Advertisement
০৫ মে ২০২৪
গোল্ড বন্ড

সরাসরি না কিনে সোনা কিনুন কাগজে

সোনার বার, কয়েন বা গয়না তো কেনেনই। ভেবে দেখুন গোল্ড বন্ডের কথাও। চুরির ভয় নেই। নেই লকারে রাখার ঝক্কি। এক নজরে চলুন দেখে নিই এর খুঁটিনাটিসদ্য শেষ হয়েছে ষষ্ঠ দফার গোল্ড বন্ড বা স্বর্ণ ঋণপত্র প্রকল্পের আবেদনপত্র জমার দিন। যাঁরা ধনতেরসের সময়ে এই বন্ড কেনার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, তাঁদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই।

অরিন্দম সাহা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

সদ্য শেষ হয়েছে ষষ্ঠ দফার গোল্ড বন্ড বা স্বর্ণ ঋণপত্র প্রকল্পের আবেদনপত্র জমার দিন। যাঁরা ধনতেরসের সময়ে এই বন্ড কেনার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, তাঁদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। নভেম্বরেই শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হবে এই ঋণপত্র। তখনই তা কিনতে পারেন।

পাশাপাশি, যাঁরা গয়না কেনেন সম্পদ হিসেবে, তাঁরাও স্বাদ বদলের জন্য ভাবতে পারেন এই গোল্ড বন্ডের কথা। ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই পাঁচ দফায় বাজারে আসা এই বন্ডে পরিবর্তন আনা হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে।

গোল্ড বন্ড কী?

সরাসরি না-কিনে, এ ক্ষেত্রে ঘরে আনা যাবে কাগুজে সোনা। বন্ড বা ঋণপত্র কেনার মাধ্যমে।

অর্থাৎ ধরুন কেউ লগ্নির জন্য ১০ গ্রাম সোনা কিনতে চান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা না-করে ১০ গ্রাম সোনার দাম গুনেই বন্ড কিনতে পারবেন। এতে সুদ মিলবে। সোনার দাম বাড়লে বাড়তি লাভও হবে। তবে এই প্রকল্প শুধু ভারতীয় নাগরিক ও সংস্থার জন্য।

সুবিধা

• এক বার নথিভুক্তির পরে এই বন্ড লেনদেন করা যাবে শেয়ার বাজারেও।

• বন্ড ভাঙানোর সময়ে সুদ তো মিলবেই, তখন সোনার দাম বাড়লে বাড়তি মুনাফা লগ্নিকারীর।

• সোনা কিনে বাড়িতে রাখার ঝুঁকি বা লকারে রাখার ঝক্কি এখানে নেই।

• গুনতে হবে না লকার ভাড়াও।

• অনেক বেশি সুরক্ষিত। গয়না বা পাকা সোনা চুরির ভয় এতে নেই।

সারমর্ম

• ষষ্ঠ দফার গোল্ড বন্ড শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার কথা ১৭ নভেম্বর। সরাসরি এতে আবেদনের সময়সীমা ছিল গত কাল পর্যন্ত।

• বন্ড কেনা ও বেচা— দু’ক্ষেত্রেই আগের সপ্তাহের সোম থেকে শুক্র, এই পাঁচ দিনের গড় সোনার দরের ভিত্তিতে দাম ঠিক হবে। ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষিত দাম গ্রাহ্য হবে এ ক্ষেত্রে।

• অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুসারে ষষ্ঠ দফার প্রকল্পের ক্ষেত্রে ১ গ্রাম সোনার বাজার দর ছিল ৩,০০৭ টাকা। ধনতেরসের মরসুমে এই দামেই ৫০ টাকা করে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে এই দফার বন্ডে প্রতি গ্রাম সোনার দর ধার্য হয়েছে ২,৯৫৭ টাকা।

• ক্রেতা কিন্তু ওই বাজার দরের উপরেই সুদ পাবেন। অর্থাৎ বাড়তি ৫০ টাকার উপরেও সুদ মিলবে।

• তবে এই দাম প্রযোজ্য হবে যাঁরা ইস্যু চলাকালীন আবেদন করেছেন, তাঁদের জন্য। বাকিদের বাজারের দর মেনেই বন্ড কিনতে হবে।

• ন্যূনতম ১ গ্রাম সোনা কিনতে হবে। অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ গ্রাম।

• কেনা যাবে একাধিক নামেও। সে ক্ষেত্রে লগ্নি ধরা হবে প্রথম আবেদনকারীর নামেই।

মেয়াদ

• প্রকল্পের মেয়াদ ৮ বছর। তবে ৫ বছরের পর থেকেই তা ভাঙানো যাবে।

• চাইলে তার আগেও শেয়ার বাজারে সেটি বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই বন্ডের ক্রেতাই হবেন তার নতুন মালিক।

সুদের হার

• ষষ্ঠ দফার বন্ডের সুদ বছরে ২.৫%। প্রতি ছ’মাসে তা জমা পড়বে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে। এর আগের পাঁচ দফায় সুদ ছিল ২.৭৫%।

• মাঝে সোনার দাম বাড়লে, বাড়তি লাভের সুবিধা রয়েছে।

কেনার পদ্ধতি

• এই বন্ড বিক্রি হয় ব্যাঙ্ক ও নির্দিষ্ট কিছু ডাকঘরে। এ ছাড়াও স্টক হোল্ডিং কর্পোরেশন, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ-সহ দেশের বড় এক্সচেঞ্জগুলির মাধ্যমেও তা কেনা যায়।

• এ জন্য ফর্ম ভরে তা ওই ব্যাঙ্ক অথবা ডাকঘরে জমা দিতে হয়। সেখানেই কতটা সোনা আপনি কিনতে চান, তা-সহ বিভিন্ন তথ্য জানাতে হয়।

• যেহেতু এখন আর সরাসরি আবেদনের ভিত্তিতে এই দফার বন্ড কেনার সুযোগ নেই, তাই এতে লগ্নি করতে শেয়ার বাজারে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জগুলির মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারেন।

• চাইলে ইন্টারনেটেই আবেদন করা যায়। নেটের সুবিধা না-থাকলে, ফোন বা ই-মেলের মাধ্যমে অথবা মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার ব্রোকারের সাহায্যে প্রকল্পে আবেদন করা যাবে।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

• যাঁরা শেয়ার কেনা-বেচা করেন না, অথচ গোল্ড বন্ডে লগ্নি করতে চান, তাঁরা কোনও ব্রোকার সংস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্পে লগ্নি করতে পারবেন।

• বন্ডের জন্য একটি হোল্ডিং সার্টিফিকেট মঞ্জুর করা হবে। যা পাওয়া যাবে কাগজে।

• শেয়ার বাজারে ওই বন্ড লেনদেন করতে চাইলে, সার্টিফিকেট নিতে হবে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

• ডি-ম্যাটে বন্ড নিতে চাইলে আবেদনের সময়েই তা জানিয়ে দিতে হবে। বন্ড সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পরেও ডি-ম্যাট করা যেতে পারে।

• এ জন্য যে কোনও ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি)-এর কাছে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

করছাড়

• গোল্ড বন্ডে পাওয়া সুদে উৎসে কর (টিডিএস) নেই।

• মেয়াদ শেষে পাওয়া মুনাফায় কোনও মূলধনী লাভকর (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) নেই।

• মেয়াদের আগে বন্ড বেচার সময়ে সোনার দাম বাড়লে অবশ্য দিতে হবে মূলধনী লাভকর।

• সে ক্ষেত্রে ৩ বছরের আগে বিক্রি করলে স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভকর (শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স), আর তার পরে হলে দীর্ঘমেয়াদি মুলধনী লাভকর (লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) দিতে হবে।

• যদি কোনও ব্যক্তির অন্য সূত্র থেকে আয় না-থাকে অথচ গোল্ড বন্ড থেকে মুনাফা কেন্দ্রের আয়কর ছাড়ের সীমার চেয়ে বেশি হয়, তা হলে তাঁকে নিয়ম মেনে কর জমা দিতে হবে।

লেখক ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের এডিটর অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স হেড

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gold bond
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE