Advertisement
E-Paper

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ধাক্কা আপাতত সামলেছে সূচক

পুজোর মুখে জোড়া ঝটকা। প্রথমটি সম্ভবত সাময়িক। পরেরটি হয়তো ভোগাবে একটু বড় মেয়াদে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারের জঙ্গি ঘাঁটির পাশাপাশি আঘাত হেনেছে এপারের বাজারেও।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৯

পুজোর মুখে জোড়া ঝটকা।

প্রথমটি সম্ভবত সাময়িক। পরেরটি হয়তো ভোগাবে একটু বড় মেয়াদে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারের জঙ্গি ঘাঁটির পাশাপাশি আঘাত হেনেছে এপারের বাজারেও। এই ধরনের আকস্মিক ঘটনা আতঙ্ক ছড়ায় অতি দ্রুত। সাধারণ ভাবে ভয় থাকে, পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে মোড় নেয় কি না, তা নিয়ে। প্রথম ধাক্কায় সূচক হুড়মুড়িয়ে পড়লেও পরের কয়েক দিনে তেমন কোনও উত্তেজক ঘটনা না-ঘটায় খানিকটা সামলে নিয়েছে নিফ্‌টি ও সেনসেক্স। আতঙ্ক অবশ্য পুরোপুরি কাটেনি। বাজারের এখন নজর থাকবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার উপর।

দ্বিতীয় ধাক্কাটি মৃদু হলেও তা কিন্তু মেয়াদি হতে পারে। পুজোর ঠিক আগেই সুদ কমানো হয়েছে ডাকঘরের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে। ১০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাই করা হলেও এটা কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমরা আরও কম সুদের জমানায় প্রবেশ করতে চলেছি। সুদ নির্ভর অসংখ্য অবসরপ্রাপ্ত মানুষ এবং প্রবীণদের জন্য এটি অবশ্যই একটি দুঃসংবাদ।

প্রসঙ্গত, নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর বাজার অনুযায়ী সুদের হারে হেরফের করার সুযোগ রয়েছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে। গৃহঋণ সংস্থাগুলিও সম্প্রতি এক দফা সুদ কমিয়েছে। সুদ কমানো হয়েছে ২৫ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। একটু বেশি সুদের আশায় অনেকেই এই ধরনের সংস্থার আমানত প্রকল্পে টাকা রাখেন। এখানেও সুদ কমায় আঘাত পৌঁছবে এই শ্রেণির বহু মানুষের ঘরে।

পরিস্থিতি যে-দিকে এগোচ্ছে, তাতে পুজোর আগেই আগামী ৪ অক্টোবর ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া সুদ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে না, সেটা আর জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। সুদ কমানো হলে তা শেয়ার বাজারের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিলেও সুদ নির্ভর মানুষের কাছে তা কিন্তু আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারে

শীর্ষ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর উর্জিত পটেল তাঁর প্রথম ঋণনীতিতে কোন দিকে পা ফেলেন, তা দেখার জন্য গোটা অর্থনৈতিক দুনিয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এ বার অবশ্য গভর্নর একা নন। সুদের হার নির্ধারণ করবে একটি বিশেষ প্যানেল, যাতে থাকছেন কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত তিন জন সদস্য। বাকি তিন সদস্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। মতামত সমান সমান হলে গভর্নর দিতে পারেন একটি অতিরিক্ত (কাস্টিং) ভোট। তবে তাঁর কোনও ভেটো দেওয়ার অধিকার থাকবে না।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে নিরন্তর। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এই ঘটনার প্রভাব হয়তো খুব বেশি দিন বাজারের উপর থাকবে না। সংসদে জঙ্গি হানা এবং মুম্বই বিস্ফোরণের মতো বড় ঘটনার প্রভাবও খুব বেশি দিন থাকেনি শেয়ার বাজারের উপর। ১৯৯৮ সালের ১১ থেকে ১৩ মে ভারত পোখরানে পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোয় ওই তিন দিনে বাজার পড়েছিল ৭ শতাংশ। পরের ৩ দিনে কিন্তু বাজার ওঠে ৫ শতাংশ। কার্গিল যুদ্ধের সময়ে বাজার তো দমে যায়ইনি, বরং উঠেছিল আশ্চর্যজনক ভাবে। যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৯৯ সালের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত। ওই সময়ে সেনসেক্স বেড়েছিল ৩৮ শতাংশ।

পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত থাকলে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির খুব বড় প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর থাকে না। বরং এই রকম পরিস্থিতি কয়েক দিনের জন্য সুযোগ করে দেয় অপেক্ষাকৃত কম দামে ভাল শেয়ার কেনার। বুধবার সফল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরদিন আতঙ্কিত বাজারে সেনসেক্স পড়েছিল ১.৬৪ শতাংশ। সূচক কিছুটা নামে তার পরের দিনও, কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে শুক্রবার থেকেই। সীমান্তে আর কোনও ঘটনা না-ঘটলে বাজারের নজর অতি দ্রুত ঘুরবে আরবিআইয়ের ঋণনীতি, আর্থিক ফলাফল, ভাল বর্ষার নিরিখে পণ্যমূল্য কমে কি না ইত্যাদি ঘটনার দিকে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করার মতো কোনও পরিস্থিতি নতুন করে তৈরি হয়নি।

কালো টাকা উদ্ধারে বেশ ভাল সাফল্য পেয়েছে সরকারের স্বেচ্ছা আয় ঘোষণা প্রকল্প। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা খোলা ছিল। ৬৪ হাজারের বেশি করদাতা ঘোষণা করেছেন ৬৫,২৫০ কোটি টাকার অঘোষিত আয়। এই ঘোষণা বাবদ সরকারের কোষাগারে জমা পড়বে ওই অঙ্কের ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ কম-বেশি ২৯,৩৬২ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির এই রকম সাফল্য এক দিকে যেমন মোদী-জেটলির হাত শক্ত করবে, অন্য দিকে তেমন মজবুত হবে সরকারি কোষাগার। তবে কালো টাকা নিয়ে যাঁরা গবেষণা করে‌ন, তাঁদের কারও কারও মতে, যে-পরিমাণ লুকনো টাকার হদিস মিলেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১২ সালে অঘোষিত আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। যা-ই হোক, অর্থনৈতিক ‘স্বচ্ছ ভারত’ গড়ার দিকে এটি যে একটি বড় পদক্ষেপ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শেয়ার বাজারকেও শক্তি জোগাবে প্রকল্পটির সাফল্য।

নয়া বিমা পলিসি। সংস্থার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ একটি বিমা পলিসি বাজারে ছাড়ল ভারতীয় জীবনবিমা নিগম। ‘বিমা ডায়মন্ড’ নামের ওই পলিসিতে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে। এলআইসি-র পূর্বাঞ্চলের জোনাল ম্যানেজার কে এল নগনিয়ালের দাবি, ‘‘এই ধরনের পলিসি এর আগে জীবনবিমা নিগম ছাড়েনি।’’ তিনি জানান, আগামী এক বছরে এক কোটি ডায়মন্ড বিমা পলিসি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা তাঁরা ঠিক করেছেন।

SENSEX surgical attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy