Advertisement
E-Paper

বিন্দু থেকেই কিন্তু সিন্ধু

শুরু থেকেই সঞ্চয় করুন। চাকরি পাওয়ার পরে একেবারে প্রথম দিন থেকে। এই অভ্যাস অনেক স্বপ্ন সত্যি করতে পারে। লিখছেন শৈবাল বিশ্বাসসবে চাকরিজীবন শুরু করেছেন মধুলিকা। বেতনের ১০ হাজারই জমাচ্ছেন। কেরিয়ারের শুরু থেকে সঞ্চয়ের এই মানসিকতা প্রশংসা যোগ্য।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৭:১০

পরিচিতি: মধুলিকা (২৫)

কী করেন: সরকারি কর্মী

লক্ষ্য: ফ্ল্যাট কেনা। বছরে এক বার ঘুরতে যাওয়া। বছর দুয়েক পরে বিয়ে। স্বাস্থ্য বিমা

সবে চাকরিজীবন শুরু করেছেন মধুলিকা। বেতনের ১০ হাজারই জমাচ্ছেন। কেরিয়ারের শুরু থেকে সঞ্চয়ের এই মানসিকতা প্রশংসা যোগ্য। এটা কতখানি জরুরি, সে নিয়ে সচেতনতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায় না। মহিলাদের আরও কম। তবে অত টাকার রেকারিং ডিপোজিট করা উচিত নয়। এতে বাকি পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে। আজ তাঁকে লগ্নির বিভিন্ন পথের দিশা দিতে চেষ্টা করব। যাতে এত আগে সঞ্চয় শুরুর ফল পরবর্তী জীবনে ঠিক সময়ে পকেটে আসে।

বিপদের জন্য

হঠাৎ তৈরি হওয়া প্রয়োজনের কথা ভেবে সঞ্চয় করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ জন্য রেকারিংয়ের মেয়াদ ফুরোলে, হাতে আসা টাকার একটা অংশ লিকুইড ফান্ডে রাখুন। এর মোট অঙ্ক হবে তিন মাসের বেতনের সমান। মধুলিকার ক্ষেত্রে ৫১,০০০ টাকা।

বাকি যা রইল

আপৎকালীন প্রয়োজনের খাতে টাকা সরিয়ে রাখার পরে বাকি অংশ ঢালা যেতে পারে ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডে। দু’বছরের জন্য রাখলে, বিয়ের টাকার ব্যবস্থা এখান থেকেই হতে পারে। তা না চাইলে, দীর্ঘ মেয়াদে কোনও ব্যালেন্সড ফান্ডে রাখা যায়।

সামনের রাস্তা

এখন রেকারিংয়ে ১০,০০০ টাকা চলে যাচ্ছে। এতে সুদ তেমন ভাল নয়। রেকারিংয়ের মেয়াদ ফুরোলে ওই ১০ হাজার টাকা নিয়ে অন্য ভাবে ভাবতে হবে মধুলিকাকে। পুঁজিকে ভাগ করে দিতে হবে নানা ধরনের সঞ্চয় ও লগ্নি ক্ষেত্রে। কোথায়, কতটা জমাতে হবে, সেটা নির্ধারিত হবে তাঁর প্রয়োজন ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে। যেমন—

• মাসে ২,৫০০ টাকা রাখা যেতে পারে রেকারিংয়ে বা নগদে। প্রতি বছর বেড়াতে যেতে তা কাজে লাগবে।

• নানা ধরনের শিল্পের একাধিক সংস্থায় তহবিল ছড়িয়ে থাকে যে ফান্ডের (ডায়ভার্সিফায়েড), সেখানে মাসে ৪,৫০০ টাকার এসআইপি করা উচিত লম্বা মেয়াদের জন্য। যাতে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার তহবিল গড়া যায়।

• দীর্ঘ মেয়াদের জন্য পিপিএফে বরাদ্দ করা যেতে পারে ২,৫০০ টাকা।

• স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম হিসেবে তুলে রাখতে হবে মাসে ৫০০ টাকা।

ফ্ল্যাট না হয় পরেই

খুব অল্প বয়সে বা চাকরির শুরুতেই ফ্ল্যাট কেনার বিরোধী আমি। কারণ—

• চাকরির শুরুতে বেতন কম থাকে।

• খুব বেশি জমানোর সুযোগ থাকে না বলে ডাউনপেমেন্টে চাপ তৈরি হয়। তখন কম ডাউনপেমেন্ট করা ছাড়া উপায়ও থাকে না।

• চাকরিজীবনের শুরুতেই মাসিক কিস্তির বোঝা ঘাড়ে চাপলে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা তালগোল পাকাতে পারে।

বরং আমার মতে, ৩-৫ বছর অপেক্ষা করুন। ঠিক পথে পরিকল্পনা করে জমালে তত দিনে অনেকটা তহবিল তৈরি হবে। তখন সহজে ডাউনপেমেন্টের কথা ভাবা যাবে। আমার মতে, যে কোনও সম্পদ কেনার ক্ষেত্রেই অন্তত ৩০% বা তার বেশি ডাউনপেমেন্ট করা উচিত। তার উপর তত দিনে বেতনও বাড়বে তাঁর। ফলে আশা করা যায় কিস্তি চোকানোর ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য বিমার কথা ভাবুন

মধুলিকার বয়স কম। ফলে এখনই স্বাস্থ্য বিমা কেনার উপযুক্ত সময়। আপাতত ৩-৫ লক্ষ টাকার করলেই চলবে। প্রিমিয়ামও তেমন বেশি হবে না। দু’বছর অন্তর বিমার অঙ্ক বাড়ালে এক সময় শক্তপোক্ত রক্ষাকবচ তৈরি হয়ে যাবে তাঁর। রোগ-ভোগের খরচ নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। বিমা বাছার ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন—

• প্রিমিয়াম ও ক্লেমের অনুপাত।

• নো-ক্লেম বোনাসের ব্যবস্থা। অর্থাৎ বিমার টাকা দাবি না করলে যে বোনাস পাওয়া উচিত, তা কী ভাবে দেওয়া হয়। কোনও সংস্থা ২ বছর বিমার টাকা দাবি না করলে বোনাস হিসেবে বিমামূল্য দ্বিগুণ করে। কারও ক্ষেত্রে তা ৫ বছরে করা হয়।

• সাব লিমিট বা কো-পেমেন্ট যুক্ত প্রকল্প নেই তো!

• নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মাতৃত্বকালীন চিকিৎসা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা।

• নগদহীন চিকিৎসার সুবিধা।

স্বাস্থ্য বিমা সারা জীবনের জন্য জরুরি। তাই তাড়াহুড়ো না করে, সতর্ক ভাবে সব শর্ত ও সুবিধা খুঁটিয়ে দেখে প্রকল্প কেনা উচিত। নানা প্রকল্প পাশাপাশি রেখে দেখুন কোনটি নিজের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভাল।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

savings Invest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy