Advertisement
১০ মে ২০২৪

পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে লগ্নিকারীকে

ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট পেশ এবং তার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’দফায় সুদ কমানোয় বিনিয়োগের বাজারে ভিতরে ভিতরে ঘটে গিয়েছে এক বড় পরিবর্তন। শুধু দেশেই নয়, পরিবর্তন ঘটেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট পেশ এবং তার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’দফায় সুদ কমানোয় বিনিয়োগের বাজারে ভিতরে ভিতরে ঘটে গিয়েছে এক বড় পরিবর্তন। শুধু দেশেই নয়, পরিবর্তন ঘটেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও। এই সবেরই কম-বেশি প্রভাব পড়েছে সুদের হার, শেয়ার বাজার, সোনার দাম, ডলারের বিনিময়মূল্য, বাড়ি-গাড়ির চাহিদা ইত্যাদির উপর।

২০১৪-’১৫ সালের কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বার হতে শুরু করেছে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল। বর্ষা এ বার কম হতে পারে এই আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। গ্রিসকে কেন্দ্র করে যে-সঙ্কট দানা বেধেছিল, তা অনেকটা কমে আসায় স্বস্তি ফিরেছে গোটা দুনিয়ায়। দেশে-বিদেশে এত কিছু ঘটনার প্রভাব বিনিয়োগের বাজারের উপর কেমন হল এবং তার সঙ্গে লগ্নিকারীরা কী ভাবে মানিয়ে নেবেন, তা নিয়েই চলবে আজকের আলোচনা।

সুদ নেমে আসা: দাম কমলে সুদ কমার প্রবণতা দেখা দেয়। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে তলিয়ে গেলেও খুচরো পণ্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। পরিস্থিতির বিচারে এবং সরকারি চাপের সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা করে দু’দফায় রেপো রেট কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর ফলে জমার উপর কম-বেশি সুদ কমিয়েছে প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। একটু বড় মেয়াদে সুদের হার নেমে এসেছে ৮.৫০ শতাংশের আশেপাশে। প্রবীণ নাগরিকেরা পাচ্ছেন মেরেকেটে ৯ শতাংশ। এর ফলে চড়া বাজারে যথেষ্ট চাপের মধ্যে পড়েছেন সুদ-নির্ভর অসংখ্য সাধারণ মানুষ। সুদ আরও কমানোর চাপ বাড়ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর। কিন্তু খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার না-কমা সত্ত্বেও সুদ যদি আরও কমে, তবে দুর্দশা বাড়বে সন্দেহ নেই। ব্যাঙ্কের বাইরে অপেক্ষাকৃত বেশি সুদে সুরক্ষিত বিকল্প লগ্নির জায়গাও তেমন দেখা যাচ্ছে না। সুদ-নির্ভর মানুষের জন্য সময়টা তাই আদৌ ভাল নয়।

বন্ডের দুনিয়া: সুদ কমলে বাজারে বন্ডের দাম বাড়ে। সেটা কিন্তু এ বার তেমন হয়নি। বিদেশি লগ্নিকারীরা হঠাৎ বন্ড বিক্রি শুরু করায় সুদ পড়ার সময়েও বন্ড বাজারকে চড়তে দেখা যায়নি। অন্য দিকে বন্ডের নতুন ইস্যুতে সুদের হারে অনেকটাই পতন ঘটছে। কিছু দিনের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে নতুন করমুক্ত বন্ড। যা আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তার থেকে মনে হচ্ছে, ২০১৩-’১৪ সালে ইস্যু করা ওই বন্ডের তুলনায় এ বারের করমুক্ত বন্ডে সুদ পাওয়া যাবে প্রায় ১.৫০ শতাংশ কম। অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সুদ যদি ৭.২৫ শতাংশের আশেপাশে হয়, তবুও তা ৩০ শতাংশ আয়করের আওতায় পড়েন, এমন মানুষের কাছে আকর্ষণীয় লগ্নির জায়গা হিসেবে দেখা দেবে।

শেয়ার বাজার: ৩০ হাজার স্পর্শ করে সেনসেক্স অনেকটাই নেমে এসেছিল পরের কয়েক মাসে। সম্প্রতি সূচক আবার ছাড়িয়েছে ২৮ হাজারের মাত্রা। মাস কয়েক আগে মুম্বই বাজারে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দর স্পর্শ করেছিল ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। তা গত সপ্তাহে ছাড়িয়েছে ১০৫ লক্ষ কোটি টাকা। বাজার বেশ খানিকটা শক্তি ফিরে পাওয়ায় ন্যাভ বেড়েছে বেশির ভাগ ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পের। কম বৃষ্টির আশঙ্কা থেকে বাজার এখন অনেকটাই মুক্ত। সুদ কিছুটা হলেও কমেছে। আরও এক দফা কমলে সূচকের পরবর্তী দফার উত্তরণ দেখা যাবে। গত ৭-১০ দিনে মিড ক্যাপ শেয়ারগুলি বেশ ভাল ফল করেছে। চিনের শেয়ার সূচকে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য পতন হওয়ায় অনেকে মনে করছেন, এর প্রভাবে ভারতে বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ বাড়বে। অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বাড়ানো হলে কিছু লগ্নি বেরিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকবে। সব দিক থেকে দেখলে বাজারে এখন কিছুটা স্থিরতা এসেছে। এটাকে ধরে রাখাই এখন বড় কাজ। দেশের অর্থনীতি এবং বিশ্ব বাজার আগামী দিনে কিছুটা অনুকূলে থাকলে সেনসেক্স এই বছরের শেষ দিকে আবার ৩০,০০০ স্পর্শ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সোনা: অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা কমায় একনাগাড়ে পড়ে চলেছে সোনার দাম। মেয়েদের কাছে এটি একটি সুখবর হলেও যাঁরা এই হলুদ ধাতুটিতে লগ্নি করে বসে আছেন, তাঁরা একটুও খুশি নন। হলমার্ক সোনার দাম গত শুক্রবার নেমে এসেছে ২৫,২৩৫ টাকায়। আগের তুলনায় অনেকটাই ক্রেতার নাগালের মধ্যে। তবে লগ্নির দৃষ্টিকোণ থেকে সোনা আর আগের মতো প্রাধান্য পাচ্ছে না।

ডলার: রফতানি একনাগাড়ে কমতে থাকায় ডলারের দাম এখন বেশ চড়া। শুক্রবার শেষ বেলায় প্রতি ডলারের দর উঠেছে ৬৪.০৮ টাকা। মার্কিন মুলুকে যদি সুদ বাড়ে এবং কিছু লগ্নি প্রস্থান করে, তা হলে ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে। তবে অশোধিত তেলের দাম বেশ নীচের দিকে থাকায় তা ভারতের মতো দেশের কাছে বড় স্বস্তির কারণ। সেপ্টেম্বর নাগাদ মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

বাড়ি/ফ্ল্যাট: গৃহঋণে সুদ কমে গত কয়েক মাসে নেমে এসেছে বছরে ৯.৭০ থেকে ৯.৮৫ শতাংশে। তা সত্ত্বেও ফ্ল্যাটের চাহিদায় তেমন উত্থান দেখা যায়নি। অন্য দিকে জোগান বেড়েই চলেছে। রোজই আসছে নিত্যনতুন প্রকল্প। রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট, যা লগ্নি হিসেবে কিনে রাখা হয়েছে পরে বিক্রি করা হবে বলে। ফলে খুব নামী এবং সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত না-হলে সম্পত্তির দাম আশু বাড়ার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে লগ্নি করতে হবে বেশ বাছবিচার করে। কিনতে হবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় কোনও জায়গায়। তা না-হলে ঋণের মাসিক কিস্তি বা ই এম আই-এর টাকা মেটানো বড় দায় হয়ে উঠতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investors Tips chit fund money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE