Advertisement
E-Paper

পাল্টাল শিল্প সূচক, মূল্যবৃদ্ধির হিসেব

বাদ গেল পেন, ক্যালকুলেটর, গুটখা, পুরনো পিঠকুঁজো রঙিন টিভির পিকচার টিউব ইত্যাদি। বদলে যোগ হল স্মার্টফোন, সিমকার্ড, ল্যাপটপ, নুডলস, এলইডি টিভি-র মতো পণ্যসামগ্রী। বাজারে এখন যে ধরনের পণ্য কেনা-বেচা হয়, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিল্প উৎপাদনের সূচক এবং পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হিসেব করার পদ্ধতি বদলাল মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০৪:১১
টি সি এ অনন্ত

টি সি এ অনন্ত

বাদ গেল পেন, ক্যালকুলেটর, গুটখা, পুরনো পিঠকুঁজো রঙিন টিভির পিকচার টিউব ইত্যাদি। বদলে যোগ হল স্মার্টফোন, সিমকার্ড, ল্যাপটপ, নুডলস, এলইডি টিভি-র মতো পণ্যসামগ্রী। বাজারে এখন যে ধরনের পণ্য কেনা-বেচা হয়, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিল্প উৎপাদনের সূচক এবং পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হিসেব করার পদ্ধতি বদলাল মোদী সরকার। পাল্টে ফেলল ভিত্তিবর্ষও।

এই জোড়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমূল বদলে গেল শিল্প ও মূল্যবৃদ্ধির ছবি। নতুন হিসেবে শিল্প চাঙ্গা। মূল্যবৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণে। সরকারের দাবি, এটিই অর্থনীতির আসল চিত্র। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, শিল্পের উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরতেই কি তবে এই পথে হাঁটল কেন্দ্র? মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে দেখিয়ে সুদ কমাতে চাপ বাড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর? জিডিপি-র হিসেব বদলের পরেও এই একই ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছিল বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। বিরোধীরা-সহ অনেকের অভিযোগ ছিল, বৃদ্ধির হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতেই তার হিসেবের পদ্ধতি বদলে ফেলেছে কেন্দ্র।

শুক্রবার কেন্দ্র জানাল, যে সব পণ্য এখন আর তেমন বিক্রি বা উৎপাদন হয় না, সেগুলি বাদ যাচ্ছে। যাদের বিক্রি বেশি, তারা তালিকায় ঢুকছে। সব মিলিয়ে, আরও বেশি কারখানা, আরও বেশি প্রাসঙ্গিক পণ্যের নিরিখে এখন শিল্প সূচক তৈরি হবে। ভিত্তিবর্ষও ২০০৪-’০৫ থেকে বদলে হচ্ছে ২০১১-’১২।

দেখা গেল, পুরনো পদ্ধতিতে গত অর্থবর্ষে শিল্প বৃদ্ধির হার যেখানে ০.৭%, সেখানে নতুন হিসেবে তা ৫%। একই ভাবে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও ৩.৭% থেকে এক ধাক্কায় নেমে আসছে ১.৭ শতাংশে। অর্থাৎ বার্তা স্পষ্ট। তা হল, মোদী জমানায় নোট বাতিলের পরেও শিল্পের ছবি উজ্জ্বল। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে।

শিল্প সূচক হিসেবের ঝুড়িতে পণ্য ৬২০ থেকে বেড়ে ৮০৯

বাদ কিছু পুরনো পণ্য। জায়গা এখন বেশি ব্যবহারের নতুনকে

একই ভাবে পণ্য বদলে যাচ্ছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হিসেব করার ঝুড়িতে

ওই মূল্যবৃদ্ধির হিসেবের থেকে বাদ পরোক্ষ করও

নোট বাতিলের পরেও শিল্পের ছবি ভাল দেখাতেই কি বদল?

মূল্যবৃদ্ধি কম দেখানো কি সুদ কমানোর জন্য চাপ দিতে?

ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে হিসেব ভাল দেখাতে বদল নয়

শিল্প ও মূল্যবৃদ্ধির আসল ছবি ধরা পড়বে এ বারেই

অনেকে জিডিপি-র হিসেব ও ভিত্তিবর্ষ বদলের সঙ্গে এর মিল পাচ্ছেন বিস্তর। বলছেন, সে বার ওই বদলের পরে বৃদ্ধির হার লাফিয়ে বেড়েছিল। অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, ২০০৪-’০৫ সালে অর্থনীতি টাট্টু ঘোড়ার মতো দৌড়চ্ছিল। তাই ভিত্তিবর্ষ হিসেবে তার সঙ্গে তুলনা হলে ছবি তো মলিন দেখাবেই। সেই তুলনায় ২০১১-’১২ সালে অর্থনীতির ঢিমে গতির সঙ্গে তুলনা করলে তা উজ্জ্বল দেখাবে। এ বারও সে কথা বলছেন অনেকে।

এ দিন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টি সি এ অনন্তের অবশ্য দাবি, ‘‘কমিয়ে বা বাড়িয়ে দেখানো সরকারের কাজ নয়। আসল লক্ষ্য, অর্থনীতির আসল ছবি যাতে পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়, তার ব্যবস্থা করা।’’ তাঁর কথায়, প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নতুন পণ্য বাজারে আসছে। তেমনই কিছু পণ্য বাজার থেকে বিদায়ও নিচ্ছে। সেই অনুযায়ী হিসেবের ঝুড়ি থেকে কিছু পণ্য বাদ দিতে হয়। কিছু যোগ করতে হয়। এতদিন এমন অনেক কারখানা থেকে তথ্য জোগাড় করা হত, যেখানে উৎপাদনই বন্ধ। তিনি জানান, নতুন পদ্ধতিতে মূলধনী পণ্য নিয়ে যেখানে কাজ চলছে, তারও হিসেব হবে। ধরা হবে থমকে থাকা প্রকল্পকেও।

পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি মাপার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় পরিবর্তন, হিসেব-নিকেশ থেকে পরোক্ষ কর বাদ দেওয়া। জিএসটি চালু হলে, প্রায় সমস্ত পরোক্ষ করই তাতে মিশে যাবে। জিএসটি চালুর পরে মূল্যবৃদ্ধি এক লাফে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, সেই সম্ভাবনা চাপা দিতেই কি এই নতুন হিসেব?

কেন্দ্রীয় শিল্পসচিব রমেশ অভিষেকের যুক্তি, ‘‘আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় এ ভাবেই হিসেব হয়। এর ফলে সরকারের করনীতির প্রভাব মূল্যবৃদ্ধির হারে পড়বে না।’’ অনন্ত বলেন, ‘‘জিএসটি-র প্রভাব খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারে দেখা যেতে পারে।’’ এ দিন ওই মূল্যবৃদ্ধির হার অবশ্য ৩ শতাংশের নীচে নেমেছে। খাদ্যপণ্যের দাম কমাই যার মূল কারণ।

ইতিহাস বলছে, এতদিন অন্তত ১০ বছর অন্তর ভিত্তিবর্ষ বদলেছে। এ বার তা বদলে ফেলা হল আট বছরের মাথাতেই। কেন এই তাড়াহুড়ো? অনন্তের ব্যাখ্যা, ‘‘আসলে পাঁচ বছর অন্তরই হিসেব বদলানো উচিত। তবেই অর্থনীতির আসল ছবি ফুটে ওঠে।’’ কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে এ দিন স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। এতে অর্থনীতির প্রকৃত ছবিটা ফুটে উঠবে বলে মনে করে
বণিকসভা সিআইআই-ও।

Industrial Index TCA Anant Index of Industrial Production
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy