Advertisement
E-Paper

কালো টাকা ‌ধরতে এখন মোদী-জেটলির চোখ বিদেশে

মোদী সরকারের নজরে এ বার বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা। কিন্তু দেশে নোট বাতিলের পরে কী পরিমাণ বেহিসেবি টাকা গত পঞ্চাশ দিনে উদ্ধার হল, সে প্রশ্নের উত্তরে মৌনই রইলেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
নয়াদিল্লিতে জেটলি। ছবি:পিটিআই

নয়াদিল্লিতে জেটলি। ছবি:পিটিআই

মোদী সরকারের নজরে এ বার বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা। কিন্তু দেশে নোট বাতিলের পরে কী পরিমাণ বেহিসেবি টাকা গত পঞ্চাশ দিনে উদ্ধার হল, সে প্রশ্নের উত্তরে মৌনই রইলেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি।

শুক্রবারই ফুরিয়ে গেল অচল নোট বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার সময়সীমা। কত নোট জমা পড়ল, অচল নোটের বদলে কত নতুন নোটই বা বাজারে এল, সে-সব তথ্য এ দিন জানায়নি কেন্দ্র। এখনও ওঠেনি সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলার ঊর্ধ্বসীমা। তার বদলে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ইঙ্গিত, আইনের ফাঁক গলে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিদেশে পাচার করা ও ‘নিরাপদে’ গচ্ছিত রাখার রাস্তা বন্ধ করতে চান তাঁরা।

সেই লড়াইয়ে আজ জেটলির দাবি, মরিশাস, সাইপ্রাসের পরে এ বার সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও চুক্তি করে বিদেশে কালো টাকা পাঠানো ও তা ফের দেশে ফেরানো বন্ধ করছে সরকার। পাশাপাশি সুইৎজারল্যান্ড থেকেও এ বার সেখানে ভারতীয়দের যাবতীয় বিনিয়োগের তথ্য আসতে শুরু করবে। ফলে কালো টাকা জমানোর পুরনো স্বর্গ বলে পরিচিত সুইৎজারল্যান্ডের পথও বন্ধ হবে।

পুরনো পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিল করে কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তখনই কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছিল, মোদী যে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা করার কথা বলেছিলেন, তার কী হল? আজ জেটলির পাল্টা দাবি, ‘‘সংসদের ভিতরে-বাইরে বারবার দাবি উঠেছে, বিদেশে কালো টাকা পাঠানোর রাস্তা বন্ধ করা হোক। আমরা এ বার সেটাই করলাম।’’

কীভাবে? জেটলির ব্যাখ্যা, মরিশাস, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলির সঙ্গে ‘ডাবল ট্যাক্স অ্যাভয়েডেন্স এগ্রিমেন্ট’ বা দ্বৈত কর প্রতিরোধ চুক্তি ছিল, যাতে ওই সব দেশ থেকে কোনও লগ্নি এলে, বিনিয়োগকারীদের দু’দেশেই কর মেটাতে না-হয়। কিন্তু তার অপব্যবহার হচ্ছিল। এ দেশে মূলধনী আয়ের উপর কর দিতে হলেও ওই দেশগুলিতে মূলধনী আয়ের উপর করই নেই। ওই চুক্তির দৌলতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে কাগজে-কলমে সংস্থা তৈরি করে সেখান থেকে ভারতে লগ্নি করা হত। যাতে মূলধনীয় আয়ের উপর কর দিতে না হয়। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, সেই কারণেই মরিশাস থেকে ভারতে সব থেকে বেশি বিদেশি লগ্নি আসে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর।

জেটলি বলেন, চলতি বছরে একে একে মরিশাস-সাইপ্রাসের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করা হয়েছে। এ বার সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও চুক্তি সংশোধিত হল। যার সুবাদে ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে ওই দেশগুলি থেকে আসা লগ্নিতেও মূলধনী আয়ের উপর কর বসবে। প্রথম দু’বছর ভারত ও সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে অর্ধেক পরিমাণে কর ভাগাভাগি হবে। তারপর থেকে পুরো করই ভারত পাবে। এর ফলে কর ফাঁকি দিতে মরিশাস-সিঙ্গাপুর হয়ে ঘুরপথে লগ্নি বন্ধ হবে। জেটলি বলেন, সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গেও তথ্য আদান-প্রদানের চুক্তি হয়েছে। ২০১৯ থেকে ওখানে কোনও লগ্নি হলেই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র তার খবর পাবে। ২০১৮ থেকে যে সব লগ্নি হবে, তারও তথ্য মিলবে।

বিদেশে কালো টাকা যাওয়া রোখার ঘোষণা হলেও, নোট বাতিলের ফলে কত কালো টাকা ধরা পড়ল, তা নিয়ে আজ মোদী-জেটলি মুখ খুলতে চাননি। মোদী ডিজিটাল লেনদেনের জন্য নতুন ভীম অ্যাপ চালু করে বলেছেন, ‘‘জীবনভর যাঁরা নৈরাশ্যবাদী, তাঁদের জন্য আমার কাছে কিছু নেই। আশাবাদীদের জন্য হাজারো দাওয়াই আছে। এতদিন টু-জি কেলেঙ্কারিতে কত টাকা গেল, সেই হিসেব হত। এখন সবাই জানতে চান, কত টাকা ফেরত এল?’’ জেটলির যুক্তি, কে, কোথায়, কত জমা দিয়েছেন, সব হিসেবই রয়েছে। এ বার কার কর মেটানো হয়েছে, কার হয়নি, সেই হিসেব হবে।

অচল ৫০০-১০০০ টাকার নোটে বাজার থেকে প্রায় ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তার বদলে কত টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়েছে, তা নিয়েও মুখ খুলতে চাননি জেটলি। এখনও ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা বহাল। কবে তা উঠবে, তা-ও খোলসা করেনি কেন্দ্র।

উত্তর মেলেনি

• কত বাতিল নোট জমা

•কত নতুন নোট বাজারে

• কবে উঠবে সপ্তাহে

আজ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেছিলেন, ‘‘আশা করা যায়, ২ জানুয়ারি থেকে আর কোনও ঊর্ধ্বসীমা, ব্যাঙ্কের বাইরে লাইন থাকবে না, এটিএম-এ সর্বক্ষণ টাকা মজুত থাকবে।’’ কিন্তু জেটলির বক্তব্য, যখন যেমন সিদ্ধান্ত হবে, জানানো হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিদিন টাকা ছাড়ছে। চাহিদা অনুযায়ীই নগদ জোগানো হবে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কোথাও কোনও অশান্তির ঘটনাও ঘটেনি। চিদম্বরমের পাল্টা যুক্তি, ‘‘মানুষ ধৈর্য রেখেছেন মানেই তাঁরা খুশি, এমন নয়।’’ তবে এ দিন রাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটিএম থেকে দৈনিক টাকা তোলার সীমা ১ জানুয়ারি থেকে বেড়ে হচ্ছে ৪,৫০০। ব্যাঙ্ক-এটিএম থেকে টাকা তোলার সাপ্তাহিক সীমা অবশ্য ২৪ হাজারই থাকছে।

দু’দিন আগে রাহুল গাঁধী পাঁচটি প্রশ্ন তুলে জানতে চেয়েছিলেন, কার পরামর্শে মোদী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। আজ চিদম্বরমও দাবি তুলেছেন, ৮ নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার বিষয়সূচি ও কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হোক। ওই দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিবৃতিটিও প্রকাশ্যে আনা হোক।

পুরনো কর নিয়ে রফার সময় বাড়ল। সংবাদ সংস্থার খবর: ভারতে বিভিন্ন সংস্থার পুরনো লেনদেনের উপর আয়কর দফতরের কর চাপানো নিয়ে বিতর্ক মেটাতে কেন্দ্র আগেই একটি রফা প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। এ বার ভোডাফোন ও কেয়ার্ন এনার্জির মতো সংস্থার জন্য সেই প্রকল্প মেনে নেওয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর থেকে আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি করল কেন্দ্র। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রের প্রস্তাব, ভারতে পুরনো আর্থিক লেনদেনে কর বকেয়া রাখা সংস্থা যদি আসলের অঙ্ক মিটিয়ে দেয়, তা হলে সুদ ও জরিমানা বাবদ ধার্য অর্থ মকুব হয়ে যাবে।

Narendra Modi Arun Jaitley Black money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy