—প্রতীকী ছবি।
সূচকের ২০ হাজার থেকে ১৯ হাজারে গোঁত্তা খাওয়াকে অনেকে অনেক ভাবে দেখছেন। কিন্তু মূল প্রশ্ন হল আপনি কী ভাবে দেখবেন? এর আগের পর্যালোচনাতেয় বলেছি, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের পরামর্শকে শিরোধার্য করে লগ্নির রাস্তায় হাঁটাই ভাল। তাঁরা কিন্তু প্রত্যেকেই বলেছেন:
• সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বাজার স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করে লাভ তোলার জায়গা নয়
• ভাল সংস্থায় বিনিয়োগ করে গোটা বাজারে কী হচ্ছে তাকে ‘গুজব’ ধরেই এড়িয়ে চলা ভাল
• মাঝে মাঝে লগ্নির ঝোলা খুলে কোন শেয়ারের কী হাল তা দেখাও জরুরি
• আর এ সব ঝক্কির থেকে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা ঢেলে বাকি দায় ফান্ড হাউসের ঘাড়ে ছেড়ে দেওয়াটাও লগ্নির একটা ভাল রাস্তা
এ বার একটু তথ্যের দিকে চোখ রাখা যাক। গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমাদের দেশের সব শেয়ারের বাজারের দাম এক করে তার সঙ্গে জাতীয় উৎপাদনের অনুপাত দাঁড়িয়েছিল ১০৩.৩ শতাংশ। এই অনুপাতটা আসলে বাজারের অবস্থান নিয়ে একটা আন্দাজ এবং ওয়ারেন বাফেটেরও না কি খুব প্রিয় বিনিয়োগের সুযোগ সন্ধানের সুযোগ। সাধারণত বলা হয় যে এই অনুপাত যদি ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে তা হলে শেয়ার বাজারের গড় দাম ঠিকঠাক চলছে। এর থেকে বেশি হলেই বাজার তাতছে। আর ১০০ ছাড়ালে বাজার বেশ তেতে রয়েছে বলে মেনে নিতে হবে।
আর এই অঙ্ক ধরেই কিন্তু আমরা বলতে পারি আজ বাজারে যা হচ্ছে তার নেপথ্যে একটা কারণ হল বাজারের অত্যধিক তেতে থাকার অবস্থান থেকে একটু থিতু হওয়ার ইচ্ছা।
এর সঙ্গে রয়েছে নানান আর্থিক এবং বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত তো ছিলই, এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ। বিশ্ব বাজারেও তাই খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচকও অস্থির। আর তাকে বাগে আনতে চলছে সুদ বাড়ানোর পালা। এতে ঋণের খরচ বাড়ছে। তার একটা চাপ তো সংস্থার বিনিয়োগের উপর পড়বেই।
উল্টো দিকে, ঋণের উপর সুদ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণপত্রের দাম কমছে কিন্তু ঋণপত্রে বিনিয়োগের উপর আয় (ইল্ড) বাড়ছে। আগামী মঙ্গলবার আমেরিকার শীর্ষব্যাঙ্ক সুদের হারের পর্যালোচনায় বসছে। বাজারের ধারণা আবার সুদ বাড়বে। ব্যাঙ্ক অফ জাপানও তাদের নীতির পরিবর্তনের রাস্তায় হাঁটতে পারে ইয়েন-ডলার বিনিময় মূল্যকে বাগে আনতে।
সব মিলিয়ে একটা অস্থিরতা বিশ্ব বাজারে আছেই। বিশেষ করে ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব অপরিশোধিত তেলের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। দৈনন্দিন বাজারে তার কোনও প্রতিচ্ছায় এখনও দেখা না গেলেও, ভবিষ্যতের বাজারে কিন্তু তেলের দামা চড়তে শুরু করেছে। তার মানে বাজার মনে করছে এই দ্বন্দ্ব আগামী দিনে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
আর তাই শেয়ার ছেড়ে বড় বিনিয়োগ দৌড়চ্ছে চটজলদি তুলনামূলক ভাবে সুস্থির লাভের খোঁজে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) পর্যন্ত এনএসি-র তথ্য অনুযায়ী ২৬০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। তার চাপেও সূচক পড়েছে অনেকটাই।
এই অস্থিরতা আগামী সপ্তাহে আরও বাড়তে পারে। কিন্তু তাতে কি আপনার কিছু যাবে আসবে? আমি তো বলব সিপ চালু রাখুন। মাথায় রাখবেন আজ থেকে পাঁচ বছর বাদে সূচক যে স্তরে যাবে সেখানে গিয়ে পতনের স্তরও ২০ হাজারের উপর থাকতে পারে। মনে রাখবেন মাত্র কয়েক বছর আগেও নিফটি ৬ হাজার ছুঁয়ে রেকর্ড করার তকমা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম কেড়েছিল! এখন শুধু লগ্নি ধরে রেখে সুযোগ নেওয়ার সময়। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কিন্তু এই সময়ে নজর দিয়েছে ভাল মিড-ক্যাপ এবং স্মল-ক্যাপ শেয়ারে। আগামীর লাভের খোঁজে। আর তাই এদের সূচক কিন্তু অতটা অস্থির নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy