Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৪
তোপ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টারই

ডলারে ধার নেশা, গুনতে হবে দামও

রথীনের যুক্তি, বিদেশ থেকে ডলারে ঋণে অনুশাসন থাকে না। এ হল কার্যত নেশার মতো। অল্প দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু তারপরে আর ছাড়া যায় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০৫:৫৬
Share: Save:

বাজেটে মোদী সরকারের বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে তোপ দাগলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায়। তাঁর মতে, যত বড় জনমতই থাকুক, কোনও আলোচনা ছাড়া এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কেন্দ্র। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি, প্রথমে অল্প ধার নেওয়া দিয়ে শুরু হলেও আখেরে বাড়তে থাকে তার নেশা। চোকাতে হয় তার মূল্যও। এই ধার নিয়েও শেষমেশ তার চড়া মূল্য চোকাতে হয়নি, ইতিহাসে তেমন উদাহরণ প্রায় নেই বলেই তাঁর দাবি।

রথীনের যুক্তি, বিদেশ থেকে ডলারে ঋণে অনুশাসন থাকে না। এ হল কার্যত নেশার মতো। অল্প দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু তারপরে আর ছাড়া যায় না। সোমবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন দেশ দেখান, যারা বিশ্বযুদ্ধের পরে বিদেশি মুদ্রায় সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ডে ঋণ নিয়েছে অথচ তার মূল্য চোকায়নি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া— সবাই তা চুকিয়েছে।’’

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে আরএসএসের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তার যুগ্ম আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কম সুদ মেটানোর আশায় ডলারে ধার করতে গিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মতো ঋণের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে। রঘুরাম রাজন, ওয়াই ভি রেড্ডি, সি রঙ্গরাজনের মতো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নররাও এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এনআইপিএফপি-র ডিরেক্টর রথীন রায় বলেন, ‘‘আর্থিক সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ আছে।... স্বাধীনতার আগে বাজিরাও পেশোয়া, শাহ আলমের মতো শাসকরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে এমন ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁদের সাম্রাজ্য হারাতে হয়।’’ তাঁর আর্জি, রাজকীয় ঘোষণার বদলে এ বিষয়ে বরং সকলের সঙ্গে আলোচনা হোক।

অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বলেছেন, এ বছর মোট ঋণের ১০-১৫% বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়া হবে। রথীনের প্রশ্ন, কেন টাকার বন্ডে ধার নেওয়া হচ্ছে না? বিশেষত দেশে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট যখন নেই। সরকার দেশের মানুষের থেকে ধার নিলে সার্বভৌমত্বে সমস্যা হয় না।

রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে এবং ঋণে সুদের বোঝা কমাতে কেন্দ্র মরিয়া হয়ে এই পথ নিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রথীন। তাঁর যুক্তি, গত অর্থবর্ষে রাজস্ব যে ভাবে কমেছে, তাতে রাজস্ব দফতরের সামনে জিডিপি-র ১% কর আদায় বাড়ানোর লক্ষ্য তৈরি হয়েছে। বাজেটে ঘোষণা অনুযায়ী কর আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে কেন্দ্রকে হয় বেশি ধার করতে হবে নয়তো খরচ কমাতে হবে। দু’দিক থেকেই অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগতে পারে। ফলে দেশ ‘নিঃশব্দ রাজকোষ সঙ্কট’-এ পড়ছে বলে রথীনের আশঙ্কা। রাজকোষের হাল নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি তুলেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE