Advertisement
০৮ মে ২০২৪
লাল-সবুজে টানাটানি বাজারে

সাময়িক লোকসান না ধরাই ভাল

বড় দুই সূচকের অবস্থান খুব নীচে না হলেও, এই পর্বে ভাল রকম জমি খুইয়েছে বহু ছোট এবং মাঝারি শেয়ার। পিএনবি-কাণ্ডের পরে বড় রকমের পতন হয়েছে বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারের।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

বাজারে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা কমার তেমন লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। পরপর কয়েক দিন পতনের পরে মাঝেমধ্যে সূচক সবুজে ফিরলেও তা ধরে রাখতে পারছে না। সকালে বাজার বেশ খানিকটা উপরে খুললেও বিকেলে তা আবার লালে চলে যাচ্ছে। এই রকম টানাপড়েনে সপ্তাহ শেষে সেনসেক্স থেমেছে ৩৩,৩০৭ পয়েন্টে, নিফটি ১০,২২৭ অঙ্কে।

বড় দুই সূচকের অবস্থান খুব নীচে না হলেও, এই পর্বে ভাল রকম জমি খুইয়েছে বহু ছোট এবং মাঝারি শেয়ার। পিএনবি-কাণ্ডের পরে বড় রকমের পতন হয়েছে বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারের। এই অবস্থায় ন্যাভ নেমেছে অনেক ইকুইটি ফান্ডের। গত কয়েক মাসে সেনসেক্স ৩৩-৩৬ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরার সময়ে যাঁরা শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নি করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এখনও লাভের মুখ দেখেননি। বরং হয়তো কিছুটা লোকসানই হয়েছে। ইকুইটিতে লগ্নি করলে অবশ্য এই সাময়িক লোকসানকে ধরলে চলবে না। ৩১ মার্চের আগে দাম বাড়লে শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলবেন বলে যাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন, তাঁরাও হতাশ। এপ্রিল থেকে চালু হবে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর। অবশ্য ছাড় আছে প্রথম এক লক্ষ টাকার লাভে।

দেশের ভিতর ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি ঘটনা বিশেষ ভাবে ভাবাচ্ছে বাজারকে। পিএনবি কাণ্ডের বড় প্রভাব পড়ছে নানা শিল্পে। হিরে শিল্পে, বিশেষ করে নীরব মোদী ও তাঁর মামা মেহুল চোক্সীর সংস্থাগুলিতে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। খাঁটি কি না, তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ায় চাহিদা কমেছে হিরে ও দামি পাথরের। সন্দেহ দেখা দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলির পাহাড় পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের কতটা সত্যিকারের ব্যবসায়িক কারণে, আর কতটা অন্য কারণে, তা নিয়ে। সন্দেহ, আরও জালিয়াতি লুকিয়ে থাকতে পারে এই সব ঋণের মধ্যে। সেই সব প্রকাশ পেলে বাজারের পক্ষে আদৌ ভাল হবে না। পিএনবি-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কড়া হয়েছে। এতে কিন্তু ব্যবসায় ঋণ-প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সৎ ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়ছেন।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জল ঘোলা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে আমদানি শুল্ক বসানোয়। এতে তৈরি হয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধের পরিস্থিতি। আতঙ্কে পড়েছে টাটা স্টিল, সেল ও নালকোর শেয়ার দর। অনাদায়ী ঋণ ও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত— দু’টিই কিন্তু ভোগাবে একটু বড় মেয়াদে।

বাজারের জন্য যা ভাল, তা হল: এত গোলযোগ সত্ত্বেও ইকুইটি ফান্ডের প্রতি মানুষের অটুট আস্থা। গত দু’মাসে ভাল লগ্নি এসেছে ইকুইটি, ব্যালান্সড এবং ইএলএসএস ফান্ডে। এর বেশ কিছুটা যাবে বাজারে। অনেক শেয়ারেরই দর নামায় অপেক্ষাকৃত কম দামের সুবিধা নিতে লগ্নি চালানোর পক্ষপাতী বহু বিনিয়োগকারী। ব্যাঙ্ক-সুদ বে়ড়ে ওঠায় ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি বাড়লেও, কমেছে গিল্ট এবং ইনকাম (ঋণপত্র-নির্ভর) ফান্ডে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে লগ্নির চিত্র।

আর্থিক বছর এই মুহূর্তে একদম শেষের মুখে। চলতি মাসের বাকি ক’দিনের মধ্যে যে-সব কাজ অবশ্যই সেরে ফেলতে হবে, তা হল:

• ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের বকেয়া আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া।

• ২০১৭-’১৮ বছরের জন্য কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে লগ্নি সেরে ফেলা।

আগামী কয়েক দিনে বাজারে নতুন ইস্যু আনবে কয়েকটি সংস্থা। আরও কিছু সংস্থা নতুন বছরে বাজারে আসতে প্রস্তুত হচ্ছে। সময়টা যদিও তেমন অনুকূল নয়, তবুও শীঘ্রই আসবে আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ, রিলায়্যান্স জেনারেল ইনশিওরেন্স, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স, বন্ধন ব্যাঙ্কের মতো সংস্থা।

বন্ধন ব্যাঙ্কের ইস্যু চালু থাকবে ১৫-১৯ মার্চ। মূল্যবন্ধনী ৩৭০-৩৭৫ টাকা। মোট সংগ্রহের লক্ষ্য ৪,৫০০ কোটি। অনেকেই হয়তো উৎসাহিত হবেন কলকাতা ভিত্তিক নতুন ব্যাঙ্কটির শেয়ার কিনতে, যদিও সময়টা ব্যাঙ্কিং শিল্পের পক্ষে ভাল নয়।

এপ্রিল থেকে ইকুইটি ফান্ডের ডিভিডেন্ডে ১০% কর চালু হবে। যে কারণে বেশ কয়েকটি ইকুইটি ফান্ড মার্চেই মোটা ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এপ্রিল থেকে ডিভিডেন্ড বিকল্প থেকে গ্রোথ বিকল্পে সরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE