Advertisement
১০ মে ২০২৪

ফের বড়কে টেক্কা ছোট সংস্থার শেয়ারের

অনেকটা যেন ডেভিড বনাম গোলিয়াথের গল্প। এই নিয়ে পরপর দু’বছর রিটার্নের নিরিখে বড় সংস্থার শেয়ারকে পিছনে ফেলে দিতে চলেছে ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ার। তা-ও আবার যে-সে বড় সংস্থা নয়, খাস ‘ব্লু-চিপ’ শেয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

অনেকটা যেন ডেভিড বনাম গোলিয়াথের গল্প।

এই নিয়ে পরপর দু’বছর রিটার্নের নিরিখে বড় সংস্থার শেয়ারকে পিছনে ফেলে দিতে চলেছে ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ার। তা-ও আবার যে-সে বড় সংস্থা নয়, খাস ‘ব্লু-চিপ’ শেয়ার। দেশের বাজারের প্রায় ক্ষীর হিসেবে যারা নথিবদ্ধ বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স কিংবা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টিতে।

বছর শেষ হতে আর পাঁচ-ছ’দিন বাকি। দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে সেনসেক্স পড়েছে ৬ শতাংশেরও বেশি। অথচ সেখানে মিড ক্যাপ (মাঝারি মাপের) ও স্মল ক্যাপ (ছোট) সংস্থার শেয়ার দর গড়ে বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬% ও ৫%।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, নিখাদ শতাংশের হিসেবে দু’ধরনের শেয়ারের রিটার্ন তুলনা করা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, ছোট বা মাঝারি সংস্থায় লগ্নি করে এক সময় রিটার্ন মিলত নামমাত্র। ফলে দাম একটুখানি বাড়লেও শতাংশের হিসেবে তা এখন দাঁড়াচ্ছে অনেকখানি। বড় সংস্থাগুলির (বিশেষত ব্লু-চিপের) সেই সুবিধা নেই। যেমন, যাঁর বেতন ১০০ টাকা, ২০ টাকা বাড়লেই, তাঁদের আয় ২০% বাড়ে। কিন্তু বেতন ১,০০০ টাকা হলে, তা ২০% বাড়ার জন্য আয় বৃদ্ধি পেতে হয় ২০০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুক্তি এখানেও খাটে। তবে তা সত্ত্বেও এই দু’বছর ছোট ও মাঝারি সংস্থা যে বড় সংস্থার তুলনায় লোভনীয় রিটার্ন দিয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা।

শেয়ার বাজারের কারবারিদের মতে, ছোট ও মাঝারি সংস্থার এই সোনার দৌড় শুরু হয়েছিল গত বছর। ২০১৪ সালের শেষে ৬০% পর্যন্ত রিটার্ন দিয়েছিল তারা। আসলে গত বছর নরেন্দ্র মোদী দিল্লির তখ্‌তে বসার পরে জোরে দৌড়চ্ছিল পুরো শেয়ার বাজারই। দ্রুত বেড়েছিল বড় স‌ংস্থার শেয়ারের দামও।

কিন্তু প্রায় তিন দশক পরে কেন্দ্রে কোনও দলের একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুযোগে মোদী সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলবেন বলে যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনও সে ভাবে পূরণ হয়নি। ফের আটকে গিয়েছে পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) বিল। জমি আর দেউলিয়া বিলও বিশ বাঁও জলে। তার উপর ২০১৫ সাল জুড়ে বাজারকে ক্রমাগত তাড়া করেছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানো নিয়ে অনিশ্চয়তা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে চিনের অর্থনীতিতে ভাটার টান, ইউরোপে সঙ্কট ইত্যাদি। আর এই সমস্ত কিছুই বড় সংস্থার শেয়ার দর বাড়ার রাস্তায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা অনেকের। এর পক্ষে সওয়াল করছে পরিসংখ্যানও। গত মার্চে যেখানে সেনসেক্স সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় (৩০,০২৪.৭৪ পয়েন্ট) পৌঁছে গিয়েছিল, সেখানে এখন তা ঘোরাফেরা করছে ২৫ হাজারের ঘরে। অথচ তার পাশে মিড ক্যাপ সূচক সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল গত ১০ অগস্ট।

এমনিতে শেয়ার বাজারে ছোট, মাঝারি বা বড় সংস্থার একেবারে বাঁধাধরা কোনও সংজ্ঞা নেই। তবে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের মতে, ‘‘সাধারণত ১০ থেকে ১০০ কোটি টাকা মূলধনের সংস্থা স্মল ও মিডক্যাপ শ্রেণিতে পড়ে। তার বেশি হলে, বড় বা লার্জ ক্যাপ।’’ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই বড় সংস্থাগুলির মধ্যে আবার যেগুলি ব্লু-চিপ, তাদের ব্যবসার একটা বড় অংশ আসে রফতানি থেকে। এখন রফতানির হাল খারাপ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মুনাফায় টান। উল্টো দিকে, অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি সংস্থার বাজার ভারতে সীমাবদ্ধ। ফলে এখন ধীরে হলেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সুফল কুড়োচ্ছে তারা। পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার অমিত নিগম বলেন, ‘‘সমীক্ষায় দেখেছি, দেশের আর্থিক অবস্থা ভাল হতে থাকলে, তখন ভাল করে অনেক মিড ক্যাপ সংস্থার শেয়ার। সেখানে লগ্নি লাভজনক হয়। এখন তেমনটাই ঘটছে।’’

দীর্ঘ মেয়াদে কম ঝুঁকিতে নজরকাড়া রিটার্ন পেতে যে ব্লু-চিপ সংস্থা বেশি নির্ভরযোগ্য বাজি, তা নিয়ে সন্দেহ নেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞেরই। কিন্তু তার শেয়ার দর দ্রুত বাড়তে বৃদ্ধির চাকায় গতি প্রয়োজন আরও। কিছুটা শোধরানো প্রয়োজন বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতিও। কিন্তু সেই তুলনায় ছোট বা মাঝারি সংস্থার দর বেড়েছে অনেক ‘অল্প ঠেলাতে’ই। আর সেটাই এ ক্ষেত্রে ডেভিডের গোলিয়াথকে ‘হারিয়ে দেওয়ার রহস্য’ বলে মনে করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blue-chip shares mid-cap small cap stocks bse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE