Advertisement
০৪ মে ২০২৪

...যার শেষ ভাল

মেয়ের ভিন্‌ রাজ্যে বিয়ে হয়েছে সেই কবে। চাকরির সূত্রে ছেলেও বিদেশে। বসতবাড়িতে আর পাকাপাকি ভাবে ফেরার সম্ভাবনা নেই কারও। শেষ বয়সে আপনি তা বুকে আগলে পাহারা দেবেন কত দিন? সময় থাকতে হিল্লে করার উপায় বাতলালেন অমিতাভ গুহ সরকারমেয়ের ভিন্‌ রাজ্যে বিয়ে হয়েছে সেই কবে। চাকরির সূত্রে ছেলেও বিদেশে। বসতবাড়িতে আর পাকাপাকি ভাবে ফেরার সম্ভাবনা নেই কারও।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

আজকের আলোচনা সেই সব ‘বাসা’ নিয়ে, যেখানে ‘পাখিদের’ ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কলকাতা তো বটেই, জেলা শহর ও মফস্‌সলগুলোয় ঢুঁ মারুন। এমন বহু বাড়ি চোখে পড়বে, যেখানে ছেলে-মেয়েরা কাজ কিংবা বিয়ের সূত্রে ভিন্‌ দেশে বা অন্য রাজ্যে। আর বৃদ্ধ বাবা-মা বুকে আগলে রয়েছেন বসতবাড়ি। এ কথা জেনেও যে, সেখানে সন্তানের পাকাপোক্ত ভাবে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই। একই কথা প্রযোজ্য তাঁদের ক্ষেত্রেও, যাঁরা নিঃসন্তান বা বিয়ে-থা করেননি— মোটের উপর শেষ বয়সে একলা।

নিজের হাতে তিল তিল করে তৈরি বাড়ির উপর টান থাকবেই। বুকে বিঁধবে বিক্রির কথা ভাবতে। কিন্তু দেখবেন, তা যেন শেষ পর্যন্ত দাবিহীন সম্পত্তি হয়ে না দাঁড়ায়। বহু সম্পত্তির এমন পরিণতি এখন আনাচে-কানাচে। তাই সময় থাকতে ভাবুন, অফিস নিয়ে শশব্যস্ত ছেলে-মেয়ের হাতে যদি সময় না-থাকে, তবে আপনার জমি-জমা, ঘর-দোর, সম্পত্তি কাকে দিয়ে যাবেন, কী ভাবে?

উলট-পুরাণ

আগেকার সমাজে যখন যৌথ পরিবারের রমরমা ছিল, তখন সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বিবাদ হতো। তা কোর্ট-কাছারি পর্যন্ত গড়াত আকছার। এখন ব্যাপারটা হয় উল্টো।

ছোট্ট ছিমছাম সংসার। একটা কি দু’টো ছেলে-মেয়ে। সচ্ছল জীবনযাপন। সন্তানেরা অনেক সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বা পেশাদারি জীবনে আরও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমান। এবং অনেকেই পাকাপাকি সেখানে থেকেও যান। দেশে জমি-বাড়ি-সম্পত্তি আগলে বসে থাকেন বাবা-মা। এবং একটা সময় অনিবার্য ভাবে মাথা তোলে একটাই প্রশ্ন, কী হবে ওই সম্পত্তির ভবিষ্যৎ? শেষে কি পাঁচ ভূতে লুটেপুটে খাবে? এই দুশ্চিন্তা নিঃসন্তান দম্পতি বা অবিবাহিত ব্যক্তিদেরও। নষ্ট হওয়া, অপাত্রের হাতে যাওয়া বা জবরদখলের আশঙ্কা রুখতে এ ভাবে একলা আগলে রাখা সম্পত্তির ভবিষ্যৎ কী ভাবে নির্ধারণ করে যাওয়া যায়, চলুন দেখি।

কথা বলুন

প্রথমে ছেলে-মেয়েদের জিজ্ঞাসা করুন, সম্পত্তি নিতে তাঁরা আগ্রহী কি না। তাঁদের তা দেখাশোনা বা বিক্রিবাটার সময় আছে কি না। এমনকী আদৌ তাঁরা সম্পত্তি বিক্রির পক্ষপাতী কি না। আপনি যদি সম্পত্তি দান করতে চান, তা হলেও সন্তানের মত নিন। তার পরে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনজীবীর কাছে যান।

তবে যাঁরা বিয়ে করেননি বা নিঃসন্তান, তাঁদের মতামত নেওয়ার দায় তুলনায় কম থাকতে পারে।

এ বার সিদ্ধান্ত

কথা বলা সারা। এ বার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এগিয়ে যান। কোন পথে হাঁটবেন, ঠিক করবেন আপনি। আমরা শুধু রাস্তা দেখাব—

বিক্রি

জমি বা বাড়ি, সব থেকে আগে বিক্রির কথাই মাথায় আসে। এর সুবিধা, চটজলদি নগদ টাকা পাওয়া। এক দিকে, তা িদয়ে নিজেদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন খরচ চালানোর পুঁজি তৈরি হয়ে যায়। অন্য দিকে, বাকিটা তুলে দেওয়া যায় পরের প্রজন্মের হাতে। তবে প্রশ্ন হল, নিজের বাড়ি বেচে দিলে থাকবেন কোথায়? একটা আস্তানা জোগাড়ের ঝক্কিও তো কম নয়। আবার বহু ধুরন্ধর ক্রেতা বা প্রোমোটার কম দামে সম্পত্তি হাতানোর তালে থাকেন। ফলে বাড়ে বয়স্ক মানুষের হয়রানি। তাই বিক্রির আগে অন্যত্র থাকার জায়গা ঠিক করুন। সেই অনুযায়ী, বাদবাকি জীবন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ হিসেব করে টাকা-পয়সা সমেত সব বিষয় পরিষ্কার বুঝে নিন। দেখে নিন সঙ্গের সারণি।

অন্যত্র যদি থাকতেই হয়, তবে পছন্দের কোনও সুন্দর জায়গা বাছা যায়। এই রকম ব্যক্তি বা দম্পতিদের জন্য আজকাল স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসন প্রকল্পও গড়ে উঠছে, যেখানে মাসিক খরচ দিয়ে সব রকম পরিষেবা সহকারে বসবাসের সুবিধা মেলে।

ভাড়া

আবার এমনও হতে পারে, যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বেচলেন, আমৃত্যু সেখানেই থাকতে চাইলেন ভাড়াটিয়া হিসেবে। সে ক্ষেত্রে থাকার জায়গার চিন্তা করতে হবে না। মাসে মাসে টাকাও আসবে হাতে। তবে ভাড়াটিয়া হওয়ার অসুবিধা হল, তাতে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এবং আশঙ্কা থাকে, যে-কোনও সময়ে আচমকা উৎখাত হওয়ার।

তাই বিক্রির আগে সমস্ত শর্ত লিখিত-পড়িত করে নিন। যেমন, একলপ্তে নগদ পাওয়া, আমৃত্যু ভাড়া থাকা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মারা যাওয়ার পরে অন্য জনকে কোনও পরিস্থিতিতেই উৎখাত করতে না-পারা, ভাড়ার টাকা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা বাড়ার পরিমাণ ইত্যাদি। বিক্রির টাকা ব্যাঙ্কে জমিয়ে নমিনি করতে পারেন দূরে বাস করা সন্তান বা অন্য কাউকে। তবে গোটা বিষয়টিতে অত্যন্ত সতর্ক ভাবে পা ফেলতে হবে। দেখে নিন সঙ্গের সারণি।

রিভার্স মর্টগেজ

যাঁদের সম্পত্তি আছে ও শেষ জীবনে নিয়মিত আয় জরুরি, মূলত তাঁদের জন্য এটি। ব্যবস্থাটি এ রকম—

•• বিবাদহীন গৃহসম্পত্তির মূল্যায়ন করা হয় এবং তা মর্টগেজ করা হয় কোনও ব্যাঙ্ক বা গৃহঋণ সংস্থায়।

•• মূল্যায়নের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক সম্পত্তির মালিককে থোক টাকা ঋণ দেয় বা একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করে।

•• সম্পত্তির মালিকের মৃত্যু হলে ব্যাঙ্ক ওই সম্পত্তি বিক্রি করে সুদ-সহ নিজের ঋণ মেটায়। অতিরিক্ত কিছু থাকলে তা প্রদান করা হয় নমিনিকে।

•• সম্পত্তি বিক্রির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় মালিকের সন্তান ও নিকট আত্মীয়দের।

•• এর সুবিধা হল, বিক্রেতার আজীবন আয়ের ব্যবস্থা হয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তির একটি সদ্‌গতি হয়।

•• ভারতে মাত্র কয়েকটি ব্যাঙ্কে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রিভার্স মর্টগেজ ব্যবস্থা চালু আছে এখন।

উইল

ছেলে-মেয়ে না-নিতে চাইলে, উইল করে সম্পত্তি আত্মীয় বা অন্যান্য ভাল লাগার মানুষকে কিংবা শেষ বয়সে দেখাশোনা করেছেন, এমন কাউকে দেওয়া যায়। উইল রেজিস্টার্ড না-ও হতে পারে। তবে হলে আইনগত জোর বাড়ে। উইল বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব যাঁকে দেওয়া হবে (এগ্‌জিকিউটর), তিনি যেন উপযুক্ত, সক্ষম এবং নিরপেক্ষ মানুষ হন। তাঁর বয়স উইলকর্তার বয়সের তুলনায় কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

পারিবারিক ট্রাস্ট

পারিবারিক ট্রাস্ট গড়ে সম্পত্তি তাদের হাতে দেওয়া যায়। ট্রাস্টের দলিলে বলা থাকবে সম্পত্তির সুবিধা কারা কী ভাবে ভোগ করবেন। পরিবারের কারও দুর্দিন উপস্থিত হলে, সেই টাকা কাজে লাগানোর কথা বলা যেতে পারে। পরের প্রজন্ম বা আর্থিক ভাবে কমজোরি কারও জন্যও তা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া যায়। ট্রাস্ট পরিচালনা করবে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।

সামাজিক ট্রাস্ট

সম্পত্তি সমাজসেবার জন্য ব্যবহার করতে চাইলে সামাজিক ট্রাস্ট গড়া যায়। সেখানে বলতে হবে কোন কোন সামাজিক কাজে ব্যবহার হবে ট্রাস্টে হস্তান্তর করা ধন-সম্পত্তি। এটিও পরিচালনা করবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।

সরাসরি দান

সরাসরি দানপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি দেওয়া যায় সামাজিক সংগঠনকে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় কোন ধরনের কাজে তা ব্যবহার করা হবে। যেমন— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক এবং আর্থ-সামাজিক গবেষণা, ক্রীড়া উদ্যোগ, স্পোর্টস অ্যাকাডেমি পরিচালনা বা পরিবেশ উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদিতে। সম্পত্তি দান করা যেতে পারে কোনও ব্যক্তিকেও।

ব্যবসার গতি

পারিবারিক ব্যবসা থাকলে সমস্যা আরও গুরুতর। এ ক্ষেত্রে শুধু নিজের নয়, ভাবতে হবে কর্মীদের কথাও। উত্তরাধিকারহীন ব্যবসা এখন ব্যবসায়ী মহলে একটি বড় সমস্যা। যার সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে—

•• একমালিকি কারবারে ব্যবসা চালানোর মতো দ্বিতীয় কাউকে তৈরি করতে হবে। লাভ ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির ভাগ করতে আইনি কাগজ তৈরি করা যায়। ব্যবসা চালু রাখতে, উপযুক্ত দক্ষ কর্মীদের মালিকানার একাংশ দেওয়া যায়।

•• অংশীদারি ব্যবসায় বাকি অংশীদাররা কারবার চালিয়ে যেতে পারেন। মৃত অংশীদারের ভাগ পেয়ে যাবেন তাঁর উত্তরাধিকারী অথবা মনোনীত ব্যক্তি।

•• লিমিটেড সংস্থার ক্ষেত্রে পেশাদার বোর্ড তা চালাবে। আগেই তৈরি করা যেতে পারে সিইও, যিনি দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনা করবেন। এ সব সম্ভব না হলে, কোম্পানির মালিকানা বেচা যায় কোনও গোষ্ঠীকে, যারা ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে পারবেন। একই ক্ষেত্রে নিযুক্ত কোনও উপযুক্ত ব্যবসার সঙ্গে মেশানোও যেতে পারে।

দাবিহীন সম্পদ

বিভিন্ন ব্যাঙ্কে হাজার হাজার কোটি টাকার জমা পড়ে আছে, যার কোনও দাবিদার নেই। পাহাড় প্রমাণ দাবিহীন ডিভিডেন্ড পড়ে বহু কোম্পানির ঘরে। মোটা টাকার দাবিহীন লগ্নি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড তহবিলেও। ফলে কাউকে কিছু দেওয়ার থাকলে সময় থাকতেই দিয়ে দিন। নয়তো দান করুন সমাজ সেবায়।

দানের হদিস

সমাজসেবার তাগিদে অনেকেই ভাল কাজে অর্থ-সম্পত্তি দান করতে চান। কিন্তু সমস্যা হয় বিশ্বাসযোগ্য ভাল অ-সরকারি সংস্থা বা সংগঠন খুঁজে পেতে। যাদের সত্যিই টাকার দরকার। এ ধরনের সংস্থার হদিস দিতে কোনও সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই দেশে। তাই এই মুহূর্তে অ-সরকারি সংস্থার রেটিং করানোর প্রয়োজন তীব্র হয়ে উঠছে। যে সব মাপকাঠির বিচারে রেটিং হতে পারে, তা এই রকম—

•• সংশ্লিষ্ট সংস্থা কত বছর জনসেবায় নিয়োজিত। অতীত কেমন।

•• কাজের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা।

•• পরিচালন পর্ষদে কারা আছেন।

•• আয়ের সূত্র, ব্যয়ের বিশ্লেষণ।

•• হিসাব নিয়মিত পরীক্ষিত এবং সদস্যদের সভায় পেশ করা হয় কিনা।

•• সংস্থার কাজে সমাজ কতটা উপকৃত।

•• সংস্থা সরকারি আইন মোতাবেক নথিবদ্ধ কি না। সংশ্লিষ্ট দফতরে নিয়মিত রিটার্ন পেশ করা হয় কি না।

•• ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তার জন্য সম্ভাব্য খরচ ও তহবিল সংগ্রহের পথ।

•• সংস্থা সম্পর্কে মানুষের মতামত।

•• তাদের কাজের পরিধি, কোন ক্ষেত্রে জনসেবায় নিয়োজিত। আগের ৫-১০ বছরে কত জন উপকৃত হয়েছেন।

বিক্রির আগে

জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ির বিক্রির ব্যাপারে মনস্থির করলে গোড়াতেই কয়েকটি বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। এগুলি হল—

••
পেশাদার ভ্যালুয়ারের সাহায্যে সম্পত্তির মূল্যায়ন করে নেওয়া দরকার।

••
বিক্রির কথা বলার সময়ে অভিজ্ঞ আত্মীয় বা পড়শিকে সঙ্গে রাখা উচিত।

••
একলপ্তে বিক্রি করা ভাল। পুরোটাই নগদে নিতে হবে এবং তা বিক্রিপত্র সই করার সময়ে। টাকা নিতে হবে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার বা ড্রাফ্ট মারফত।

••
কোনও কাগজ, চুক্তিপত্র এবং দলিল সইয়ের আগে নিজের উকিলকে দিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

••
বুঝে নিতে হবে মূলধনী লাভকরের ব্যাপারটি।

••
আসল দলিল পুরো টাকা পাওয়ার আগে অন্যের হাতে দেওয়া ঠিক হবে না। ফোটোকপি দেওয়া যেতে পারে।

••
ক্রেতার আর্থিক ক্ষমতা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।

••
ক্রেতা প্রোমোটার হলে, তার ট্রেড লাইসেন্স, প্যান, আধার ইত্যাদির ফোটোকপি কোনও কাগজ সই করার আগেই সংগ্রহ করতে হবে।

••
প্রোমোটারের সুনাম এবং অতীত প্রকল্পগুলির খোঁজ নেওয়া জরুরি।

ভাড়া নিতে হলে

ভাড়া নেওয়ার আগে যে সব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, সেগুলি হল—

••
চুক্তিপত্রে ভাড়াটিয়া হিসেবে আমৃত্যু থাকার শর্ত স্পষ্ট লিখতে হবে।

••
লেখা থাকতে হবে, নিয়মিত ভাড়া দেওয়া হলে কখনওই ওই ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা হবে না।

••
চুক্তিপত্রটি রেজিস্ট্রি করা উচিত।

••
নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে ভাড়া কী অনুপাতে বাড়বে তা-ও লেখা থাকতে হবে।

••
চুক্তিপত্রটি নিজের উকিলকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

••
চাইলে ভাড়াটিয়া চুক্তি রদ করে বাড়ি ছাড়বেন, এই শর্তও থাকা উচিত।

••
বিক্রির টাকা দিয়ে অন্যান্য খরচ চালানোর পরে, আমৃত্যু ভাড়া গোনার ক্ষমতাটাও থাকছে কি না, সেটাও হিসেব করে দেখে নেওয়া জরুরি।

আগে করুন

••
নিজের যাবতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, লকার, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিয়োগ ইত্যাদির তথ্য লিখে রাখা।

••
সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ।

••
সম্পত্তির সদ্ব্যবহারের নানা পথের খোঁজ-খবর।

••
এ সংক্রান্ত আইনগুলি জানা।

••
এমন পথ বার করা, যাতে আমৃত্যু স্বচ্ছন্দে থাকা যায়, আবার সম্পত্তি কাজেও লাগে।

••
দানপত্রের মাধ্যমে ভাল কাজে দানের মানসিক প্রস্তুতি।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পাঠকের প্রশ্ন

প্রঃ বাবা ১৯৯৮ সালে মারা যান। আমরা তিন বোন বিবাহিতা। এক ভাই আছে। জমির দলিল এখনও বাবার নামে। দাদা বর্তমানে ওই বাড়িতে থাকে। বাড়ি খালি জমি-সহ আনুমানিক ১৬ কাঠার। শুধু বাড়ির অংশটিই ৭ কাঠা। দাদা গোটা বাড়ি চায়। আবার খালি জমি থেকেও চার ভাগের এক ভাগ চায়। বাবা বেঁচে থাকাকালীনই দাদা বাড়িটা ওকে লিখে দিতে প্রচুর চাপ দেয়। মানসিক অত্যাচার করে। কিন্তু বাবা লিখে দেননি। এখন প্রশ্ন হল:

১) হিন্দু উত্তরাধিকার আইন মতে মেয়েদেরও সমান অধিকার। এখানে জমি, বাড়ি-সহ পুরো সম্পত্তি সমান চার ভাগ হবে কি না?

২) সমান চার ভাগ হলে কোর্টের মাধ্যমে কী ভাবে হবে? আমরা বোনেরা কী ভাবে এগোব? প্রত্যেকেই প্রবীণ নাগরিক। আমরা ন্যায্য অধিকারটুকুই চাই।

৩) আদালতে গেলে আনুমানিক কী রকম সময় লাগবে?

৪) দাদার বক্তব্য, ‘যা হবে, কোর্টের মাধ্যমেই হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

১) হ্যাঁ, বর্তমান আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদেরও সমান অধিকার। যেহেতু আপনারা মোট চার ভাই-বোন (তিন বোন ও এক ভাই), তাই জমি-বাড়ি-সহ সম্পূর্ণ ১৬ কাঠা সম্পত্তিই সমান চার ভাগে ভাগ হবে। প্রকৃতপক্ষে বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই পুরো সম্পত্তিতে চার জনের উপরে সমান অধিকার জন্মেছিল। অর্থাৎ প্রত্যেকের ভাগে সম্পূর্ণ সম্পত্তির ১/৪ অংশ করে। এই মুহূর্তে আপনারা প্রত্যেকে অ-বিভক্ত, অ-চিহ্নিত ১/৪ অংশের মালিক।

২) আপনারা নিজেদের মধ্যে সম্পূর্ণ সম্পত্তিটি অর্থাৎ বাড়ি-সহ ১৬ কাঠা সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিতে পারেন। ভাগ-বাঁটোয়ারা দু’ভাবে সম্ভব। আপনারা নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসার মধ্য দিয়ে ভাগ-বণ্টন দলিলের মাধ্যমে ‘পার্টিশন ডিড’ বা ‘পার্টিশন দলিল’ করে নিতে পারেন। এই দলিলটি, আপনাদের জমিটি যে-জায়গায়, সেই এলাকার রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে, নির্দিষ্ট পরিমাণ স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক।

আবার আপনারা নির্দিষ্ট আদালতে গিয়ে কোনও একজন অন্য ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে অথবা বোনেরা ভাইয়ের বিরুদ্ধে নিজেদের নির্দিষ্ট অংশ দাবি করে, ‘পার্টিশন’ দাবি করতে পারেন।

অবশ্যই আপনারা আপনাদের ন্যায্য অধিকার পাবেন। মাননীয় আদালত নিশ্চয়ই বিচার-বিবেচনা করে আপনাদের অংশ আপনাদের পাইয়ে দেবেন।

৩) পার্টিশন দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে সময় বেশি লাগে না। মামলার মাধ্যমে নিষ্পত্তি চেয়ে কোর্টে এলে আজকাল সময় যাতে বেশি না-লাগে, তার জন্য বিচারক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। তবে আমরা বেশির ভাগ সময়েই দেখি, যিনি দখলে থাকেন, তিনি সব সময়েই ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলায় দেরি করতে বা ঝুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। মামলায় যাতে অহেতুক দেরি না-হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

যেহেতু আপনারা প্রবীণ নাগরিক, তাই বয়সের ব্যাপারটা মাননীয় বিচারকের নজরে আনলে, তিনি যাতে মামলায় অকারণ দেরি না হয়, সে জন্য ঘন ঘন তারিখ ফেলে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে যত্নবান হবেন।

৪) আপনার শেষ অংশের উত্তরে বলব, আপনার দাদা বলেছেন, ‘যা হওয়ার কোর্টে হবে’। এ তো খুবই ভাল কথা! মনে হচ্ছে, তাঁরও আইনেই আস্থা আছে। আপনারাও আইনেই আস্থা রাখুন। আপনি যা যা বলেছেন, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে কে শেষ হাসি হাসবেন বলা না-গেলেও, মাননীয় আদালত একেবারে নিরপেক্ষ বিচারই করবেন।

পরামর্শদাতা: আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

procedures Sell House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE