প্রযুক্তি। আর প্রয়োজনে বন্ধকের নিয়ম বদল।
এই দু’য়ের হাত ধরেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আগামী দিনে সকলের দরজায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।
সোমবার হায়দরাবাদে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পঞ্চায়েতি রাজ আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে সকলের হাতের নাগালে নিয়ে যেতে বন্ধকের নিয়ম-কানুন বদলানোর কথা ভাবতে হবে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে। এখন অনেক ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের কমে ধার দিতে কোনও কিছু বন্ধক রাখতে পারে না বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। আগামী দিনে সেই নিয়ম পাল্টানোর কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। যাতে বন্ধক ছাড়া ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি মেপে শুরুতেই তা থেকে পিছিয়ে না যায় ব্যাঙ্কগুলি। সেই সঙ্গে, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার সুদের সর্বোচ্চ হার কমানোর কথাও ভাবনা-চিন্তা করা উচিত বলে তাঁর অভিমত।
দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে প্রযুক্তি যে বড় হাতিয়ার, গত তিন বছরে সে কথা বারবার বলেছেন রাজন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ থেকে বিদায়বেলাতেও এ দিন ফের তার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, সহজে টাকা তোলা ও জমা দেওয়ার সুবিধা, ডাকঘর ও অন্যান্য সংস্থার তৈরি পেমেন্টস ব্যাঙ্ক এবং ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই)-এর মাধ্যমে মোবাইলে টাকা লেনদেনের সুবিধা সকলকে ব্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সুবিধা হবে ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্টরা আধার নম্বরের ভিত্তিতে যে কোনও ব্যাঙ্কের আমানত সংগ্রহ করলেও। এ জন্য তাদের নথিভুক্ত করছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
রাজন বলেন, ‘‘স্মার্টফোনের ব্যবহার যে ভাবে বেড়েছে, তাতে ইউপিআই নিয়ে আমি আশাবাদী। এতে সহজ হবে টাকার হাতবদল।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে এই ব্যবস্থা তৈরি করেছে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)। আমজনতার জন্য তা এখনও চালু হয়নি। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, অগস্টের মধ্যে সারা দেশে ইউপিআই পরিষেবার অ্যাপ চালু হওয়ার কথা। এনপিসিআইয়ের দাবি, এতে টাকা লেনদেন সহজ হবে। পকেটে টাকা, ডেবিট কার্ড কিংবা ক্রেডিট কার্ড না থাকলেও কেনাকাটা আটকাবে না। টাকা পেতে বা পাঠাতে জানতে হবে না আইএফএসসি কোড-সহ অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি। নেট-ব্যাঙ্কিং না করেও টাকা লেনদেন করা যাবে স্মার্টফোনে।
প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে এ দিন পেমেন্টস ব্যাঙ্কের প্রসঙ্গও তুলেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার। বিশেষত বলেছেন ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্কের কথা। তাঁর জমানাতেই পেমেন্টস ব্যাঙ্ক খুলতে গত অগস্টে এগারো আবেদনকারীকে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের মধ্যে কয়েক জন পরে পিছিয়ে গেলেও, আগামী দিনে এর দৌলতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ছবি আমূল বদলে যাবে বলে অনেকের ধারণা।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগেই বলেছেন, ‘‘এর ফলে গ্রামে আরও অনেক বেশি মানুষের দরজায় পৌঁছে যাবে ব্যাঙ্ক।’’ পেমেন্টস ব্যাঙ্কের খসড়া নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছিল, তা তৈরির মূল লক্ষ্য, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধা দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও সকলের দরজায় পৌঁছে দেওয়া। যাতে সেখানে অন্তত তুলনায় ছোট অঙ্কের আমানত জমা করা যায়। তার মারফত এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় টাকা পাঠাতে পারেন সাধারণ মানুষ। বিশেষত ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য শহর বা ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি ছিল, পেমেন্টস ব্যাঙ্ক মারফত অনলাইনে কর দেওয়া থেকে শুরু করে ই-কমার্সের বিভিন্ন লেনদেনে টাকা মেটানোর পরিষেবাও মিলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যাঙ্ক ব্যবহার হতে পারে স্কুল-কলেজের বেতন মেটানো থেকে পেনশন পাওয়ার মতো হাজারো কাজে। এমনকী সরকারি ভর্তুকির টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে পেতেও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে বলে তাঁদের অভিমত।
বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশ মনে করছেন, পেমেন্টস ব্যাঙ্কের প্রধান হাতিয়ার হবে প্রযুক্তি। কারণ, এই সমস্ত তারা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মতো বড় শাখা খুলে যত না ব্যবসা করবে, তার থেকে অনেক বেশি আঁকড়ে ধরবে ইন্টারনেটকে। ফলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। খুলে যাবে নিত্য-নতু চিন্তার দিগন্ত।
ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে সকলের দরজায় পৌঁছতে এ দিন এই প্রযুক্তি-নির্ভর পেমেন্টস ব্যাঙ্কের উপর আস্থা রাখার কথাই বলেছেন রাজন। বিশেষত বলেছেন ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্কের কথা। সারা দেশে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ডাকঘরের মধ্যে ১ লক্ষ ৩৯ হাজারই গ্রামাঞ্চলে। এ বার সেই উপস্থিতিকে হাতিয়ার করে প্রত্যন্ত প্রান্তেও সকলের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে প্রায় সকলেরই অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy