অভিযুক্ত নীরব মোদী।
নীরব মোদী কাণ্ডে চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। আর তাতে নাম জড়াল এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কর্ণধার-সহ দেশের বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ ব্যাঙ্ক কর্তারও।
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে (পিএনবি) প্রতারণার মামলায় সোমবার সিবিআই নীরব মোদী, তাঁর ভাই নীশল মোদী-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে। তাতে নাম রয়েছে নীরবের তিনটি সংস্থারও।
চার্জশিটে অভিযোগের আঙুল এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সিইও-এমডি উষা অনন্তসুব্রহ্মণ্যনের দিকেও। তিনি এর আগে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সিইও-এমডি ছিলেন। ওই পদে থাকাকালীন দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগেই উষার নাম চার্জশিটে রয়েছে। পিএনবি-র দুই এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর কে ভি ব্রহ্মাজি রাও ও সঞ্জীব শরণের নামও আছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। পিএনবি জানিয়েছে, ওই দুই কর্তাকে যাবতীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কেন্দ্রের সায় চেয়েছে তাঁদের বদলে অন্য কাউকে নিয়োগের জন্যও।
মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতে সিবিআইয়ের ৭,৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশের পরেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে উষার হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁকে পদ থেকে সরাতে ব্যাঙ্কের পর্ষদের বৈঠকও ডাকা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে তড়িঘড়ি পিএনবি-র পর্ষদের বৈঠক ডেকেও চার্জশিটে নাম থাকা দুই এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
দিনভর
• মোট ৭,৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট।
• অভিযুক্ত নীরব মোদী, ভাই নীশল মোদী সমেত ২২ জন। সঙ্গে নাম নীরবের তিন সংস্থার।
• অভিযোগের আঙুল এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সিইও-এমডি উষা অনন্তসুব্রহ্মণ্যনের দিকেও। গত বছরের মে পর্যন্ত পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) শীর্ষ পদে ছিলেন তিনি।
• গাফিলতির জন্য নোটিস পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে উষার কাছে। শুরু হয়েছে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে তাঁর ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও।
• চার্জশিটে নাম রয়েছে পিএনবি-র এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর কে ভি ব্রহ্মাজি রাও এবং সঞ্জীব শরণেরও।
• মেহুল চোক্সী এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেমসের বিরুদ্ধে আর একটি চার্জশিট সম্ভবত চলতি সপ্তাহের শেষেই।
অর্থ মন্ত্রকের ব্যাঙ্ক সচিব রাজীব কুমার বলেন, ১০ দিন আগেই উষা ও অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাফিলতির ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো হয়েছে নোটিস। রাজীব বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তাদেরই দায়িত্ব, প্রতারণার ঝুঁকি কমানো। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, শীর্ষ স্তরে দায়িত্বে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।’’
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, আগামী বছর লোকসভা ভোট। নীরব মোদী কাণ্ডে এমনিতেই মোদী সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। নীরব আপাতত ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকার তাই ব্যাঙ্ক-কর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে বোঝাতে চাইছে, ব্যাঙ্কে অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
কিন্তু তা করতে গিয়ে উষাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারণ নীরব-প্রতারণা ঘটেছে ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। এর মধ্যে উষা পিএনবি-র শীর্ষ পদে ছিলেন ২০১৫ সালের অগস্ট থেকে ২০১৭-র মে পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর আগে বা পরে যাঁরা ওই পদে ছিলেন, তাঁদের নাম চার্জশিটে নেই কেন? সিবিআই সূত্রের অবশ্য যুক্তি, চার্জশিটে নাম নেই মানে এমন নয় যে তাঁরা আতসকাচের বাইরে।
সিবিআই ও অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, এলওইউ-কে (লেটার অব আন্ডারটেকিং) কাজে লাগিয়ে পিএনবি-কে প্রতারণা করেছিলেন নীরব। এলওইউ অনুমোদন করা হলে সুইফ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে এক ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্যাঙ্কে খবর যায়। ২০১৬ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ ছিল, সুইফ্ট ব্যবস্থাকে ‘কোর ব্যাঙ্কিং সলিউশন’-এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পিএনবিতে তা রূপায়ণ হয়নি। সিবিআই ফেব্রুয়ারিতে উষাকে জেরা করেছিল। তিনি বর্তমানে ব্যাঙ্কগুলির সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশনেরও সভানেত্রী।
সিবিআইয়ের চার্জশিটে ২২ জনের মধ্যে ১২ জনই পিএনবির বর্তমান বা প্রাক্তন আধিকারিক। চার্জশিটে নীরবের তিনটি সংস্থার বিরুদ্ধে মোট ৬,৪৯৮ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই সপ্তাহের শেষে মেহুল চোক্সী ও গীতাঞ্জলি জেমসের বিরুদ্ধে আর একটি চার্জশিট পেশ হবে।
নীরবের আইনজীবীদের অবশ্য দাবি, আদালতে লড়াইয়ের হাতিয়ার তাঁদের ঝুলিতে মজুত। সিবিআইয়ের পাল্টা যুক্তি, নীরব ও নীশলেরই সংস্থার হয়ে সইয়ের অধিকার ছিল। তাঁরা প্রতারণার কথা জানতেন। ৪২টি জায়গায় হানা দিয়ে প্রামাণ্য নথি উদ্ধার হয়েছে। ১৫ জন আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। সাক্ষ্য ৮০ জনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy