ফাইল চিত্র।
সংস্থার ছত্রিশ বছরের ইতিহাসে ছেদ পড়েছিল মাত্র তিন বছরের জন্য। নিয়ন্ত্রণ গিয়েছিল প্রতিষ্ঠাতা ছাড়া অন্য কারও হাতে। কিন্তু বিশাল সিক্কা সরে যাওয়ার পরে আবার সেই প্রতিষ্ঠাতার হাতেই ফিরে গেল ইনফোসিস। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি জানিয়েছে, নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হচ্ছেন নন্দন নিলেকানি। সংস্থা ছাড়ার আগে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিইও-র দায়িত্ব সামলেছেন যিনি। ১৯৮১-তে পুণেতে এন আর নারায়ণমূর্তির যে ৬ বন্ধু ইনফোসিস গড়ার কাজ শুরু করেন, তাঁদের মধ্যেও নিলেকানি অন্যতম।
এমডি-সিইওর পদ থেকে সিক্কা সরে যাওয়ার পরেই নিলেকানির শীর্ষ পদে ফেরা নিয়ে ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল জল্পনা। এ নিয়ে চাপ বাড়ছিল ইনফোসিসের পর্ষদের উপরে। কিন্তু এই সব কিছু সত্ত্বেও এ দিন যে দ্রুততায় পালাবদল ঘটল, তাকে নাটকীয় আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। এ দিনই চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আর শেষাশয়ী। কো-চেয়ারম্যান থাকছেন না রবি বেঙ্কটেশনও (তিনি অবশ্য বোর্ডে থাকছেন)। পর্ষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সিক্কা, জেফ্রি এস লেম্যান, জন এচেমেন্ডি-ও। অন্তর্বর্তী এমডি-সিইও হিসেবে অবশ্য কাজ চালিয়ে যাবেন ইউ বি প্রবীণ রাও।
আরও পড়ুন: পিছিয়ে পড়া জেলা আটকে দিচ্ছে বৃদ্ধি
এর আগে ১৮ অগস্ট ইনফোসিস জানিয়েছিল, আগামী মার্চ পর্যন্ত এগ্জিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন সিক্কা। যাতে তার মধ্যে খুঁজে নেওয়া যায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির নতুন কর্ণধারকে। সরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন শেষাশয়ীও। কিন্তু এ দিন এখনই পাওনা-গন্ডা মিটিয়ে সিক্কার বিদায়ের কথা বলা হয়েছে সংস্থার বিবৃতিতে। সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের প্রশ্ন, প্রতিষ্ঠাতাদের প্রবল চাপেই কি এখনই বোর্ডও ছাড়লেন সিক্কা? এ ভাবে এক দিনে এত জন সরলেন পর্ষদ থেকে? আবার অনেকের মতে, সংস্থার এমন বিতর্কিত এবং টালমাটাল সময়ে অবশ্যই নিজের হাতে বাছাই করা লোকেদের সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন নিলেকানি। জল ঢালতে চাইবেন প্রতিষ্ঠাতা বনাম পর্ষদের লড়াইয়ে। তাই সে দিক থেকে এ দিনের ঘটনা প্রত্যাশিত বলেই তাঁদের দাবি।
নিলেকানি শুধু ইনফোসিসের প্রাক্তন সিইও কিংবা তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন, দুনিয়া জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ভারতের অন্যতম পরিচিত মুখ। আধারের তথ্যপ্রযুক্তি-কাঠামো তৈরির অন্যতম কাণ্ডারী। তাই তিনি ফিরলে লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরবে বলেছিলেন প্রাক্তন সিএফও বালকৃষ্ণন। এ জন্য সওয়াল করছিল ১২টি লগ্নিকারী সংস্থাও। সম্মিলিত ভাবে ইনফোসিসের প্রায় ১০% শেয়ার রয়েছে যাদের হাতে। প্রযুক্তির দূরদর্শিতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তো বটেই, নারায়ণমূর্তি-সহ বাকি প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে সুসম্পর্কও নিলেকানিকে ফেরানোর অন্যতম কারণ বলে ধারণা অনেকের।
২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সিইও। সংস্থা ছাড়েন ২০০৯ সালে
ন্যাসকমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
এ দিন নিলেকানি বলেছেন, ‘‘নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবে ইনফোসিসে ফিরে খুশি। বোর্ড এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি।’’ গত তিন বছর নেতৃত্বের জন্য সিক্কাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ করার কথা। সিক্কা এবং শেষাশয়ীও বলেছেন, এখন হাল ধরতে নিলেকানিই যোগ্যতম ব্যক্তি।
১৯৮১ সালে তৈরি হওয়ার পরে টানা ৩৩ বছর ইনফোসিসের রাশ ছিল মূর্তি-সহ সাত প্রতিষ্ঠাতার হাতে। শীর্ষ পদে ছিলেন তাঁদের কেউ-না-কেউ। সেই ‘রেওয়াজ ভেঙে’ ২০১৪ সালের জুনে সিক্কাকে আনা হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি সিক্কা তখন জার্মান তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক স্যাপ-এর চিফ টেকনোলজি অফিসার। তার পর থেকে ব্যবসা, মুনাফা কিংবা শেয়ার দরের নিরিখে ফল খারাপ করেনি ইনফোসিস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্থার খোলনলচে বদলেরও চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু বারবার সংস্থা পরিচালনা নিয়ে পর্ষদের দিকে তোপ দেগে গিয়েছেন নারায়ণমূর্তিরা।
কখনও সিক্কার বিপুল বেতন বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কখনও বা তোপ দাগা হয়েছে সামঞ্জস্যহীন দরে ইজরায়েলীয় সংস্থা পানায়া অধিগ্রহণ নিয়ে। সংস্থা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে প্রাক্তন সিএফও রাজীব বনসলকে আকাশছোঁয়া টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েও তিক্ততা তৈরি হয় দু’তরফে। খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এমনকী সিক্কার চার্টার্ড ফ্লাইট ব্যবহারের হিসেব পর্যন্ত দিতে হয়েছে ইনফোসিসকে!
এর পর ১৮ অগস্ট এমডি-সিইও পদ থেকে সরার কথা জানান সিক্কা। এ জন্য নাম না-করেও অভিযোগের আঙুল তোলেন মূর্তির দিকে। সিক্কার পাশে দাঁড়িয়ে কড়া ভাষায় মূর্তিকে বেঁধে পর্ষদও। পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করেন মূর্তি। এ দিন ইনফোসিসের প্রাক্তন কর্মীর পরিচয়ে এ নিয়ে প্রতিবাদও জানান কয়েক জন। এই টানাপড়েনে সংস্থার শেয়ার দর ধাক্কা খেয়েছে। টোল খেয়েছে ভাবমূর্তি। অপেক্ষা করছে নতুন প্রযুক্তির আক্রমণ, ভিসা-কড়াকড়ি সামলানোর চ্যালেঞ্জও। এ অবস্থায় ‘চেনা মুখ’ নিলেকানিতেই ভরসা রাখল ইনফোসিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy