Advertisement
E-Paper

স্থায়ী আমানতে কর বাঁচানোর নয়া নিয়মে ভোগান্তি প্রবীণদের

ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে স্থায়ী আমানতের সুদে করছাড় পাওয়ার জন্য এপ্রিল মাসে ১৫জি ও ১৫এইচ ফর্ম জমা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু জুন মাস ঘুরতেই উৎসে কর কাটার (টিডিএস) নোটিস পেয়ে হতবাক তাঁদের অনেকেই। বিশেষত প্রবীণদের দল।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭

ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে স্থায়ী আমানতের সুদে করছাড় পাওয়ার জন্য এপ্রিল মাসে ১৫জি ও ১৫এইচ ফর্ম জমা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু জুন মাস ঘুরতেই উৎসে কর কাটার (টিডিএস) নোটিস পেয়ে হতবাক তাঁদের অনেকেই। বিশেষত প্রবীণদের দল।

সুদে পাওয়া টাকায় কর ফাঁকি রুখতে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে তথ্য জমার নিয়ম ও ফর্মের ধাঁচ দু’টিই বদলেছে কেন্দ্র। আগে এ ক্ষেত্রে জানাতে হত শুধু প্রাপ্য সুদের অঙ্ক। সেই টাকা করযোগ্য কি না, তা-ও নিজে জানালেই চলত। কিন্তু নতুন নিয়মে টিডিএস কাটা আটকাতে, ওই সুদ যে করযোগ্য নয়, তার প্রমাণ দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। আর তা করতে হচ্ছে ডাকঘরে এবং মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) থাকা প্রতিটি ব্যাঙ্কে। সেই প্রমাণে তারা সন্তুষ্ট হলে, তবেই রেহাই মিলবে টিডিএস থেকে। সঙ্গে রয়েছে করসাশ্রয়ী সঞ্চয় বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় হিসেবের ঝক্কি।

বহু গ্রাহকের অভিযোগ, নতুন পদ্ধতির এই জটিলতা প্রবল অসুবিধায় ফেলছে তাঁদের। বিশেষত বেকায়দায় পড়ছেন বয়স্করা। অবসরের পরে সংসার চালাতে যাঁদের অনেকেই ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের সুদের উপর নির্ভরশীল।

ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতে পাওয়া সুদে টিডিএস কাটা আটকাতে জমা দিতে হয় ১৫জি এবং ১৫এইচ ফর্ম। এর মধ্যে ১৫এইচ ৬০ পেরোনো প্রবীণ নাগরিকদের জন্য। আর বাকিদের জন্য ১৫জি। এত দিন সেখানে শুধু সুদের অঙ্ক জানাতে হত। সেই সঙ্গে নিজেই ঘোষণা করতে হত যে, ওই টাকা করযোগ্য নয়।

ফর্মের নাম একই থাকলেও, এখন তার ধাঁচ বদলে ফেলেছে কেন্দ্র। নতুন ব্যবস্থায়—

(১) শুধু প্রাপ্য সুদের পরিমাণ জানালে হবে না। অন্য কোনও সূত্র থেকে আয় থাকলে, তা-ও ঘোষণা করতে হবে। জানাতে হবে তার মোট অঙ্ক।

(২) ওই ফর্ম (১৫জি বা ১৫এইচ) গ্রাহক ডাকঘর বা অন্য কোনও ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছেন কি না, জানাতে হবে সে কথাও। অর্থাৎ, এমন মোট কতগুলি ফর্ম তিনি জমা দিয়েছেন এবং তাতে ঘোষিত মোট আয় কত, তা লিখতে হবে গ্রাহককে।

(৩) আলাদা ভাবে করসাশ্রয়ী লগ্নি (যেমন, জীবনবিমা, পিপিএফ ইত্যাদি) লেখার জায়গা ফর্মে নেই। তাই গ্রাহককে নিজেকেই সে সব বাদ দিয়ে হিসেব করে জানাতে হবে যে, তাঁর মোট কত টাকা করযোগ্য। আইন মেনে দাখিল করতে হবে প্রমাণও।

এমনিতে আয়কর ফাঁকি রুখতে কেন্দ্র যে-সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ১৫জি ও ১৫এইচ ফর্ম সংশোধন তারই অঙ্গ। কিন্তু অনেকেরই অভিযোগ, এই বিষয়গুলির জন্য বেশ খানিকটা জটিল হয়ে গিয়েছে ওই দুই ফর্ম জমা দেওয়া। তাঁদের দাবি, প্রথমত গ্রাহকদের অনেকেই এই বদল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তার উপর নিজেদের করযোগ্য আয়ের হিসেব কষতে গিয়ে আতান্তরে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তা ছাড়া, এখন শুধু আয়ের হিসেব জমা দেওয়াই তো যথেষ্ট নয়। ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর এ ব্যাপারে কোন প্রমাণে বা কী ভাবে সন্তুষ্ট হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

আয়কর বিশেষজ্ঞদের অনেকেও মনে করছেন, এখন জটিল হয়ে গিয়েছে পুরো বিষয়টি। যেমন, অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার্সের সহ-সভাপতি এবং আয়কর বিশেষজ্ঞ নারায়ণ জৈন বলেন, ‘‘প্রথমত প্রবীণ নাগরিক-সহ অনেকের পক্ষেই করসাশ্রয়ী লগ্নি বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় হিসেব করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, নতুন ব্যবস্থা এখনও অনেকেই জানেন না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।’’ জৈনের পরামর্শ, ব্যবস্থাটিকে সরল করতে উদ্যোগী হতে হবে আয়কর কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে, বদল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হোক সাধারণ মানুষের মধ্যে।

শুধু ১৫জি, ১৫এইচ দাখিল করলেই হবে না

করছাড়ের অঙ্ক সমেত গ্রাহককে ঘোষণা করতে হবে করযোগ্য আয়

তা যাচাই করবে ব্যাঙ্ক-ডাকঘর

Senior citizen Bank Fixed deposits
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy