত জটিলতা। ফলে যে কোনও ব্যবসার মতো শেয়ারে লগ্নির ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট সংস্থা সম্পর্কে নিয়মিত খবর রাখা জরুরি। কোনও কারণে ব্যবসা ধাক্কা খেলে ধীরে ধীরে তার শেয়ার দর পড়তে থাকে। এক দিনেই তলানিতে নামে না। দর কখন এবং কেন পড়তে শুরু করল তা জানতেই পারবেন না সংস্থা বা তার শেয়ার সম্পর্কে খোঁজ না রাখলে।

এই যেমন, এখন চালু হয়েছে জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি)। ঋণ খেলাপি সংস্থাকে দেউলিয়া আইনের আওতায় সেখানে টেনে নিয়ে যান ঋণদাতারা। যে সংস্থার শেয়ার কিনেছেন, সেটি ঋণ বাকি ফেলার দায়ে এনসিএলটিতে যায়নি তো? সেই খবরও রাখতে হবে।

মোদ্দা কথা, যাই হোক যে দামে শেয়ার কিনেছিলেন, তার থেকে দর আরও বেশি নামার আগে বিক্রি করতে হবে। নইলে গুনতে হবে ক্ষতি।

ঝুঁকিও বেড়েছে অনেক

এখন দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় প্রতি দিন ঘটে চলা নানা ঘটনাও প্রভাব ফেলে শেয়ার বাজারে। ফলে এই লগ্নিতে ঝুঁকিও বেড়েছে বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ ও ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক। যেমন, আমেরিকার রক্ষণশীল নীতির জেরে এ দেশের কোন কোন সংস্থার বিদেশে বিক্রি ধাক্কা খেতে পারে, তা না জানলে সেগুলির শেয়ার সম্পর্কে সাবধান হতে পারবেন না! জানতে পারবেন না, মার্কিন মুলুকে ভিসা নীতি কঠোর হলে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার সম্পর্কে কেন সতর্ক থাকতে হবে।

যেমন...

মূলত চিনের বাজারে গাড়ি বিক্রি কমায় টাটা মোটরসের ব্যবসা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে, জানিয়েছেন অজিতবাবু। কমলবাবু জানান, ওএনজিসির লাভে টান পড়ার কারণ বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামের ওঠাপড়া। তেমনই র‌্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরিজ হাতে নেওয়ার পরে মুনাফায় টান পড়ে সান ফার্মাসিউটিক্যালসের। আমেরিকায় ওষুধ বিক্রি সংক্রান্ত কিছু আইন বদলেও ওই বাজারে ধাক্কা খায় তারা। এই সমস্যায় নামতে দেখা গিয়েছে এই তিন সংস্থারই শেয়ার দর।

সূচক উঠছে মানেই ভাল?

হতেই পারে, সূচক উঠছে কিন্তু শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। সূচক লাফিয়ে উঠল, কিন্তু আপনার হাতে থাকা শেয়ারের দর বাড়ল না।

কারণ

সেনসেক্সের অন্তর্গত ৩০টি এবং নিফ্‌টির ৫০টি সংস্থার শেয়ারের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রতিটির উপর নির্দিষ্ট পয়েন্ট (ওয়েটেজ) চাপানো থাকে। তাই বেশি ওয়েটেজের শেয়ারের দর বাড়লে সূচক উপরে ওঠে। অথচ দাম হয়তো পড়েছে তার আওতায় আপনার শেয়ারের। তখন সংশ্লিষ্ট সংস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিন। তার পর সিদ্ধান্ত নিন ওই শেয়ার ধরে রাখবেন কি না।

আপনার শেয়ারের হাল?

অনেক সময় দেখা যায় যে, কোনও শিল্প সামগ্রিক ভাবে ভাল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ওই শিল্পের একটি সংস্থার আর্থিক হাল খারাপ হয়েছে। হতে পারে তার হিসেবের খাতায় কোনও গোলমাল দেখা দিয়েছে। তখন শেয়ার বেচবেন কিনা ভাবতে হবে।

শেয়ার দরের সাযুজ্য

অনেক সময়ে দেখা যায়, আপনি যে সংস্থার শেয়ার কিনেছেন, তার ব্যবসা, আয় এবং মুনাফার সঙ্গে তার শেয়ারের দামের সাযুজ্য নেই। দাম যতটা হওয়া উচিত তার থেকে অনেক বেশি। ভাল করে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে হবে, আসলে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা আছে কি না। এ সব ক্ষেত্রে আচমকা ধস নামতে পারে ওই শেয়ার দরে।

হিসেবের খাতা বদলায় তো!

শেয়ার কেনার সময় হয়ত সংস্থাটির হিসেবের খাতা, ডিরেক্টরদের যোগ্যতা আপনাকে নিশ্চিন্ত করেছে। আর সেটা দেখেই আপনি সব ভুলে শেয়ার ধরে বসে আছেন। ভাবছেন, এমন ভাল সংস্থা যখন লগ্নি না ভাঙানোই ভাল। সব থেকে বড় ভুল এটাই। লক্ষ্য রাখুন ওই সমস্ত ক্ষেত্রে পরে কোনও এমন বদল হল কি না, যা শেয়ার দরকে টেনে নামাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Economy Investment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE