Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কমেছে কর্মীর সংখ্যাই, ফের কেন্দ্রের মুখ পোড়াল কাজের অপ্রকাশিত তথ্য

সম্প্রতি যে অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন, মঙ্গলবার তাঁদের তোপ দেগেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

এনএসএসও-র পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের সেই তথ্য মাফিক ২০১৭-১৮ সালে দেশে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮.৬ কোটি।

এনএসএসও-র পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের সেই তথ্য মাফিক ২০১৭-১৮ সালে দেশে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮.৬ কোটি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

ভোটের মুখে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নতুন তথ্যে বিদ্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা-ও আবার সেই ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসের (এনএসএসও) রিপোর্টের তিরেই। যে রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আনেনি মোদী সরকার। এবং একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সেই রিপোর্ট দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। তাঁর টুইটে।

এনএসএসও-র পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের সেই তথ্য মাফিক ২০১৭-১৮ সালে দেশে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮.৬ কোটি। ১৯৯৩-৯৪ সালের পরে এই প্রথম তা কমেছে। এর আগে এই এনএসএসও-র ফাঁস হওয়া রিপোর্টেই জানা গিয়েছিল, ২০১৭-১৮ সালে দেশে বেকারত্ব হয়েছে ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ।

সম্প্রতি যে অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন, মঙ্গলবার তাঁদের তোপ দেগেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বলেছিলেন, এঁরা অভ্যাসের তাড়নায় সরকারের ভিন্ন মত পোষণ করেন। যাকে বলে অন্ধ সমালোচক (কমপালসিভ কন্ট্রারিয়ান)। বুধবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের পাল্টা, কেউ সরকারের সঙ্গে সহমত না হলে যদি অন্ধ সমালোচক হন, তা হলে যাঁরা সহমত বলাই যায় তাঁরা আসলে প্রভুর সুরে সুর মেলান (হিজ মাস্টার্স ভয়েস)।

আমি ভেবেছিলাম ভারতে দিনে ৪৫০টি কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
মোদী-নীতির জেরে ২০১৮ সালে ১ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।
ওই বছর প্রতিদিন মুছে গিয়েছে প্রায় ২৭,০০০টি করে চাকরি।
রাহুল গাঁধী, কংগ্রেস সভাপতি
*সঙ্গে পোস্ট করেছেন কর্মসংস্থান ঘিরে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টও

এ দিন মণিপুর ও ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে গিয়েও কর্মসংস্থান নিয়ে কেন্দ্রকে বেঁধেন রাহুল। বলেন, যে নরেন্দ্র মোদী বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁর আমলেই ২০১৮ সালে ১ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নতুন তোপ যে তথ্য ঘিরে
• এনএসএসও-র অপ্রকাশিত পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালে পুরুষ কর্মী ২৮.৬ কোটি।
• ১৯৯৩-৯৪ সালের পরে এই প্রথম ভারতে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা সরাসরি কমে গিয়েছে। এনএসএসও-র শেষ সমীক্ষা বলছে, ২০১১-১২ সালে তা বেড়ে পৌঁছেছিল ৩০.৪ কোটিতে।
• পুরুষ কর্মী কমেছে গ্রাম ও শহর, দু’জায়গাতেই। যথাক্রমে ৬.৪% ও ৪.৭%। অর্থাৎ গ্রামে বেশি।
• বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর অর্থ কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি হয়েছে নামমাত্র।

বিতর্ক যেখানে
• এর আগে জানুয়ারিতে ফাঁস হওয়া এনএসএসও-র রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ২০১৭-১৮ সালে বেকারত্ব ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ।
• পিএলএফএস-এর ভিত্তিতে এনএসএসও-র ২০১৭ সালের জুলাই ও ২০১৮-র জুনের মধ্যে চালানো সমীক্ষার রিপোর্টও এখনও প্রকাশ করেনি সরকার।
• বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের মুখে ইচ্ছে করেই কর্মসংস্থানের বিবর্ণ রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
• মুদ্রা যোজনায় কত কর্মসংস্থান হয়েছে তার রিপোর্টও ভোটের আগে প্রকাশ করছে না কেন্দ্র।
• পরিসংখ্যানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি বিবৃতি দেন ১০৮ জন অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী।
• সিএমআইই-র রিপোর্ট বলেছিল, গত ফেব্রুয়ারিতে বেকারত্ব ৭.২%। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বেরের পরে সব থেকে বেশি।

কেন্দ্রের দাবি
• গত পাঁচ বছরে শুধু তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান হয়েছে ৮.৭৩ লক্ষ।
• কংগ্রেস চাকরির তথ্য নিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে।
• অভ্যাসের তাড়নায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধ মত পোষণ করেন কিছু অর্থনীতিবিদ।

কর্মী যখন মহিলা
• গত বছর যে ১ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের বড় অংশ মহিলা। জানিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (সিএমআইই) রিপোর্ট।
• ফাঁস হওয়া সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালের চেয়ে ২০১৭-১৮ সালে মহিলা কর্মীর সংখ্যা ৮% কমে হয়েছে ২৩.৩%।
• সিএমআইই-র রিপোর্টেও প্রকাশ, গত বছরের মে থেকে অগস্টে ওই হার ছিল মাত্র ১০.৭%।

ভোটের আগে মুম্বইয়ের অদূরে চাষের মাঠ থেকে বিখ্যাত ধারাভি বস্তি এলাকা, সর্বত্র মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত মহিলা কর্মীরাও কর্মসংস্থান নিয়ে বিঁধছেন কেন্দ্রকে। বলছেন, কাজের সুযোগ বাড়ানোর দিশাই দেখাতে পারেনি তারা। মুম্বই থেকে ১৯০ কিমি দূরে চিঁচোলির বাসিন্দা ছায়া খাড়াদের বলেন, ‘‘আগে এ সময় গম চাষের কাজে ব্যস্ত থাকতাম। কিন্তু এখন যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় কাজ প্রায় নেই।’’ মুমতাজ মুলানির দাবি, ‘‘কাজের সুযোগ বাড়াতে কেন্দ্র কিছু করেনি। সেই দলকে ভোট দেব, যারা কারখানা গড়বে, কাজ দেবে।’’ অনেকেই এ জন্য দায়ী করছেন নোটবন্দি ও জিএসটিকে। কলকাতার অদুরে এমব্রয়ডারির কাজে যুক্ত নুরেন নেসারের দাবি, জিএসটির ধাক্কায় তাঁর সাপ্তাহিক আয় ৭০০ থেকে কমে হয়েছে ৩০০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Employment Economy Survey NSSO Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE