Advertisement
E-Paper

রাজ্যে স্টার্ট-আপের পথে বাধা মেধাসম্পদে টানও

মেধার কমতি নেই। কিন্তু টান উপযুক্ত মেধাসম্পদে! সঙ্গে দোসর ঝুঁকি এড়ানোর মানসিকতা। বেঙ্গালুরু দূর অস্ত্‌। এই জোড়া ঘাটতির কারণে সদ্য তৈরি (স্টার্ট-আপ) সংস্থার পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠার দৌড়ে হায়দরাবাদ, পুণে, গুড়গাঁও বা চেন্নাইয়ের সঙ্গেও এঁটে উঠতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬

মেধার কমতি নেই। কিন্তু টান উপযুক্ত মেধাসম্পদে! সঙ্গে দোসর ঝুঁকি এড়ানোর মানসিকতা। বেঙ্গালুরু দূর অস্ত্‌। এই জোড়া ঘাটতির কারণে সদ্য তৈরি (স্টার্ট-আপ) সংস্থার পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠার দৌড়ে হায়দরাবাদ, পুণে, গুড়গাঁও বা চেন্নাইয়ের সঙ্গেও এঁটে উঠতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গত তিন বছরে খানিকটা পাল্টেছে পরিস্থিতি। কমেছে পুঁজির সমস্যাও। কিন্তু মেধাসম্পদ ও মানসিকতায় খামতির ওই সাঁড়াশিই দেশের স্টার্ট-আপ বৃত্তে এখনও শামুক করে রেখেছে রাজ্যকে।

বৃহস্পতিবার কলকাতায় ‘স্টার্ট-আপ ইস্ট-২০১৬’ নামে আলেচনাসভার আয়োজন করেছিল সদ্যোজাত সংস্থায় লগ্নিকারীদের সংগঠন ক্যালকাটা এঞ্জেলস নেটওয়ার্ক (ক্যান)। সেখানে আইডিজি ভেঞ্চার্সের টি সি সুন্দরম বলেন, ‘‘বড় সংস্থায় কাজ ছে়ড়ে স্টার্ট-আপে যোগ দেওয়ার মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি এখানে। যথেষ্ট সংখ্যায় প্রযুক্তিগত ভাবে দক্ষ কর্মী পাওয়াও সমস্যা।’’ অথচ সবে ব্যবসা শুরু করা সংস্থাকে বড় করতে এই দু’টিই অত্যাবশ্যক শর্ত। তাই তাঁর কথায়, ‘‘স্টার্ট-আপ সংস্থা বড় হতে শুরু করলে এই সব সমস্যা বৃদ্ধির পথ আটকে দেয়।’’

সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের মতে, এ রাজ্যে মেধাবী পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। বরং মেধার প্রাচুর্য লগ্নি টানার ক্ষেত্রে এখানকার অন্যতম বিজ্ঞাপন। কিন্তু সদ্য তৈরি সংস্থায় (বিশেষত প্রযুক্তি বা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর স্টার্ট-আপে) অনেক সময়ে বিশেষ কাজে বা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ কর্মী লাগে। সেই জোগান এ রাজ্যে তুলনায় কম বলেই তাঁদের ধারণা।

দুই স্টার্ট-আপ সংস্থা, টি-বক্স এবং টুকিটাকির কর্তৃপক্ষের মতে, কিছুটা এই বাধার কারণেই কলকাতা ছেড়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, যে ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে সংখ্যায় বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ বা দিল্লিতে রয়েছে, তা কলকাতায় নেই। সেই কারণে টান পড়ছে উপযুক্ত কর্মীর সরবরাহে। ভিন্‌ রাজ্য থেকে কর্মী টানার খরচ সদ্য তৈরি সংস্থার পক্ষে সব সময় বহন করা সম্ভব নয়। তাই স্থানীয় কর্মীর ঘাটতি এ ক্ষেত্রে আরও বড় সমস্যা।

সদ্য তৈরি সংস্থাগুলির মতে, কোথাও একটি শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ (ইকোসিস্টেম) তৈরি হলে, তার কাঁচামাল থেকে শুরু করে উপযুক্ত মানবসম্পদ— প্রায় সব কিছুই একসঙ্গে পাওয়া সহজ হয়। যে কারণে গাড়ি শিল্পের হাব গড়ে ওঠে। এক জায়গায় ভিড় করে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। স্টার্ট-আপও এর ব্যতিক্রম নয়। আগে থেকে তৈরি উপযুক্ত পরিবেশ তাদের বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক।

যেমন, মানসিকতা। এক সদ্য তৈরি সংস্থার কর্তা বলছিলেন, বেঙ্গালুরুতে বড় সংস্থার চাকরি ছেড়ে স্টার্ট-আপে যোগ দিতে পিছপা হন না অনেকে। মনের মতো কাজ করা বা অংশীদারি পাওয়ার সূত্রে পরে আর্থিক ভাবে অনেক বেশি লাভবান হওয়ার হাতছানি এ ক্ষেত্রে কাজ করে ঠিকই। কিন্তু তেমনই মাথায় থাকে স্টার্ট-আপ মুখ থুবড়ে পড়লেও অন্য কোনও সংস্থায় কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা। তাঁরা জানেন, ‘ক’ সংস্থার দরজা কাল বন্ধ হলেও অন্তত ‘খ’ ও ‘গ’ সংস্থার দরজা খোলা থাকবে। এ রাজ্যে সেই সুযোগ কম। ফলে স্টার্ট আপে যোগ দিতে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতাও কম। কর্মী পাওয়ার পথে যা মস্ত বাধা।

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুকিটাকি-র অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, টি বক্স-এর কৌশল দুগর, কেটো-র কুণাল কপূর, গ্রোফার্স-এর অশনীর গ্রোভার, হাউজিং ডট কমের মণি রঙ্গরাজন, মাইক্রোসফটের রবি নারায়ণ, ক্যান-এর প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ পাঁসারি প্রমুখ। তাঁদের অনেকের মতে, পরামর্শ দেওয়ার মতো বিশেষজ্ঞও স্টার্ট-আপের জন্য প্রয়োজন। যা বেঙ্গালুরুতে পাওয়া সহজ। আইডিয়াস্প্রিং ক্যাপিটালের নাগানন্দ দোরাস্বামীর কথায়, ‘‘সদ্য তৈরি সংস্থায় পরামর্শদাতার ভূমিকা বড় হয়ে ওঠে।’’

ভারতে যত প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট-আপ তৈরি হয়, তার প্রায় ৪০ শতাংশের শিকড় বেঙ্গালুরুতে। দিল্লিতে ২০%, পুণে-মুম্বইয়ে ১৫%। সেখানে কলকাতা-সহ পূর্বাঞ্চলে মাত্র ১০%। গত দশ বছরে এ দেশে ৩,০০০ সদ্যোজাত সংস্থায় লগ্নি এসেছে ৩০০ কোটি ডলার। যার ৯০% এসেছে বিদেশি উদ্যোগ পুঁজি (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল) সংস্থার তহবিল থেকে। অথচ এ রাজ্যে এসেছে তার ছিটেফোঁটা। কিন্তু ন্যাসকম ও ক্যানের দাবি, এই ছবি বদলাচ্ছে। স্টার্ট-আপে টাকা ঢালতে পিছপা হচ্ছেন না স্থানীয় শিল্পপতিরা। পাঁসারির দাবি, গত অর্থবর্ষে ৮টি স্টার্ট-আপে পুঁজি ঢেলেছেন তাঁরা।

সমস্যা সমাধানে পা বাড়াচ্ছে রাজ্যও। সরকারি সূত্রে খবর, জেলা স্তর থেকে স্টার্ট-আপ তুলে আনতে রাজ্যজুড়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন হবে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকা সংস্থাকে ব্যবসা শুরুর অর্থ জোগাবে রাজ্য। কিন্তু এ সব কিছু সত্ত্বেও গলায় বিঁধে থাকছে মেধাসম্পদ ও মানসিকতার কাঁটা।

Start-ups
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy