Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাড়ি বসেই ব্যবসায় বাজিমাত ‘রিসেলারদের’

ভারতে প্রায় ২০ লক্ষ ব্যবসায়ী এই ধরনের ব্যবসা করে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আয় করছেন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক পরামর্শদাতা সংস্থার সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই ই-কমার্সের ৫.৪ শতাংশ বাজার এই ধরনের ব্যবসায়ীদের দখলে।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

নিবেদিতা দাস। এই শহরেরই বাসিন্দা। বাড়িতে বসেই রোজগার করেন মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

রূপা গোস্বামীও থাকেন কলকাতায়। আগে চাকরি করতেন একটি বেসরকারি স্কুলে। সন্তানের জন্মের পরে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বাড়ি বসেই তাঁর মাসিক রোজগার প্রায় ৪০ হাজার টাকা ছুঁয়েছে।

মুনমুন রায়। থাকেন বেঙ্গালুরুতে। স্বামী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। বেশ কিছু বছর চাকরি সূত্রে বিদেশে ছিলেন মুনমুন। দেশে ফেরার পর আর নতুন করে চাকরির সন্ধান করে উঠতে পারেননি। এখন কিন্তু ঘরে বসেই তিনি বেশ মোটা টাকা রোজগার করেন।

নিবেদিতা, রূপা, মুনমুন সকলেই ‘রিসেলার’। অর্থাৎ প্রস্তুতকারীর থেকে জিনিস নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করেন। এর জন্য নেই কোনও দোকান। সবটাই হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

ভারতে প্রায় ২০ লক্ষ ব্যবসায়ী এই ধরনের ব্যবসা করে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আয় করছেন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক পরামর্শদাতা সংস্থার সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই ই-কমার্সের ৫.৪ শতাংশ বাজার এই ধরনের ব্যবসায়ীদের দখলে। তাঁদের সংখ্যা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই ব্যবসায়ীদের ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মূলত পোশাক বিক্রি করেন। পোশাকের মধ্যে আবার শাড়ির বিক্রিই সব থেকে বেশি। তা ছাড়াও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে নকল গয়না, ব্যাগ, জুতো, ঘর সাজানোর জিনিসও।

নিবেদিতা জানালেন, ফুলিয়া এবং ধনেখালির তাঁতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁর ব্যবসা চলে। তাঁতিরা শাড়ির ছবি তুলে পাঠান। ক্রেতাদের নিয়ে নিবেদিতার হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে ছবি দেখালে যে ক্রেতার সেই শাড়ি পছন্দ হয়, তাঁতিকে তাঁর ঠিকানা দিয়ে দেন নিবেদিতা। ক্রেতা অনলাইনে টাকা পাঠান নিবেদিতাকে। এর পরে তাঁতি সরাসরি শাড়ি পাঠিয়ে দেন ক্রেতাকে। প্রস্তুতকারীরা কখনও নিবেদিতার থেকে টাকা নিয়ে যান, আবার কখনও সরাসরি
তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন নিবেদিতা। তাঁতির থেকে শাড়ি এনে নিজের কাছেও রাখেন না নিবেদিতা। তিনি বলেন, ‘‘খুব ছোট ফ্ল্যাট আমার। জিনিস এনে রাখার জায়গা নেই।’’ শুধু তাঁতির থেকেই যে নিবেদিতা সরাসরি শাড়ি নেন তা নয়। বিভিন্ন বুটিক এবং অনলাইন স্টোর থেকেও ক্রেতাদের পাঠান। তাঁর ক্রেতারা ছড়িয়ে রয়েছেন সারা ভারতে। প্রথমে ফেসবুকের বিভিন্ন ফ্যাশন গ্রুপ থেকেই অনেক ক্রেতার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। এর পরে তাঁদের নিয়ে তৈরি করেন হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ।

আর এক ‘রিসেলার’ রূপা জানালেন শুধুই শাড়ি নয়, সালোয়ার কামিজ, নকল গয়নাও তিনি বিক্রি করেন। শাড়ির জন্য তাঁর ভরসা ফুলিয়ার তাঁতিরা। আর গয়না, সালোয়ার কামিজের জন্য যোগাযোগ রাখেন জয়পুরের প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে। রূপা বলেন, ‘‘চাকরি ছাড়ার পরে মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। এই ব্যবসা শুরু করার পরে আমি আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।’ প্রস্তুতকারী আর ক্রেতার মাঝখানে থেকে তাঁর বেশ ভাল পরিমাণ লাভ থাকে বলে জানালেন রূপা। কোনও কোনও মাসে তিনি ৫০ থেকে ৬০টি শাড়িও বিক্রি করেছেন বলে জানালেন তিনি।

মুনমুন জানালেন, বাংলার তাঁত, লিনেন, জামদানি, কাঁথা কাজের শাড়ি, বেগমপুরী, গামছার বাংলার বাইরে খুবই কদর রয়েছে। প্রস্তুতকারীদের থেকে নিয়ে তিনি ফেসবুক এবং হোয়াট্‌সঅ্যাপের মাধ্যমে তা বিক্রি করেন। তবে হোয়াট্‌সঅ্যাপ বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন মুনমুন। তিনি বলেন, ‘‘বিক্রেতার ফোন নম্বরটা থাকে। তাই ভুয়ো হওয়ার ভয় কম থাকে।’’

শুধুই ভারতে থেকে নয়, বিদেশে থাকেন এমন অনেকেও এই ব্যবসা করছেন। মুনমুন জানান, তাঁর পরিচিত এক মহিলা থাকেন হংকংয়ে। প্রস্তুতকারীদের থেকে শাড়ি, সালোয়ার কামিজের ছবি হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে তিনি ক্রেতাদের দেখান। কারও পছন্দ হলে প্রস্ততকারীকে ক্রেতার ঠিকানায় ওই জিনিস পাঠিয়ে দিতে বলেন। প্রস্তুতকারী এবং ক্রেতার সঙ্গে ওই ‘রিসেলারের’ টাকার লেনদেন চলে তাঁর ভারতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

হাতিয়ার মূলত স্মার্টফোন। আর তা সম্বল করেই বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থার পাশাপাশি দেশ জুড়ে ব্যবসার ডালপালা বিস্তার করেছেন এই গৃহবধূরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Income Women Resell রিসেলার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE